২৫শে নভেম্বর, ২০২৪ ইং | ১০ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ | রাত ৩:০৫

নিয়োগে আইন মানছে না বিমা কোম্পানিগুলো

দেশে বিদ্যমান বিমা আইনের ব্যত্যয় ঘটিয়ে বিভিন্ন বিমা কোম্পানি মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) বা ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) পদে নিয়োগ দিচ্ছে।

এসব নিয়োগকে বিমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ (আইডিআরএ) বিমা আইনের বিধান অনুযায়ী গুরুতর অপরাধ হিসেবে অভিহিত করেছে।

সম্প্রতি বিষয়টি নিয়ে আইডিআরএ সংশ্লিষ্ট জীবন বিমা ও সাধারণ বিমা কর্তৃপক্ষকে হুঁশিয়ারি করে দিয়েছে। বিমা কোম্পানিগুলোকে এক চিঠি পাঠিয়ে অবিলম্বে এই অনিয়ম পরিত্যাগ করতে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। অন্যথায় সংশ্লিষ্ট বিমা কোম্পানিগুলোর বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে।

সূত্র জানায়, আইডিআরএ’র পক্ষ থেকে সম্প্রতি বিভিন্ন বিমা কোম্পানির চেয়ারম্যান, সিইও ও কোম্পানি সচিবের কাছে এ সম্পর্কিত একটি চিঠি পাঠানো হয়েছে।

চিঠিতে উল্লেখ করা হয়,‘লক্ষ্য করা যাচ্ছে যে, অনেক বিমা কোম্পানি তাদের মূখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা নিয়োগ প্রদানের ক্ষেত্রে বিমা আইন, ২০১০ এর ধারা-৮০ ও বিমা কোম্পানি (মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা নিয়োগ ও অপসারণ) প্রবিধানমালা, ২০১২ এর বিধান এবং কর্তৃপক্ষ কর্তৃক ইস্যুকৃত সার্কুলার নং জিএডি-১৩/২০১৫ এ প্রদত্ত নির্দেশনা যথাযথভাবে পরিপালন না করে লঙ্ঘন করছে, যা বিমা মা আইনের বিধান অনুযায়ী গুরুতর অপরাধ।’

উল্লেখ্য, বিমা আইনের ৮০ ধারা এবং বিমা কোম্পানি (মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা নিয়োগ ও অপসারণ) প্রবিধানমালার প্রবিধি-৪ এর উপ-প্রবিধি (৫) মোতাবেক পরিচালনা পর্ষদের কোনো প্রস্তাবিত ব্যক্তির নিয়োগ প্রস্তাব বা চুক্তির মেয়াদ শেষ হওয়ার পর নিয়োগ নবায়ন প্রস্তাব কর্তৃপক্ষ কর্তৃক অনুমোদন না হওয়া পর্যন্ত তিনি ভারপ্রাপ্ত মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা হিসেবে নিয়মিত দায়িত্ব পালন করে বেতন ভাতাদিসহ অন্যান্য সুযোগ সুবিধা গ্রহণ করতে পারেন না।

আইডিআরএ বলছে, ‘কিন্তু মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তার চুক্তির মেয়াদ শেষ হওয়ার পরও তাকে পরিচালনা পর্ষদ থেকে ভারপ্রাপ্ত মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা পদে নিয়মিত দায়িত্ব পালনের সুযোগ প্রদানের কারণে তিনি কোম্পানি থেকে যথারীতি বেতন ও ভাতাদিসহ অন্যান্য সুবিধা গ্রহণ করছেন। যা অবৈধ ও আইনের লঙ্ঘন এবং মানিলন্ডারিং প্রতিরোধ আইন, ২০১২ এর বিধানের পরিপন্থী।’ কারণ বিমা আইনের বিধান অনুযায়ী মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তার নিয়োগ চুক্তির মেয়াদ শেষ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে  আইনগতভাবে পুনরায় চুক্তি না হওয়া পর্যন্ত উক্ত পদে দায়িত্ব পালনের কোনো সুযোগ থাকে না। ’

চিঠিতে আরো বলা হয়েছে, আইডিআরএ ২০১৫ জারি করা এক সার্কুলার অনুযায়ী বিমা কেম্পানির সিইও’র চুক্তির মেয়াদ শেষ হওয়া বা চুক্তি বাতিলপূর্বক পদত্যাগ করা বা কোম্পানি কর্তৃক অপসারণ হওয়ার কারণে পদ শূণ্য হলে পরিচালনা পর্ষদ কোম্পানির দৈনন্দিন কার্যক্রম পরিচালনার লক্ষ্যে উক্ত শূণ্য পদে সংশ্লিষ্ট কোম্পানির সিইও’র অব্যবহিত নিম্নপদে নিয়োজিত যোগ্যতা সম্পন্ন কর্মকর্তাকে তার বর্তমান দায়িত্ব পাশাপাশি ভারপ্রাপ্ত মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা হিসেবে অতিরিক্ত দায়িত্ব দিতে পারবেন। তবে এর মেয়াদ ৩ মাসের অধিক হবে না।’

আইআরডিএ বলছে, শুধু তাই নয়, এর পাশাপাশি অনেক বিমা কোম্পানি একই সঙ্গে ‘মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা এবং ব্যবস্থাপনা পরিচালক’ পদ ব্যবহার করে থাকেন, যা বিমা আইন, ২০১০ এর ৮০ ধারার পরিপন্থী। কারণ বিমা আইনে শুধুমাত্র ‘মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা’র বিধান রয়েছে। সে মোতাবেক কর্তৃপক্ষ অনুমোদনও প্রদান করে। ‘ব্যবস্থাপনা পরিচালক’ বিমাখাতে শুধুমাত্র বিমা করপোরেশন আইন, ২০১৯ এর বিধান অনুযায়ী রাষ্ট্র মালিকানাধীন সাধারণ বিমা ও জীবন বিমা করপোরেশনের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য।

এবিষয়ে আইআরডিএ’র দায়িত্বশীল এক কর্মকর্তা বলেছেন, এধরনের অনিয়ম বা আইনের ব্যত্যয় ঘটিয়ে যারা নিয়োগ দিচ্ছে তাদের সতর্ক করেও চিঠি দেয়া হয়েছে। এমন নিয়োগের ক্ষেত্রে যদি আইনের বিধান পরিপালন করা না হয় তা হলে সংশ্লিষ্ট বিমা কোম্পানির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।

প্রকাশ :জানুয়ারি ১১, ২০২০ ১২:৪৪ অপরাহ্ণ