জানতে চাইলে বিএনপির স্থায়ী কমিটির একজন সদস্য বলেন, ‘ঢাকা উত্তর, দক্ষিণ ও চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন নির্বাচনে মেয়র পদে বিএনপি কাকে প্রার্থী করবে, তা ঠিক করে রাখা হয়েছিল চলতি বছরের জানুয়ারিতেই।’
এর আগে, ২০১৫ সালের নির্বাচনে ঢাকা উত্তর সিটিতে বিএনপির প্রার্থী ছিলেন তাবিথ আউয়াল। ওই নির্বাচন বিএনপি বর্জন করার পরও তাবিথ আউয়াল ৩ লাখ ২৫ হাজার ৮০টি ভোট পেয়েছিলেন। আর ৪ লাখ ৬০ হাজার ১১৭ ভোট পেয়ে মেয়র নির্বাচিত হয়েছিলেন আনিসুল হক। ফলে, এই সিটিতে বিএনপির প্রার্থী মনোনয়নে কোনও পরিবর্তন হচ্ছে না বলেও দলের একাধিক সূত্র নিশ্চিত করেছে। সূত্রটি জানায়, রবিবার নির্বাচন কমিশন এই দুই সিটি নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা পর দক্ষিণ সিটির প্রার্থী ইশরাক হোসেনকে ফোন করে নির্বাচনের প্রস্তুতি নিতে নির্দেশনা দিয়েছেন তারেক রহমান।
এই বিষয়ে জানতে চাইলে তাবিথ আউয়াল বলেন, ‘আমার প্রস্তুতি সব সময় আছে। এখন নির্বাচন কমিশন আইনি জটিলতাগুলো সম্পন্ন করেছে কিনা, সেটি দেখার বিষয়। আজ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করা হয়েছে। কাল আমি দেশে ফিরবো।’
জানতে চাইলে অবিভক্ত ঢাকার মেয়র প্রয়াত সাদেক হোসেন খোকার ছেলে প্রকৌশলী ইশরাক হোসেন বলেন, ‘আমরা নির্বাচনের প্রস্তুতি আরও আগে থেকেই শুরু হয়েছে। দল থেকে মনোনয়ন দেওয়া হলে আমি নির্বাচনের জন্য প্রস্তুত আছি।’
রবিবার সিটি নির্বাচন নিয়ে দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সঙ্গে কথা হয়েছে কিনা—জানতে চাইলে ইশরাক বলেন, ‘দলের সবার সঙ্গে আমার যোগাযোগ রয়েছে। তারেক রহমানের সঙ্গেও যোগাযোগ হয়।’
ইশরাক হোসেনের ঘনিষ্ঠ এক নেতা বলেন, ‘বিকালে তারেক রহমানের সঙ্গে কথা হয়েছে ইশরাকের। আগে তাকে নির্বাচনের প্রাথমিক প্রস্তুতি নিতে বলেছিলেন তারেক রহমান। আজ তফসিল ঘোষণার পর চূড়ান্তভাবে নির্বাচনের প্রস্তুতি নিতে নির্দেশ দিয়েছেন তিনি।’
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেন, ‘সিটি করপোরেশন নির্বাচনে অংশ নেওয়ার সিদ্ধান্ত দলের রয়েছে।’ দলের প্রার্থী চূড়ান্ত করা হয়েছে কিনা—জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘প্রার্থী চূড়ান্ত করা থাকলেও তো এখন তো প্রকাশ করা হবে না।’
তবে, নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিএনপির স্থায়ী কমিটির এক সদস্য বলেন, ‘ঢাকা উত্তর সিটিতে প্রার্থী তাবিথ আউয়াল, এটি চূড়ান্ত। দক্ষিণে ইশরাক হোসেন—এটাও চূড়ান্ত করা হয়েছে। তবে, এখানে বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব ও ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপির সভাপতি হাবিব-উন-নবী খান সোহেলেরও নির্বাচনে আগ্রহ রয়েছে।’
বিএনপির একটি সূত্র জানায়, সোমবার (২২ ডিসেম্বর) দলের স্থায়ী কমিটির অনানুষ্ঠানিক বৈঠক ডাকা হয়েছে। ওই বৈঠকে সিটি নির্বাচন নিয়ে কয়েকটি কমিটি গঠন করা হবে। এরইমধ্যে সিটি নির্বাচনের ওয়ার্ড কাউন্সিলর প্রার্থী ঠিক করার জন্য একটি কমিটি গঠন করা হবে। আর ঢাকা উত্তর, দক্ষিণ সিটি নির্বাচনে সমন্বয় করার জন্য আলাদা দু’টি কমিটি গঠন করা হবে। এসব কমিটির নেতৃত্বে থাকবেন দলের স্থায়ী কমিটির নেতারা। এরপর মেয়র পদে দলীয় মনোনয়ন ফরম বিক্রির তারিখ ঘোষণা করা হবে। সব আনুষ্ঠানিকতা শেষ করে প্রার্থীদের নাম ঘোষণা দেওয়া হবে।
জানতে চাইলে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সেলিমা রহমান বলেন, ‘নির্বাচনে অংশ নেওয়ার প্রস্তুতি আমাদের রয়েছে। এখন সরকার ও নির্বাচন কমিশন কীভাবে নির্বাচন করে, সেটি দেখার বিষয়।’
কবে দলীয় প্রার্থীদের নাম ঘোষণা করা হবে—জানতে চাইলে সেলিমা রহমান বলেন, ‘আশা করি ২-১ দিনের মধ্যে নির্বাচনের আনুষ্ঠানিকতা কথা শুরু হবে। এরপর মেয়র পদে মনোনয়ন ফরম বিক্রি করা হবে। কাউন্সিলর প্রার্থীদের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। সবকিছু মিলিয়ে কিছুটা সময় লাগবে।’
উল্লেখ্য, রবিবার (২২ ডিসেম্বর) ঢাকার দুই সিটি নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কেএম নূরুল হুদা। ঘোষিত তফসিল অনুযায়ী ৩০ জানুয়ারি দুই সিটির নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। উভয় সিটির নির্বাচনে মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার শেষ সময় ৩১ ডিসেম্বর, বাছাই ২ জানুয়ারি ও প্রত্যাহারের শেষ তারিখ ৯ জানুয়ারি।