২২শে নভেম্বর, ২০২৪ ইং | ৭ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ | রাত ৮:০১

কলেজছাত্রীর আত্মহত্যা : ‘আম্মু মরার পর অনেক ভয় লাগবে, কবরেও জায়গা হবে না’

কুষ্টিয়া প্রতিনিধি : ‘আমাকে স্বাভাবিকভাবেই মাটি দিও। পুলিশরা যেন অন্য সবার মতো আমার লাশকে কষ্ট না দেয়, আমায় যেন স্পর্শ না করে। ও আম্মু আমার যে মরে যাওয়ার পর অনেক ভয় লাগবে, আমার তো কবরে জায়গা হবে না, আমার যে খুব কষ্ট হবে। ক্ষমা করে দিও।’

মঙ্গলবার দুপুরে আত্মহত্যার আগে চিরকুটে কুষ্টিয়া সদর উপজেলার দোয়ারকাদাস আগরওয়াল মহিলা কলেজের ছাত্রী নূপুর বিশ্বাস মায়া (১৭) এ কথাগুলো লিখেছিলেন।

নিহত নূপুর সদর উপজেলার হরিণারায়রপুর এলাকার মাছ ব্যবসায়ী বাবুল হোসেনের মেয়ে।

নূপুর চিরকুটে যা লিখেছেন, ‘আব্বু-আম্মু আমায় ক্ষমা করে দিও। আমি কখনও চাই না আমার জন্য তোমরা কষ্ট পাও। আমি ভালোভাবে পড়াশোনা করতে চেয়েছিলাম, অনেক স্বপ্ন ছিল আমার।

আমি জানি আমাকে নিয়েও অনেক স্বপ্ন ছিল তোমাদের। আমি যে তোমাদের একমাত্র মেয়ে। আমি পৃথিবী থেকে চলে গেলাম। আমায় ক্ষমা করো। আর আমার জন্য একটুও কষ্ট পাবে না। আমি চাই আমার মরাটা (লাশ) যেন স্বাভাবিকভাবে মাটি দেয়া হয়। আত্মহত্যা করলে পুলিশ আসে, তারা যা সব করে (ময়নাতদন্ত) আমার যেন না করা হয়। এভাবে মরে গেলে তো কোথায় যেন পাঠায় লাশ কাটার জন্য। ওটাতে আমার খুব ভয় লাগে।

আমাকে স্বাভাবিকভাবেই মাটি দিও। পুলিশ যেন অন্য সবার মতো আমার লাশকে কষ্ট না দেয়, আমায় যেন স্পর্শ না করে। আমায় ভালোভাবে মাটি দিও। ও আম্মু আমার যে মরে যাওয়ার পর অনেক ভয় লাগবে, আমার তো কবরে জায়গা হবে না, আমার যে খুব কষ্ট হবে। ক্ষমা করে দিও। কলেজের স্যাররা চাইলে হয়তো আমার ভবিষ্যৎ নষ্ট হতো না।’

কলেজের অধ্যক্ষ আসাদুজ্জামান বলেন, কয়েক দিন আগে এইচএসসি পরীক্ষার্থীদের চূড়ান্ত পরীক্ষার রেজাল্ট দেয়া হয়। এতে চারটি বিষয়ে ফেল করে মানবিক বিভাগের ছাত্রী নূপুর খাতুন। এর আগে সে দুই বিষয়ে ফেল করেছে বলে বাড়িতে জানায়।

তাই তার মা তাকে সঙ্গে নিয়ে মঙ্গলবার দুপুরে কলেজে আসে। এ সময় তার শিক্ষকরা জানান, চারটি বিষয়ে নূপুর ফেল করেছে। এর পর মা তাকে কিছুটা বকা দেয়।

এ সময় নূপুরের কথাবার্তা অসংলগ্ন ছিল। মেয়েটি সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে কথা বলতে পারছিল না। কথা বলতে বলতেই মাটিতে পড়ে যায় নূপুর। এ সময় তার কাছে থাকা একটি কাচের বোতল হাত থেকে ছিটকে পড়ে।

ধারণা করা হচ্ছে, ওই বোতলে বিষাক্ত কিছু নিয়ে এসেছিল মেয়েটি। এর পর কলেজের কয়েকজন শিক্ষক তাকে উদ্ধার করে স্থানীয় চিকিৎসকের কাছে নিয়ে যান। তবে কলেজে আসার আগেই নূপুর বিষপান করে।

কলেজের শিক্ষক সেলিম জানান, স্থানীয় চিকিৎসকরা তাকে কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করান। তবে হাসপাতালে নেয়ার পথেই মারা যায় নূপুর।

নূপুরের মা লাভলী খাতুন বলেন, বাড়ি থেকে স্বাভাবিকভাবে আমার মেয়ে স্কুলে যায়। কলেজে যাওয়ার পর সে আর সোজা হয়ে দাঁড়াতে পারছিল না। কথা বলতে বলতেই মাটিতে পড়ে যায়। কলেজে যাওয়ার আগেই বিষপান করে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

নূপুরের বাবা বাবুল আহমেদ জানান, মেয়েটা আমার অভিমানী। নির্বাচনী পরীক্ষায় অকৃতকার্য হওয়ার কারণেই হয়তো অভিমানে বিষপান করেছে।

কুষ্টিয়া ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় থানার এসআই আরিফ বলেন, মৃত্যুর আগে নূপুর একটি পত্র লিখে যায়। কারও কোনো অভিযোগ ছিল না। জেলা প্রশাসকের অনুমতি নিয়ে ময়নাতদন্ত ছাড়া পরিবারের সম্মতিতে মরদেহ দাফন করা হয়েছে।

প্রকাশ :ডিসেম্বর ১১, ২০১৯ ১:১৭ অপরাহ্ণ