এ ছাড়া চর্মরোগ, চোখের প্রদাহ, আমাশয়, জন্ডিসসহ আরও কিছু রোগেও আক্রান্ত হচ্ছে শিশুরা। ঢাকার পাশাপাশি বিভিন্ন জেলা আর শীতের প্রকোপ বেশি থাকা উত্তরের জনপদেই আক্রান্তের হার বেশি। শীত বাড়লে তীব্র শ্বাসতন্ত্রের সমস্যা এবং কোল্ড ডায়রিয়া আরও বাড়ার আশঙ্কা করছেন শিশু বিশেষজ্ঞরা।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হেলথ ইমার্জেন্সি অপারেশন্স সেন্টার অ্যান্ড কন্ট্রোল রুমের তথ্যানুযায়ী, গত ৫৪ দিনে সারা দেশে শীতজনিত বিভিন্ন রোগে ২ লাখ ৫৮ হাজার ৬৫৭ জন আক্রান্ত হয়েছে। একই সময়ের মধ্যে ঠান্ডাজনিত অসুখের কারণে ৪৯ জনের মৃত্যু হয়েছে।
সেন্টারের সহকারী পরিচালক ডা. আয়শা আক্তার ঢাকা টাইমসকে জানান, ঢাকাসহ সারা দেশেই শীতজনিত রোগের প্রকোপ বেড়েছে। বিভিন্ন ধরনের রোগব্যাধি নিয়ে সারা দেশের হাসপাতালগুলোতে ভিড় করছে রোগীরা। তবে রোগাক্রান্তদের মধ্যে উল্লেখযোগ্যসংখ্যক শিশু-বৃদ্ধ। বিশেষ করে এই সময়ে শিশুরাই বেশি আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকিতে রয়েছে।
সরকারি হিসাবে গত ১ নভেম্বর থেকে ২৪ ডিসেম্বর পর্যন্ত ৫৪ দিনে শ্বাসতন্ত্রের সমস্যায় সারা দেশে চিকিৎসা নিয়েছেন ৪২ হাজার ৬১২ জন। ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়ে ১ লাখ ৬ হাজার ৮১৬ জন। অন্যান্য রোগে আক্রান্ত হয়ে চিকিৎসা নিয়েছেন ১ লাখ ১৫ হাজার ১৭৪ জন। আর গত ২৪ ঘণ্টায় সারা দেশে এআরইউতে ৯২৯ জন ও ডায়রিয়ায় ১ হাজার ৯৫৮ জনসহ মোট ২ হাজার ৮৮৭ জন আক্রান্ত হয়েছেন।
ডা. আয়শা আক্তার ঢাকা টাইমসকে বলেন, ‘আমাদের কাছে আসা তথ্যে দেখা যাচ্ছে আক্রান্তদের বেশিরভাগই শিশু ও বৃদ্ধ। যেহেতু এই দ্ইু শ্রেণিরই রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম তাই বেশিরভাগ ক্ষেত্রে তীব্র শীতের কারণে শ্বাস-প্রশ্বাসজনিত রোগের খবরই বেশি আসছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘গত ২৪ ঘণ্টায় কোল্ড ডায়রিয়ায় আক্রান্তের সংখ্যাও বেড়েছে অসংখ্যাজনক হারে। আক্রান্তদের বেশিরভাগই আবার নিম্ন আয়ের ও গ্রামের মানুষ। তারাই ঠান্ডাজনিত রোগে বেশি আক্রান্ত হচ্ছেন।’
ঢাকার মুগদা হাসপাতালের জেনারেল ফিজিসিয়ান সুদীপ রঞ্জন দেব ঢাকা টাইমসকে বলেন, ‘শীতের সময়ে শিশুদের ডায়রিয়া ও শ্বাসপ্রশ্বাসজনিত বিভিন্ন রোগসহ জন্ডিস, আমাশয়, চোখের প্রদাহ, চর্মরোগ হয়ে থাকে। তবে কোল্ড ডায়রিয়া ও শ^াসতন্ত্রের ইনফেকশনজনিত সমস্যা বেশ ঝুঁকিপূর্ণ। এই সমস্যায় বিশেষ করে শিশু ও বৃদ্ধরা আক্রান্ত হয়।’
