বিমানবন্দর সূত্রে জানা গেছে, দেশি-বিদেশি ৩৯টি এয়ারলাইন্সের কার্যক্রম রয়েছে এই বিমানবন্দরে। প্রতিদিন গড়ে ২৫০টি ফ্লাইট ওঠানামা করে। এর মধ্যে ১৩০টি বেশি আান্তর্জাতিক ফ্লাইট। বিদেশ থেকে আসা যাত্রীরা ইমিগ্রেশন শেষে বেল্ট থেকে ব্যাগ সংগ্রহ করেন। এরপর যাত্রীদের কাস্টমস জোন পার হয়ে বিমানবন্দর থেকে বের হতে হয়। বিমানবন্দরে যাত্রীদের তল্লাশির জন্য ঢাকা কাস্টম হাউজের রয়েছে মাত্র ৩টি স্ক্যানার মেশিন। ৩টির মধ্যে একটি ব্যবহার হয় ভিআইপি গেটে। বাকি দুটি সাধারণ যাত্রীদের জন্য। প্রয়োজনের তুলনায় মেশিন কম থাকায় বিদেশ ফেরত শতভাগ যাত্রীর ব্যাগ তল্লাশি করতে পারে না কাস্টমস হাউজ। বর্তমানে একটি ফ্লাইটে গড়ে ৫-১০ শতাংশ যাত্রীর ব্যাগ তল্লাশি করা হয়। এর বাইরে সন্দেহ হলে আরও কিছু যাত্রীর তল্লাশি করে কাস্টমস। তল্লাশিতে শুল্কযোগ্য পণ্য পাওয়া গেলে আদায় করা হয় শুল্ক। জব্দ করা হয় অবৈধ মালামাল।
সূত্র জানায়, বাকি যাত্রীরা তল্লাশি ছাড়াই বের হয়ে যান বিমানবন্দর থেকে। ফলে তল্লাশিবিহীন যাত্রীদের ব্যাগে শুল্কযোগ্য পণ্য, আমদানি নিষিদ্ধ পণ্য, অস্ত্র, বিস্ফোরক থাকলেও তা ধরা পড়বে না। অন্যদিকে, দেশ থেকে যাওয়া যাত্রীদের ক্ষেত্রে বিমানবন্দরে স্ক্যানারের মাধ্যমে এভিয়েশন সিকিউরিটির (এভসেক) সদস্যরা যাত্রীদের ব্যাগ তল্লাশি করেন। সাধারণত এভসেক সদস্যরা নিরাপত্তার বিষয় মাথায় রেখে তল্লাশি করেন। জনবল সংকট থাকায় বহির্গমন টার্মিনালে এসব স্ক্যানার নেই কাস্টমসের প্রতিনিধি। ফলে মুদ্রা, প্রত্নতত্ত্ব, রফতানি নিষিদ্ধপণ্য মূল্যবান সম্পদ পাচারের ঝুঁকি থেকে যাচ্ছে।
সূত্র জানায়, পূর্ব থেকে গোপন তথ্যের ভিত্তিতে সব চেয়ে বেশি ধরা পড়ে চোরাচালান। এছাড়া, ৫-১০ শতাংশ তল্লাশি, সন্দেভাজনদের তল্লাশি করেও চোরাচালান ও শুল্ক যোগ্যপণ্যের শুল্ক আদায় করে কাস্টমস। কাস্টমসের চোখ ফাঁকি দিয়ে যাওয়া যাত্রীরা কখনও কখনও ধরা পড়ছেন গোয়েন্দা সংস্থা ও বিমানবন্দর আর্মড পুলিশের হাতে। ২০১৭ সালের জানুয়ারি থেকে ২০১৯ সালের আগস্ট পর্যন্ত বিমানবন্দর আর্মড পুলিশ ২২২ কেজি সোনা উদ্ধার করেছে। উদ্ধার হয়েছে ১৪ লাখ ৬ হাজার ৯৪৪ টাকার সমপরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা, ৬৮০ লিটার মদ, ১ হাজার ৫৬৮টি মোবাইল।
