২৪শে নভেম্বর, ২০২৪ ইং | ৯ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ | সকাল ৮:১৩

স্বাগত ২০২০: উদযাপন আর উদ্দীপনার বছর

একেকটা বছর শেষ হওয়া মানে যেন অনন্তে মিশে যাওয়া। চলে যাওয়া সময় আর ফিরে পাওয়া যায় না। তাই আনন্দ-বেদনার মধ্যেই পাওয়া না পাওয়ার হিসাব কষতে কষতেই নতুন বছরে ঘুরে দাঁড়াবার প্রত্যয় জাগে সবার মনেই। অতীতের ব্যর্থতাকে জয় করে নতুন বছরের জন্য সবার মনে জাগে নতুন প্রত্যাশা। বিদায়ী ২০১৯ সালের সব অপ্রাপ্তি ও বেদনা ভুলে নতুন বছরে সবার প্রত্যাশা আগত বছরটা হোক শান্তি, সমৃদ্ধি ও অগ্রগতির। স্বাগত ২০২০।

রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ইংরেজি নববর্ষ উপলক্ষে পৃথক বাণী দিয়েছেন। বাণীতে তাঁরা ইংরেজি নতুন বছর উপলক্ষে দেশবাসী, প্রবাসী বাঙালিসহ বিশ্ববাসীকে আন্তরিক শুভেচ্ছা জানিয়েছেন।

রাষ্ট্রপতি তাঁর বাণীতে ২০২০ সালকে জাতীয় জীবনে একটি গুরুত্বপূর্ণ বছর উল্লেখ করে বলেন, এবছর জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী সাড়ম্বরে উদযাপিত হবে। এ জন্য গোটা দেশবাসী উন্মুখ হয়ে আছে।

তিনি বলেন, নববর্ষ সকলের মাঝে জাগায় প্রাণের নতুন স্পন্দন, নতুন আশা, নতুন সম্ভাবনা। বিগত বছরের সুখ-দুঃখ, আনন্দ-বেদনা পেছনে ফেলে নতুন বছরে অমিত সম্ভাবনার পথে এগিয়ে যাক বাংলাদেশ-খ্রিস্টীয় নববর্ষে এ প্রত্যাশা করি।

নতুন স্বপ্ন আর সম্ভাবনা নিয়ে যাত্রা শুরু হচ্ছে নতুন বছরের উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী তাঁর বাণীতে নতুন বছর সবার জীবনে অনাবিল সুখ, শান্তি ও সমৃদ্ধি বয়ে আনার জন্য মহান আল্লাহতায়ালার কাছে প্রার্থনা করেন।

সদ্য বিদায়ী বছরে প্রাণ ও সম্পদহানিতে অন্যতম ছিল কিছু অগ্নিকাণ্ড। একদিকে যেমন ঘটেছে পুরান ঢাকার চুড়িহাট্টা ও বনানীর এফআর টাওয়ারের মতো ভয়াবহ আগ্নিকাণ্ড, তেমনি বেড়েছে সিলিন্ডার বিস্ফোরণের ঘটনা। ফায়ার সার্ভিসের হিসাব অনুযায়ী, ২০১৯ সালের জানুয়ারি থেকে নভেম্বর পর্যন্ত সারা দেশে মোট ২২ হাজার ২৮৩টি অগ্নিকাণ্ড ঘটেছে। যা গত ২৩ বছরের মধ্যে অগ্নিদুর্ঘটনায় রেকর্ড। এসব ঘটনায় ১৫৪ জন নিহত ও ৩৭৭ জন আহত হয়েছেন।

নতুন বছরে এই অগ্নিকাণ্ড প্রতিরোধের চ্যালেঞ্জ থাকছে সরকার এবং সংশ্লিষ্টদের জন্য।

২০১৯ সালের কোরবানির ঈদ হয়তো আলাদাভাবেই মনে রাখবেন মৌসুমি চামড়া ব্যবসায়ীরা। কারণ ২০১৯ সালে কোরবানির পশুর চামড়ার ভয়াবহ দরপতন ঘটে। ২০১৮ সাল থেকে দরপতন শুরু হলেও এমন ধস নিকট অতীতে আর দেখা যায়নি। এবার চামড়ার দাম ছিল স্মরণকালের মধ্যে সর্বনিম্ন। রাজধানীসহ সারা দেশেই সরকার নির্ধারিত মূল্যের চেয়ে চার থেকে পাঁচগুণ কমে চামড়া বিক্রি হয়। আর ছাগল ও ভেড়ার চামড়া তো বিক্রিই হয়নি। দাম না পেয়ে ক্ষোভে অনেক স্থানে চামড়া মাটিতে পুঁতে ফেলেন।

নতুন বছরে কোরবানির আগে থেকেই এ বিষয়ে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়সহ সংশ্লিষ্টরা এ বিষয়ে কাজ করবে বলে প্রত্যাশা সবার।

বিদায়ী বছরে বেশকিছু আলোচিত ঘটনার মধ্যে অন্যতম ছিল ছেলেধরা আতঙ্কে গণপিটুনিতে হতাহতের ঘটনা। গত জুলাই মাসের শুরুতে হঠাৎই সারা দেশে গুজব ছড়িয়ে পড়ে- পদ্মা সেতু নির্মাণ কাজে মানুষের মাথা প্রয়োজন। এ পরিপ্রেক্ষিতে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে ‘ছেলেধরা’ আতঙ্ক তৈরি হয়। এরপর থেকেই ছেলেধরা সন্দেহে একের পর এক গণপিটুনির খবর আসতে থাকে।