তিনি বলেন, ‘শিশুরা এসময় ঠান্ডা পানি ও ঠান্ডা বাতাসের সঙ্গে খাপ-খাওয়াতে পারে না। তখন বাচ্চাদের টনসিল ফুলে যায়। শীতের সময় বাতাসে জীবাণু বেশি থাকে। বিশেষ করে ভাইরাস বেশি থাকে যা শ্বাসনালির মাধ্যমে দেহে প্রবেশ করে ইনফ্লুয়েঞ্জা ও মামসের মতো রোগের সৃষ্টি করে।’
শিশুদের জন্য বড়দেরও সতর্ক থাকার পরামর্শ দিয়ে এই চিকিৎসক বলেন, ‘অনেক সময় দেখা যায়, বাড়িতে কারো ঠান্ডা লাগলে তারা শিশুদের সামনে হাঁচি বা কাশি দেন। একজন বড় মানুষের হাঁচিতে লাখ লাখ জীবাণু থাকে। যা বাচ্চাদের শ্বাসের মাধ্যমে ঢুকে তাদেরও আক্রান্ত করে ফেলে। এ বিষয়ে বিশেষ সতর্ক থাকতে হবে।’
‘এছাড়া বাইরের খাবার এসময় একদমই খাওয়া উচিত নয়। যেমন চটপটি, ফুচকা, বাইরের পানি, চা-এগুলোতে এই সময় প্রচুর পরিমাণে জীবাণু থাকে যা শীতের সময় মাথাচাড়া দিয়ে উঠে। ফলে খাদ্যে বিষক্রিয়া দেখা দেয়।’
এদিকে সরকারি-বেসরকারি হাসপাতালের শিশু বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের সঙ্গে আলাপকালে জানা যায়, এখন হাসপাতাল কিংবা ব্যক্তিগত চেম্বারে আসা শিশুদের অধিকাংশই এআরআই কিংবা কোল্ড ডায়রিয়ার সমস্যা নিয়ে আসছে।
গতকাল ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালের শিশু বহির্বিভাগ ঘুরে দেখা গেছে, বিভিন্ন এলাকা থেকে ঠান্ডাজনিত রোগে ভোগা শিশুদের নিয়ে অভিভাবকরা হাসপাতালে এসেছেন। তাদের মধ্যে শূন্য থেকে ৮ বছর বয়সি শিশুর সংখ্যাই বেশি। অধিকাংশেরই শ্বাসতন্ত্রের বিভিন্ন ধরনের অসুখে ভুগছে।
ঢামেক হাসপাতালের শিশু বিভাগের আবাসিক চিকিৎসক রাজেশ মজুমদার বলছিলেন, আগে গড়ে দৈনিক ৩৫০ থেকে ৪০০ রোগী আসত। এখন তা কমে ২৫০ থেকে ২৭৫ জন হয়েছে। তবে হাসপাতালে আগের তুলনায় রোগীর সংখ্যা কম হলেও এআরআই ও কোল্ড ডায়রিয়া আক্রান্তের সংখ্যা বেশি। এর মধ্যে নিম্ন আয়ের পরিবারের শিশুরা শ্বাসতন্ত্রের বিভিন্ন ধরনের সমস্যা নিয়ে আসছে।
এদিকে ঢাকার বাইরে উত্তরের শীতপ্রবণ বিভিন্ন জেলায় ঠান্ডাজনিত রোগাক্রান্ত বেশি বলে জানা গেছে। প্রচণ্ড শীতের মধ্যে ডায়রিয়াসহ বিভিন্ন রোগ-বালাই বেড়ে যাওয়ায় এসব জেলার হাসপাতালগুলোতে রোগীদের ভিড় বেড়েছে। হিমশিম খেতে হচ্ছে চিকিৎসকদের।
আবহাওয়া অধিদপ্তর তথ্যমতে, গতকাল ঢাকায় সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয় ১৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস। আর সারাদেশের মধ্যে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়ায় ৬ দশমিক ২। এদিকে আজ থেকে দু-এক দিনের বৃষ্টির পূর্বাভাস দিয়ে রেখেছে আবহাওয়া অফিস। মাঝপৌষের বৃষ্টিতে শীতের মাত্রা আরও বাড়বে বলে জানিয়েছেন আবহাওয়াবিদরা।