কারাবন্দি চিকিৎসাধীন বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার মামলায় তার জামিনের জন্য আদালতে যাবেন বলে জানিয়েছেন জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের আহ্বায়ক ড. কামাল হোসেন। তিনি বলেন, ‘এটা তো সংবাদ মাধ্যমে বলার কথা না। অবশ্যই পেশাগত কারণে আমি কোর্টে যাবো।’
মঙ্গলবার (৭ জানুয়ারি) দুপুরে এক সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি এ কথা বলেন।
মতিঝিলে নিজ চেম্বারে ঐক্যফ্রন্টের স্টিয়ারিং কমিটির বৈঠক শেষে সাংবাদ সম্মেলনে কথা বলেন ড. কামাল হোসেন।
হাইকোর্টের আপিল বিভাগে খালেদা জিয়ার জামিন খারিজ করে দেওয়া পর আবারও তার জামিনের জন্য আবেদন করা হবে কিনা, জানতে চাইলে ড. কামাল বলেন, ‘আমাদের চেষ্টা অব্যাহত থাকবে। জামিন যতবার প্রয়োজন চাওয়া যাবে।’
ড. কামাল হোসেন বলেন, ‘মিডিয়ায় প্রকাশিত সংবাদের আলোকে আমরা জানতে পারি, তিন বারের সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া কারাগারে মারাত্মক অসুস্থ অবস্থায় দিন কাটাচ্ছেন। তার স্বাস্থ্যের গুরুতর অবনতির কারণে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের পক্ষ থেকে গভীর উৎকণ্ঠা ও উদ্বেগ প্রকাশ করছি।’
খালেদা জিয়ার উন্নত চিকিৎসার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, ‘অবিলম্বে তার মুক্তির দাবিও করছি। আমরা স্পষ্ট ভাষায় বলতে চাই, অন্যথায় যেকোনও অনভিপ্রেত ঘটনার দায়-দায়িত্ব সম্পূর্ণভাবে সরকারকে বহন করতে হবে।’
খালেদা জিয়ার জামিন নিয়ে টালবাহানা চলছে বলে দাবি করে ড. কামাল বলেন, ‘আমরা এর নিন্দা প্রকাশ করছি। আমরা তার উন্নত চিকিৎসার যে দাবি করছি, সরকার যদি তা না মেনে নেয়, তাহলে তখন এটি সংবিধান লঙ্ঘন করার শামিল।’
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রী ধর্ষণ ঘটনার নিন্দা জানিয়ে কামাল হোসেন বলেন, ‘এই ঘটনায় আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া দেশের ১৬ কোটি মানুষের দাবি।’
তিনি আরও বলেন, ‘বিচারকরা মূল একটা জিনিসকে মিস করেছেন। খালেদা জিয়ার স্বাস্থ্য নিয়ে যে মেডিক্যাল রিপোর্ট দেওয়া হয়েছে, সেটা অসম্পূর্ণ রিপোর্ট। কারণ, এই রিপোর্ট তৈরিতে কোনও মানসিক বিশেজ্ঞষ ছিল না। খালেদা জিয়ার মূল চিকিৎসা হচ্ছে ফিজিওথেরাপি। এ বিষয়ে কোনও বিষেজ্ঞ ছিলেন না। মেডিক্যাল বোর্ডের রিপোর্টে তার যতগুলো রোগের কথা বলা হয়েছে, সেগুলোর কোনও রিপোর্টও আদালতে দাখিল করা প্রতিবেদনের সঙ্গে দেওয়া হয়নি। এই রকম অসম্পূর্ণ রিপোর্ট দেখে মামলার কাজ ডিসমিস করে বিচারকরা ভুল কাজ করেছেন। মানবিক কারণে খালেদা জিয়ার জামিন পাওয়াতে কোনও বাধা নেই।’
এসময় ঐক্যফ্রন্টের নেতা গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী বলেন, ‘আমাদের শীর্ষ নেতা ড. কামাল বলেছেন, প্রয়োজন হলে তিনি খালেদা জিয়ার মামলায় আদালতে যাবেন। কিন্তু বিচারপতিরা যদি পাথরের মতো বিবেকহীন হয়ে থাকেন, তাহলে আন্দোলন ছাড়া আমাদের কোনও পথ নেই।’
খালেদা জিয়াকে জামিন না দিয়ে সরকার বঙ্গবন্ধুকে অপমান করছে বলে মন্তব্য করে ডা. জাফরুল্লাহ বলেন, ‘সংবিধান ও বঙ্গবন্ধু অসমাপ্ত আত্মজীবনীতে পরিষ্কারভাবে বলা আছে— একাকিত্ব বড় অপরাধ, যা মানসিক অবসাদের সৃষ্টি করে। এটা বেআইনি কাজ। হাসপাতালে খালেদা জিয়াকে যেভাবে রাখা হয়েছে, সেটা কিন্তু একাকিত্ব। এই মুহূর্তে এটাই তার বড় রোগ।’
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আবদুল মঈন খান বলেন, ‘খালেদা জিয়াকে তার সাংবিধানিক অধিকার থেকে বঞ্চিত করা হয়েছে। এটা আজকের ফ্রন্টের সভায় সবাই একমত হয়েছেন। তিনি তিন বারের সাবেক প্রধানমন্ত্রী, এটি বাদ দিলেও একজন সাধারণ নাগরিক হিসেবে তার জামিন পাওয়ার অধিকার রয়েছে। সরকার সেটা থেকে তাকে বঞ্চিত করেছে।’
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন— নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহামুদুর রহমান মান্না, গণফোরামের নির্বাহী সভাপতি অধ্যাপক আবু সাইয়িদ চৌধুরী, অ্যাডভোকেট সুব্রত চৌধুরী, বিকল্পধারা বাংলাদেশের একাংশের সভাপতি অধ্যাপক নুরুল আমিন বেপারী, জেএসডি নেতা শফিউদ্দিন স্বপন, ঐক্যফ্রন্টের দফতর প্রধান জাহাঙ্গীর আলম মিন্টু প্রমুখ।