ধর্ষণের শিকার ঢাবি শিক্ষার্থীর শরীরে বেশকিছু জখম রয়েছে। তবে সে এখন মানসিকভাবে ভীষণ ট্রমাটাইজড বলে উল্লেখ করেছেন তার মামা। সোমবার (৬ জানুয়ারি) দুপুরে বাংলা ট্রিবিউনকে এ তথ্য জানান তিনি।
তিনি (ছাত্রীর মামা) রবিবার রাতে হাসপাতালে দীর্ঘসময় ভাগ্নির পাশে থাকলেও তাকে দেখেননি উল্লেখ করে বলেন, ‘এ ভার বহন করা কঠিন। সে মানসিকভাবে বিধ্বস্ত হয়ে আছে। তার শারীরিক অবস্থা সহনীয় থাকলেও এখনও পর্যবেক্ষণে রাখা হয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘সেই শিক্ষার্থীর বাবা পেশায় একজন কলেজ শিক্ষক। বাবা-মা এখন ঢাকায় অবস্থান করছেন এবং মেয়ের পাশেই রয়েছেন। তাদের মানসিক অবস্থাও বেশ নাজুক। মেয়েটির সঙ্গে তারা কথা বলেছেন। তার অভিযোগের ভিত্তিতেও মামলার কার্যক্রম এগোচ্ছে।’
ঘটনার শিকার ছাত্রীর মামা বলেন, ‘ইতোমধ্যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যসহ প্রশাসন আমাদের সঙ্গে সহযোগিতাপূর্ণ আচরণ করেছেন। তারা বলেছেন, যেকোনও সহযোগিতা তারা আমাদের সন্তানের জন্য করবেন।’
এদিকে, সোমবার সকালে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এ কে এম নাসির উদ্দিন সাংবাদিকদের জানান, তার (ছাত্রীর) শরীরে আঘাতের চিহ্ন আছে। বিশেষত গলায়। তিনি বলেন, ‘ধর্ষণের শিকার শিক্ষার্থীর শারীরিক অবস্থা পর্যবেক্ষণে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের প্রসূতি ও স্ত্রীরোগ বিদ্যা বিভাগের সাবেক প্রধান অধ্যাপক ডা. সালমা রউফকে প্রধান করে সাত সদস্যের মেডিক্যাল বোর্ড গঠন করা হয়েছে।’
ঢামেক পরিচালক জানান, রবিবার রাতেই কর্তব্যরত চিকিৎসকের কাছে তিনি (ভুক্তভোগী ছাত্রী) ঘটনার বর্ণনা দিয়েছেন। রবিবার বিকাল সাড়ে পাঁচটার পর বিশ্ববিদ্যালয়ের বাসে করে ওই ছাত্রী বান্ধবীর বাসায় যাচ্ছিলেন। কুর্মিটোলা বাসস্টেশনে নামার পর তাকে অজ্ঞাত একব্যক্তি অনুসরণ করতে থাকে। মাঝপথে তাকে ধরে নির্জন স্থানে নিয়ে ধর্ষণ করে। ঘটনাটি সন্ধ্যা ৭টা থেকে ৮টার মধ্যে ঘটেছে। রাত ১০টার দিকে জ্ঞান ফেরে ওই ছাত্রীর। এরপর তিনি রিকশায় করে বান্ধবীর বাসায় যান। সেখান থেকে বান্ধবীসহ অন্য সহপাঠীরা তাকে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে আসেন। তখন থেকেই তিনি ওয়ানস্টপ ক্রাইসিস সেন্টারে রয়েছেন।
উত্তপ্ত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
এদিকে ধর্ষণের সংবাদে উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়। ভোর রাত থেকেই ছাত্রলীগের কর্মীরা বিক্ষোভ শুরু করেন। সকালে বেশ কয়েকটি সংগঠন পৃথক পৃথক জায়গায় বিক্ষোভ চালিয়ে যাচ্ছে। ছাত্রীকে ধর্ষণের ঘটনায় বিচার দাবি করে ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ করছে ছাত্রলীগ। সোমবার (৬ জানুয়ারি) বেলা ১১টা থেকে টিএসসি এলাকা অবরোধ করে বিক্ষোভ শুরু করে তারা।
বিক্ষোভ চলাকালে ছাত্রলীগের কর্মীরা বঙ্গবন্ধুর বাংলায় ধর্ষকের ঠাঁই নাই, ধর্ষকের বিরুদ্ধে ডাইরেক্ট অ্যাকশন, ধর্ষকের ফাঁসি চাই ইত্যাদি স্লোগান দিয়ে বিচার দাবি করেন। এসময় রাজু ভাস্কর্যের সামনে উপস্থিত ছিলেন ছাত্রলীগের সভাপতি আল নাহিয়ান খান জয়, সাধারণ সম্পাদক লেখক ভট্টাচার্য, ঢাবি ছাত্রলীগের সভাপতি সনজিত দাস এবং সাধারণ সম্পাদক সাদ্দাম হোসেন।
এছাড়া, ঢাবি শিক্ষার্থী ধর্ষণের ঘটনায় শাহবাগে রাস্তা অবরোধ করে বিচারের দাবি জানিয়েছে সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদ। সোমবার দুপুর ১২টার দিকে শাহবাগে রাস্তার মাঝখানে বসে প্রতিবাদ জানান তারা। এসময় উই ওয়ান্ট জাস্টিস স্লোগান দিতে দেখা যায়। ডাকসু ভিপি নুরুল হক নুরু, ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদের যুগ্ম আহ্বায়ক রাশেদ খানসহ অন্যরা অবরোধে অংশ নেন।