২২শে নভেম্বর, ২০২৪ ইং | ৭ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ | সন্ধ্যা ৬:৪৫

হাওরে দেশীয় মাছ ধরার উৎসব

শীত নেমে আসার সঙ্গে সঙ্গে কমতে শুরু করেছে হবিগঞ্জের হাওরের পানি। আর এ মৌসুমে হাওরের পানি কমলেই শুরু হয় দেশীয় মাছের ধরার উৎসব।

তাই হবিগঞ্জের হাওরে এখন মাছ ধরার ধুম পড়েছে। মৎস্যজীবীরা হাওর থেকে বোয়াল, আইড়, বাইম, কালিবাউশ, বেলে, পাবদা, রুই, কাতল, মৃগেল, পুঁটি, কই, মাগুর, শিং, টাকি, গুতুমসহ নানা প্রজাতির মাছ আহরণ করছেন।

হাওরের আশেপাশে কিনতে পাওয়া যাচ্ছে এসব মাছ। বিক্রি করে লাভবান হচ্ছেন মৌসুমী মৎস্যজীবীরা। লোকজনও কোন প্রকার দূষণমুক্ত মাছ ক্রয় করে খেতে পারছে।

জেলা মৎস্য অফিস সূত্রে জানা যায়, পানি কমে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে জেলার আজমিরীগঞ্জ, বানিয়াচং, নবীগঞ্জ ও বাহুবলের হাওর এলাকায় দেশীয় মাছ শিকারের ধুম পড়েছে। ছোট মাছের মধ্যে পুঁটি মাছ বেশি পাওয়া যাচ্ছে। তাই লাভবান হওয়ার আশায় পুঁটি মাছকে শুঁটকি দিয়ে রাখছেন মৎস্যজীবীরা।

বছরের ১২ মাসের মধ্যে প্রায় সাত মাস পানি থাকে এ হাওর এলাকায়। শীতকালে এ পানি কমে আসলেই মৎস্যজীবীরা প্রতিযোগিতামূলক মাছ শিকারে হুমড়ি খেয়ে পড়েন। এ মাছ স্থানীয় চাহিদা পূরণ করে দেশের বিভিন্নস্থানেও সরবরাহ হয়। এরমধ্যে কিছু পরিমাণ মাছ আবার প্রক্রিয়ার মাধ্যমে বিদেশেও যায়।

সূত্রটি জানায়, লাভজনক হওয়ায় হাওর এলাকার বেকার লোকজন বাণিজ্যিকভাবে মাছ চাষে নেমেছে। তারা মাছের চাষ করে লাভবান হচ্ছেন। এক সময় মাছ চাষকে লজ্জাজনক মনে করতেন অনেকেই। সরকারের দায়িত্বশীল ভূমিকায় মৎস্য বিভাগের নানা চেষ্টার ফলে বর্তমানে হাওরে মাছ চাষির সংখ্যা বেড়েছে।

মৎস্য চাষে সফলতা পাওয়া খালেদ হোসেন চৌধুরী জেলার আজমিরীগঞ্জ উপজেলার শিবপাশার হাওর এলাকায় প্রায় ৩২ একর জমিতে ১৪টি পুকুর খনন করেন। এসব পুকুরে শুরু করেন নানা প্রজাতির মাছ চাষ। তারপর পুকুর পাড়ে শুরু করেন সবজি ও ফলের চাষ। কিছুদিন পরই সফলতা আসতে শুরু করে। বাড়তে থাকে পুকুরের মাছ। পাড়ে সবজি ও ফলের বাম্পার ফলন হয়। বছর না ঘুরতেই পুকুরের মাছ, মৌসুম অনুযায়ী সবজি ও বারমাসি ফল বিক্রি করে লাভের মুখ দেখতে পান খালেদ। এরপর তাকে আর পেছন ফিরে তাকাতে হয়নি। খালেদের এই প্রকল্পে স্থানীয় অনেক বেকারের কর্মসংস্থান হচ্ছে। তারা মাসিক বেতন পাচ্ছেন।

আলাপকালে খালেদ হোসেন চৌধুরী বলেন, ‘৩২ একর জমির প্রকল্পটি বর্তমানে আরও সম্প্রসারণ করা হয়েছে। খনন করা হয়েছে আরও পুকুর। পাড়ে সবজির চাষও বেড়েছে ।’

জেলা মৎস্য কর্মকর্তা শাহজাদা খসরু বলেন, ‘হাওরের পানিকে কেন্দ্র করে দেশীয় মাছের প্রচুর চাষ হচ্ছে। মাছের উৎপাদন বাড়াতে আমরা কাজ করছি। তাতে দিন দিন মাছের উৎপাদন বাড়ছে। প্রাকৃতিকভাবে মাছের উৎপাদনের সাথে বাণিজ্যিকভাবেও শুরু হয়েছে মৎস্য চাষ।’

এরমধ্যে আজমিরীগঞ্জের হাওরের শিবপাশায় খালেদ হোসেন চৌধুরী বেকার যুবকদের অনুকরণীয় হয়ে উঠেছেন। যে স্থানে বছরে একবার ধান চাষ হতো, সেখানে তিনি মাছ আর সবজি চাষ করে বছরে লাখ লাখ টাকা আয় করছেন। তার সাফল্য দেখে এলাকার বেকার যুবকরাও উদ্বুদ্ধ হচ্ছেন।

প্রকাশ :জানুয়ারি ১, ২০২০ ৪:৩৭ অপরাহ্ণ