সরকারি গাড়ি অপব্যবহার রোধে কড়াকড়ি আরোপ করেছে জনপ্রশাসন মন্ত্রনালয়। এলক্ষ্যে মন্ত্রণালয় থেকে তিনটি নির্দেশনা জারি করা হয়েছে।
এসব নির্দেশনা প্রতিপালন হচ্ছে কিনা তা মনিটরিং করে দায়িদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে বলা হয়েছে। এখন পর্যন্ত সুদমুক্ত সুবিধায় প্রায় ৪ হাজার কর্মকর্তা গাড়ি কেনার সুবিধা নিয়েছেন।
সূত্র জানায়, কর্মকর্তাদের বিশেষ সুবিধায় যানবাহন ক্রয়ের সুযোগ দেওয়া হয়েছে। এরপরও যানবাহন খাতে রাষ্ট্রের অর্থব্যয় সাশ্রয় না হওয়ায় জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় উদ্বিগ্ন।
সম্প্রতি জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের উপসচিব মো. শরীফুল ইসলাম স্বাক্ষরিত প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে, কর্মকর্তারা সুদমুক্ত ঋণের গাড়ির যথাযথভাবে নীতিমালা অনুসরণ না করে রক্ষণাবেক্ষণ ব্যয় বাবদ ২৫ হাজার টাকার পরিবর্তে ৫০ হাজার টাকা উত্তোলন করেছেন। এতে সরকারের ব্যাপক আর্থিক ক্ষতি হচ্ছে।
জানা গেছে, বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের বেশিরভাগ কর্মকর্তারা আগের মতো মন্ত্রণালয় ও দপ্তর-সংস্থার গাড়ি ব্যবহার করছেন। কেউ কেউ প্রকল্পের দামি গাড়ি ব্যবহার করছেন। ফলে অধিকাংশ মন্ত্রণালয় ও বিভাগে গাড়ি রক্ষণাবেক্ষণ ও জ্বালানি ব্যয় আগের তুলনায় অনেক বেড়ে গেছে। খোদ জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ও এ অনিয়মের বাইরে নয়। এখানকার যেসব কর্মকর্তা ঋণ সুবিধায় গাড়ি কিনেছেন, তাদের অনেকে মন্ত্রণালয়ের গাড়ি ব্যবহার করছেন।
এছাড়া জ্বালানি তেলও নিচ্ছেন তারা। একজন অতিরিক্ত সচিব ৬৭ দিনে জ্বালানি নিয়েছেন ৮৪৪ লিটার, যা অস্বাভাবিক। জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সুদমুক্ত ঋণের অর্থে ক্রয়কৃত গাড়ি এবং সরকারি যানবাহন অপব্যবহার রোধকল্পে তিনটি নির্দেশনা রয়েছে। প্রাধিকারপ্রাপ্ত সরকারি কর্মকর্তাদের সুদমুক্ত বিশেষ অগ্রিম এবং গাড়ি সেবা নগদায়ন নীতিমালার নীতি ১০ ও ১৬ অনুযায়ী শতভাগ রক্ষণাবেক্ষণ ব্যয় নেওয়ার ক্ষেত্রে সুদমুক্ত ঋণের অর্থে ক্রয়কৃত গাড়ি ব্যবহার করতে হবে।
এ ক্ষেত্রে সরকারি/ অধীনস্থ দপ্তর/সংস্থার যানবাহন ব্যবহার করা যাবে না। প্রেষণ বা মাঠ প্রশাসনে বা প্রকল্পের কোনো কর্মকর্তার সার্বক্ষণিক সরকারি যানবাহন ব্যবহারের সুবিধা থাকলে সুদমুক্ত ঋণের অর্থে ক্রয়কৃত গাড়ির রক্ষণাবেক্ষণ ব্যয় বাবদ নির্ধারিত অর্থেও ৫০ শতাংশ প্রাপ্য হবেন।
এছাড়া. কর্মস্থলে যাতায়াতের ক্ষেত্রে সুদমুক্ত ঋণের অর্থে ক্রয়কৃত গাড়ি ব্যবহার করতে হবে। এ ক্ষেত্রে সরকারি বা অধীনস্থ দপ্তর বা সংস্থার যানবাহন ব্যবহার করা বিধিসম্মত নয়।