এই গুজব এতটাই ভয়াবহ আকারে ছড়িয়ে পড়ে যে, তা ঠেকাতে সেতু কর্তৃপক্ষ এবং আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে দফায় দফায় বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করতে হয়। তারপরও ছেলেধরা গুজবে রাজধানীসহ বিভিন্ন স্থানে গণপিটুনিতে প্রাণ হারান অন্তত ৭ জন, আহত হন আরও অর্ধশতাধিক। এর মধ্যে ঢাকার বাড্ডায় গত ২০ জুলাই উন্মত্ত জনতার হামলায় মারা যান নিরীহ গৃহবধূ তাসলিমা বেগম রেণু, যা দেশজুড়ে তীব্র আলোড়ন সৃষ্টি করে।

বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠান (বিআইডিএস) এর অর্থনীতিবিদ নাজনীন আখতার  বলেন, আমাদের ক্যালেন্ডার ইয়ারের শুরু অর্থবছরের মাঝামাঝি। এসময় এসে যদি দেখি, রাজস্ব আদায়ের চ্যালেঞ্জটা বড়। লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী এখন পর্যন্ত যা আদায় হয়েছে সেটি আশানুরূপ নয়, এটি সরকারকে প্রচুর পরিমাণ বড় ঋণ নিতে বাধ্য করবে। যেহেতু সরকার মেগা প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে ফলে অর্থবছরের আগামী ছয় বছর রাজস্ব আদায়ের গতি বাড়ানোই এখন বড় চ্যালেঞ্জ। তিনি আরও বলেন, উন্নয়ন প্রকল্পের ব্যয় সময় অনুযায়ী করা প্রয়োজন, যাতে খরচের বৃদ্ধি না হয়। ক্যালেন্ডার ইয়ার শুরু হচ্ছে অর্থনৈতিক বড় সিদ্ধান্ত নিয়ে ৯ শতাংশ সুদের হার সরকার বাস্তবায়ন করতে চায়। তবে কেবল সুদের হারের ওপর ব্যবসা বাণিজ্য নির্ভর করে না। ব্যাংকের আয় শুধু কমানো নয়, ব্যবসার অবকাঠামো গড়ে তোলার যে চ্যালেঞ্জ সেটিতেও কাজ করা দরকার। এক্ষেত্রে ইকোনমিক জোন বাস্তবায়ন জরুরি। সব ইপিজেড যাতে খুলে দেওয়া সম্ভব হয়, সেদিকে খেয়াল করতে হবে।

২০১৯ সালে দ্রব্যমূল্যে অভিজ্ঞতার আলোকে কৃষকের ধানের দাম পেতে যেন সমস্যা না হয় সেদিকে উদ্যোগ নিতে হবে উল্লেখ করে এই অর্থনীতিবিদ বলেন, ক্ষুদ্র কৃষকদের অল্পদিনের জন্য ঋণের ব্যবস্থা করে দিতে হবে। পেঁয়াজের দাম এবছরও যেন ২০১৯ এর মতো লাগামহীন না হয় সেই পরিকল্পনাটা করতে হবে। নারীদের প্রতি সহিংসতা ইস্যুতে আরও সংবেদনশীল হওয়ার পরামর্শ দিয়ে তিনি বলেছেন, গত যে কোনও সময়ের তুলনায় ধর্ষণ বেড়েছে। নারীর প্রতি সহিংসতা প্রতিরোধ করতে উদ্যোগ ও বাজেট বাড়াতে হবে।

২০১৯ সালে বছরজুড়েই অভিবাসী শ্রমিকদের অধিকার নিয়ে কথা হয়েছে। বর্তমানে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে বাংলাদেশের ১ কোটিরও বেশি অভিবাসী রয়েছে। এর অধিকাংশই মধ্যপ্রাচ্যে। গত একবছরে নির্যাতনের শিকার হয়ে দেশে ফিরে এসেছে নারী শ্রমিকদের অনেকে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক সি আর আবরার মনে করেন, একইধরনের চ্যালেঞ্জগুলো থেকে যাচ্ছে। এখনও দক্ষ শ্রমশক্তি পাঠানোর জন্য যে উদ্যোগ সেগুলো নেওয়া হয়নি। অপেক্ষাকৃত স্বল্পদক্ষ লোক দিয়েই কাটাতে হচ্ছে। কী ধরনের কোর্স, বাইরের চাহিদার সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ কিনা সেসব নিয়ে পরিকল্পনা নেই। যে সেক্টরগুলোর বাইরে সম্ভাবনা আছে সেসব বাছাই করা জরুরি।
তিনি আরও বলেন, অভিবাসন ব্যয়টা বড় চ্যালেঞ্জ। সেটি কমানোর জন্য দালাল, রিক্রুটমেন্ট এজেন্সি এবং অভিবাসী তিনপক্ষের যোগ আছে। এটা বিবেচনায় নিয়ে ব্যবস্থা নেওয়ার কোনও উদ্যোগ দেখছি না। নতুন মার্কেট করা কঠিন, কিন্তু সম্ভাবনাগুলোর জায়গায় উদ্যোগ থাকতে হবে। এনআরসি ইস্যুতে বলা হচ্ছে আমাদের আশ্বাস দেওয়া হয়েছে। কূটনীতিতে আশ্বাসের কোনও জায়গা নেই। সেটা নিয়ে আমাদের কোনও প্রস্তুতি নেই। ২০১৯ সালের এই সঙ্কটগুলো নতুন বছরেও আমাদের মোকাবিলা করতে হবে।

প্রকাশ :জানুয়ারি ১, ২০২০ ১২:১৫ অপরাহ্ণ