আবহাওয়ার পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, মৌসুমের স্বাভাবিক লঘুচাপ দক্ষিণ বঙ্গোপসাগরে অবস্থান করছে এবং এর বর্ধিতাংশ ভারতের পশ্চিমবঙ্গসহ বাংলাদেশের পশ্চিমাংশ পর্যন্ত বিস্তৃত রয়েছে।
হঠাৎ করে শুরু হওয়া শুরু হওয়া শৈত্যপ্রবাহে বিপর্যস্ত জনজীবন। শীতে সবেচেয় বেশি সমস্যা পড়েছেন ছিন্নমূল ও খেটে খাওয়া লোকজন। কুয়াশার সঙ্গে হিমেল হাওয়ায় কষ্ট পাচ্ছেন খেটে খাওয়া সাধারণ মানুষ। কুয়াশা ও তীব্র শীতের কারণে জরুরি কাজ ছাড়া মানুষ ঘরের বাইরে বের হচ্ছে না। এ কারণে অফিস-আদালত, হাট-বাজার ও শহর এলাকায় মানুষের উপস্থিতি কমেছে।তীব্র শীতে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে যশোরের জনজীবন। শুক্রবার যশোরে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল ৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস। তাপমাত্রা আরও কমার আশঙ্কা রয়েছে। হিমেল হাওয়ায় জবুথবু হয়ে পড়েছে মানুষ। শহরের পুরনো মার্কেটগুলোয় শীতের কাপড় বিক্রি বেড়েছে। গত দু’দিন ধরে যশোরে তীব্র শীত অনুভূত হচ্ছে।
শীতে জবুথবু অবস্থা উত্তেরের জেলাগুলোয়। দিনাজপুর আবহাওয়া অফিস জানিয়েছে, হিমালয়ের কাছাকাছি হওয়ায় দিনাজপুরে শীত বেশি অনুভূত হচ্ছে। তাপমাত্রা উঠানামা করছে। তবে তাপমাত্রা আরও কমতে পারে। শুক্রবার তাপমাত্রা ছিল ১০.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস।জেলার বালুবাড়ী এলাকার অটোরিকশা চালক রশিদুল ইসলাম বলেন, ‘প্রচণ্ড শীত, এরপরও অটোরিকশা নিয়ে বের হয়েছি পেটের তাগিদে। কিন্তু রাস্তা একেবারেই ফাঁকা, যাত্রীও পাওয়া যাচ্ছে না।’
কৃষক সিরাজুল ইসলাম বলেন, ‘সামনে বোরো মৌসুম। তাই বীজতলা তৈরির কাজ চলছে। কিন্তু এই শীতে হাত-পা টানটান হয়ে আসছে। কাজ করা যাচ্ছে না, সেই সঙ্গে বাতাস। আমাদের মতো খেটে খাওয়া মানুষের জন্য এটা কষ্টকর মৌসুম।’
কুয়ারশার কারণে নওগাঁও সারা দিন কুয়াশার চাদরে ঢাকা থাকছে। সূর্যের মুখ দেখা যাচ্ছে না। দিনের বেলাতেই গাড়ির হেডলাইট জ্বালিয়ে চলাচলা করছে। দিনে তাপমাত্রা কিছুটা বেশি থাকলেও রাতে শীতের তীব্রতা বাড়ছে। স্থবির হয়ে পড়েছে জনজীবন। কুয়াশা না থাকলেও কনকনে শীতের তীব্রতায় একেবারেই নাজেহাল অবস্থা লোকজনের।আবহাওয়া উপকেন্দ্র সূত্রে জানা গেছে, শুক্রবার নওগাঁর তাপমাত্রা ছিল ১০.৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস।
ভ্যানচালক ইব্রাহীম হোসেন বলেন, ‘কুয়াশা নেই, কিন্তু কনকনে ঠান্ডায় ভ্যান চালানো যাচ্ছে না। দু’দিন থেকে ভ্যান নিয়ে বের হতে পারিনি।’
দিনমজুর সুরুজ মিয়া বলেন, ‘শীতের কারণে আজ দু’দিন থেকে কাজে যেতে পারছি না। সংসার কীভাবে চলবে বুঝতে পারছি না। এভাবে আর দুই-একদিন চললে আমাদের মতো খেটে খাওয়া মানুষের চরম বিপদ হবে।’