যুগ্ম সচিব থেকে তদূর্ধ্ব পদমর্যাদার কর্মকর্তারা ২০১১ সাল থেকে গাড়ি কেনার ঋণ সুবিধা পাচ্ছেন। পরবর্তী সময়ে উপসচিব পদমর্যাদার কর্মকর্তাদেরও এ সুবিধার আওতায় আনা হয়।
নির্দিষ্ট হারে অপচয় বাদ দিয়ে একজন কর্মকর্তাকে শেষ পর্যন্ত ঋণ পরিশোধ করতে হবে ১০-১২ লাখ টাকা। তাছাড়া গাড়ির চালক ও রক্ষণাবেক্ষণ ব্যয় হিসেবে প্রতি মাসে অতিরিক্ত ৫০ হাজার টাকা ভাতা দেয়া হয়। নীতিমালা অনুসরণ করে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের পরিবহন শাখা থেকে এ ঋণ সুবিধা দেয়া হয়।
সরকারি পরিবহন পুল ও গাড়িচালকদের কয়েকটি সূত্র জানায়, জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের এপিডি উইংয়ের একজন উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা ঋণ সুবিধায় সরকারি গাড়ি নেয়ার পরও দিব্যি ফুলটাইম সরকারি গাড়ি ব্যবহার করছেন। তার ব্যবহৃত সরকারি গাড়িতে গত ৪ জুলাই থেকে ৮ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ৮৪৪ লিটার অকটেন নেয়া হয়েছে।এই জ্বালানি তেল নেয়া হয় রাজধানীর শাহবাগের মেঘনা পেট্রোলিয়াম পাম্প থেকে।
জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, যারা গাড়ি কেনার ঋণ সুবিধা পেয়েছেন, তারা অফিসে আসা-যাওয়ার ক্ষেত্রে সরকারি গাড়ি ব্যবহার করতে পারবেন না। তবে সরকারি কাজে কোনো কর্মকর্তাকে যদি দূরে যেতে হয়, তাহলে তিনি রিকুইজিশন দিয়ে গাড়ি নিতে পারবেন।
সূত্র জানায়, এসব গাড়ি যারা ব্যবহার করেন, এভাবে জ্বালানি তেল নিয়েছেন, তাদের প্রত্যেকে সরকারি ঋণ সুবিধায় প্রাইভেট কার কিনেছেন। এছাড়া একইভাবে যেসব কর্মকর্তা অফিসে আসা-যাওয়ার জন্য মন্ত্রণালয়ের মাইক্রোবাস ব্যবহার করছেন, তাদের মধ্যে বেশকজন ঋণ সুবিধায় গাড়ি কিনেছেন।
ঋণ সুবিধায় কেনা প্রাইভেট কার বেশিরভাগ কর্মকর্তা অফিসে যাতায়াতের কাজে ব্যবহার করছেন না। সেটি ব্যবহৃত হচ্ছে বাসাবাড়ির কাজে। কেউ আবার বিশেষ প্রয়োজন ছাড়া ব্যবহার করেন না। অনেকে অফিসের সরকারি চালক দিয়ে মাঝেমধ্যে ব্যক্তিগত গাড়ি সচল রাখেন।
তবে পাশাপাশি এটিও সত্য যে, সৎ ও নীতিবান কর্মকর্তাদের অনেকে সুযোগ থাকা সত্ত্বেও সরকারি গাড়ি ব্যবহার করেন না। ঋণ সুবিধায় গাড়ি কেনার পর থেকে তারা সেই গাড়ি ব্যবহার করছেন।
এমন কর্মকর্তাদের কয়েকজন বলেন, এভাবে যারা ক্ষমতার অপব্যবহার করছেন তারা প্রকারান্তরে দুর্নীতিই করছেন। কেননা, ঋণ সুবিধায় গাড়ি কেনার পর এভাবে সরকারি গাড়ি ব্যবহার করার কোনো নৈতিক অধিকার থাকে না। এটা সরকারি নীতিমালা বিরুদ্ধও বটে।