সূত্র জানায়, বিমানবন্দরের আমদানি ও রফতানি কার্গো ভিলেজও একমাত্র কাস্টমস হাউজ তল্লাশি চালায়। কার্গো ভিলেজে নেই কোনও কনটেইনার স্ক্যানার, ভেহিক্যাল স্ক্যানার। ম্যানুয়াল পদ্ধতি তল্লাশি করেন কাস্টমস কর্মকর্তারা। ফলে এখানেও শতভাগ পণ্য স্ক্যানিং করা সম্ভব হচ্ছে না।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিমানবন্দরের এক কর্মকর্তা বলেন, ‘দেশে আসা যাত্রীদের তল্লাশি করে শুধু কাস্টমস হাউজ। ফলে, তারা যদি কোনও কারণে কোনও কারণে ব্যর্থ হয়, তাহলে দেশে আমদানি নিষিদ্ধ পণ্য প্রবেশ করবে, চোরাচালান হবে। সবচেয়ে বড় ঝুঁকি হচ্ছে দেশে অস্ত্র ও বিস্ফোরক প্রবেশের ঝুঁকি থেকে যাচ্ছে।’
জানতে চাইলে কাস্টমস হাউজের একজন কর্মকর্তা বলেন, ‘বিমানবন্দরে প্রতিনিয়ত বাড়ছে যাত্রী ও পণ্য পরিবহন। কিন্তু এর সঙ্গে তাল মিলিয়ে কাস্টমসের যন্ত্রপাতি, জনবল বাড়েনি। আমাদের অনেক বেশি চ্যালেঞ্জের মধ্যে দিয়ে কাজ করতে হয়। প্রতিনিয়ত চোরাকারবারিরা নিত্যনতুন কৌশল অবলম্বন করছে। ম্যানুয়াল পদ্ধতিতে এত বেশি যাত্রীদের তল্লাশি করা সময়ের ব্যাপার। এজন্য আরও বেশি ব্যাগেজ স্ক্যানার দরকার। এছাড়া সু স্ক্যানার, হ্যান্ড হেল্ড এক্স-রে মেশিন, বডি স্ক্যানার মেশিন দরকার। কার্গোর জন্য ভেহিক্যাল স্ক্যানার, প্যালেট স্ক্যানার জরুরি।’
কাস্টমসের এই কর্মকর্তা আরও বলেন, ‘অনেক সময় জুতা খুলে চেক করা চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়ায়। অনেক যাত্রী জুতা খুলতে চান না। আবার পেটের ভেতরে করেও চোরাচালানের ঘটনা ঘটে। এজন্য সহজে বহনযোগ্য স্ক্যানার বিমানবন্দরে থাকলে এই কাজটি সহজ হয়। এখন কোনও যাত্রীকে সন্দেহ হলে বিমানবন্দরের বাইরের কোনও ক্লিনিকে নিয়ে এক্স-রে করাতে হয়।’
এদিকে জনবল সংকটও রয়েছে ঢাকা কাস্টম হাউজও। অর্গানোগ্রাম অনুযায়ী ৩ শিফটে ২৮৬ কর্মকর্তার দায়িত্ব পালন করার কথা থাকলেও সেখানে দায়িত্ব পালন করছেন মাত্র ১০০জন। জনবল সংকটের কারণে শাহজালালে বহির্গমন টার্মিনাল, সিআইপি গেটে নেই কোনও কাস্টমস কর্মকর্তা। বোর্ডিং ব্রিজ, ইমিগ্রশন, হ্যাঙ্গার গেট, কার্গো ভিলেজেও নেই পর্যাপ্ত জনবল নেই।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে ঢাকা কাস্টম হাউজের কমিশনার মোয়াজ্জেম হোসেন বলেন, ‘আমরা আধুনিক যন্ত্রপাতি সংযোজনের উদ্যোগ নিয়েছি। ২টি ব্যাগেজ স্ক্যানার মেশিন শিগগিরই বিমানবন্দরে বসানো হবে। কার্গোতে ২টি প্যালেট স্ক্যানারও বসানো হবে। এছাড়া, প্রয়োজনীয় অন্যান্য যন্ত্রপাতিরও তালিকা তৈরি করা হয়েছে। এটি এনবিআর-এ পাঠানো হবে।’ শিগগিরই এসব যন্ত্র বসানো সম্ভব হবে বলেও তিনি আশা প্রকাশ করেন।