চাতাল শ্রমিক আছিয়া বেগম বলেন, ‘রোদ না ওঠায় মিলে কাজ হচ্ছে না। কাজ না হলে বেতনও পাই না। আমরা দিন আনি দিন খাই। এমনি তো শীত তার ওপর হাতে কাজ নাই। শীতে কষ্ট পাচ্ছি। আমাদের খবর কেউ রাখে না।’নওগাঁ সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন, শীতার্ত মানুষের জন্য প্রশাসনের পক্ষ থেকে শনিবার শীতবস্ত্র বিতরণ শুরু হবে।
তাপমাত্রা কমতে থাকায় বগুড়ায়ও শীতের তীব্রতা আরও বেড়েছে। এতে ছিন্নমূল মানুষের দুর্ভোগ বৃদ্ধি পেয়েছে। স্টেশন, রোড ডিভাইডার, টার্মিনালসহ বিভিন্ন খোলা স্থানে বসবাসকারীরা কষ্টে পাচ্ছেন। অনেকে আগুন জ্বালিয়ে শীত নিবারণের চেষ্টা করছেন। শীতবস্ত্রের দোকানগুলোতে ভিড় বেড়েছে।
বগুড়া আবহাওয়া অফিস জানায়, শুক্রবার সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল ১১.৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস। শনিবার পরিস্থিতির উন্নতি হতে পারে।শীতের তীব্রতা বৃদ্ধি পাওয়ায় শহরের হকার্স মার্কেট, সাতমাথাসহ বিভিন্ন স্থানে গরম কাপড় বিক্রি বেড়েছে। দোকানগুলোতে জনগণের উপচে পড়া ভিড় লক্ষ্য করা যাচ্ছে। সুযোগ বুঝে দোকানিরাও কাপড়ের দাম বাড়িয়েছেন।
হিমেল বাতাস ও গুঁড়িগুঁড়ি বৃষ্টির মতো কুয়াশার কারণে জবুথবু অবস্থা গাইবান্ধার লোকজনের। বেশি দুর্ভোগে পড়েছেন চরাঞ্চলের মানুষরা। কুয়াশার কারণে কোথাও সূর্যের মুখ দেখা যায়নি। হিমেল হাওয়া ও শীতের কারণে জেলার মানুষের স্বাভাবিক জীবনযাত্রা ব্যাহত হচ্ছে।
আবহাওয়া অধিদফতরের উপ-পরিচালক একেএম ফেরদৌস বলেন, ‘ঘনকুয়াশার কারণে জেলার বিভিন্ন এলাকার সরিষা ক্ষেতের ফুল ঝরে পড়ছে। আলু ও বোরো ধানের চারা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। এছাড়া অন্যান্য রবি ফসলও ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। কুয়াশা অব্যাহত থাকলে কৃষিতে ব্যাপক ক্ষতির আশঙ্কা করা হচ্ছে।’
কনকনে ঠান্ডা আর ঘনকুয়াশায় জেলার সদর, সুন্দরগঞ্জ, ফুলছড়ি ও সাঘাটা উপজেলার তিস্তা, ব্রহ্মপুত্র নদ-নদীর তীরবর্তী এলাকাসহ চরাঞ্চলের মানুষ বেশি ভোগান্তিতে পড়েছেন। অনেকে খড়খুটা জ্বালিয়ে শীত নিবারণের চেষ্টা করছে। এছাড়া ঘনকুয়াশার কারণে নদীপথে নৌ চলাচল বিঘ্নিত হচ্ছে। দিনের বেলায় কোনও রকমে নৌ চলাচল করলেও সন্ধ্যার পর তা বন্ধ হয়ে যায়। ফলে জেলা শহরসহ বিভিন্ন এলাকায় যাতায়াতের ক্ষেত্রে চরম বিপাকে পড়েছে চরাঞ্চলের মানুষরা।জেলা প্রশাসক আবদুল মতিন জানান, জেলা সদর উপজেলাসহ সাত উপজেলায় কম্বল বিতরণ শুরু করা হয়েছে। এ পর্যন্ত ৫২ হাজার কম্বল বিতরণ করা হয়েছে। আরও ৩০ হাজার কম্বলের জন্য আবেদন করা হয়েছে। এছাড়া বেসরকারি ও সামাজিক সংগঠন এবং জনপ্রতিনিধি ও ব্যক্তি পর্যায়ে শীতার্তদের মাঝে গরম কাপড় বিতরণ করছেন।
Daily Deshjanata দেশ ও জনতার বলিষ্ঠ কণ্ঠস্বর

