বাংলাদেশ ব্যাংক বলছে, গত আগস্টে রাজস্ব আয়ের প্রবৃদ্ধি হয়েছে মাইনাস ৫ দশমিক ০৮ শতাংশ। ২০১৮ সালের আগস্টে রাজস্ব আয় হয়েছিল ১৪ হাজার ৯৪৮ কোটি ৫২ লাখ টাকা। ২০১৯ সালের আগস্টে রাজস্ব আয় হয়েছে ১৪ হাজার ১৮৯ কোটি ৬২ লাখ টাকা। অর্থাৎ গত বছরের আগস্টের চেয়ে এই বছরের আগস্টে রাজস্ব আয় কমেছে ৭৫৮ কোটি টাকা।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, চলতি অর্থবছরের প্রথম চার মাস অর্থাৎ জুলাই-অক্টোবরে এনবিআরের রাজস্ব ঘাটতি দাঁড়িয়েছে ২০ হাজার ২২০ কোটি ৭৫ লাখ টাকা। সরকারের ঘোষিত বাজেট বাস্তবায়ন করতে হলে এই অর্থবছরে এনবিআরকে সার্বিকভাবে প্রায় ৪৫ শতাংশ হারে প্রবৃদ্ধি অর্জন করতে হবে। অথচ চার মাসে প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৪ শতাংশের কিছু বেশি। এই সময়ে আয়কর, শুল্ক ও মূল্য সংযোজন কর (মূসক) বা ভ্যাট—কোনও খাতেই লক্ষ্য অর্জিত হয়নি।
প্রসঙ্গত, চলতি অর্থবছরে সোয়া ৫ লাখ কোটি টাকার বাজেট পাস হয়েছে। এই বাজেট বাস্তবায়নে এনবিআরকে ৩ লাখ ২৫ হাজার ৬০০ কোটি টাকার রাজস্ব আদায় করতে হবে।
এ প্রসঙ্গে বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক আহসান এইচ মনসুর বলেন, ‘এনবিআরের কালেকশন দেখে মনে হচ্ছে, জনগণ সরকারকে কর দিতে চায় না। আবার ব্যবসায়ীরাও সরকারকে ভ্যাট দিচ্ছে না।’ তার মতে, সামগ্রিকভাবে দেশের অর্থনীতির পরিস্থিতিই ভালো নয়। এমন পরিস্থিতিতে রাজস্ব আহরণ কমে আসারই কথা। তিনি বলেন, যেভাবে রাজস্ব আহরণ কমছে, এভাবে চলতে থাকলে ব্যাংক থেকে টাকা নিয়েই সরকারকে চলতে হবে। আর এভাবে চলতে থাকলে বেসরকারি খাত ঋণ পাবে না।
বাংলাদেশ ব্যাংকের হিসাব বলছে, আগস্টের পর সেপ্টেম্বরেও রাজস্ব আয়ের চিত্র ভালো নয়। আগের বছরের একই সময়ের চেয়ে এই মাসে রাজস্ব আয়ের প্রবৃদ্ধি হয়েছে মাত্র ১ দশমিক ৫২ শতাংশ। যদিও ২০১৮ সালের সেপ্টেম্বরে আগের বছরের একই সময়ের চেয়ে রাজস্ব আয়ের প্রবৃদ্ধি হয়েছিল ১৩ দশমিক ০৫ শতাংশ। ২০১৭ সালের একই সময়ে প্রবৃদ্ধি হয়েছিল ১৫ দশমিক ০৫ শতাংশ। ২০১৬ সালের সেপ্টেম্বরে আগের বছরের একই সময়ের চেয়ে রাজস্ব আয়ের প্রবৃদ্ধি হয়েছিল ১২ দশমিক ৯৬ শতাংশ।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য বলছে, ২০১৯ সালের সেপ্টেম্বরে রাজস্ব আয় হয়েছে ১৭ হাজার ৭৮৫ কোটি ৬৩ লাখ টাকা। পরের মাস অক্টোবরে আয় হয়েছে ১৭ হাজার ৭০৮ কোটি ৩৯ লাখ টাকা। অর্থাৎ সেপ্টেম্বরের চেয়ে অক্টোবরে আয় কমেছে প্রায় ৭৮ কোটি টাকা।
এনবিআরের তথ্যমতে, জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) রাজস্ব আয়ের প্রধান তিন খাতেই আদায় কমেছে। খাত তিনটি হলো—আমদানি ও রফতানি পর্যায়ে শুল্ক-কর, স্থানীয় পর্যায়ে ভ্যাট এবং আয়কর ও ভ্রমণ।
এ প্রসঙ্গে এনবিআর চেয়ারম্যান মো. মোশাররফ হোসেন ভূঁইয়া বলেন, টার্গেটের চেয়ে এখন কিছুটা ঘাটতি থাকলেও বছর শেষে লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে সক্ষম হবে এনবিআর। তিনি বলেন, টিআইএনধারী সবাই যাতে আয়কর রিটার্ন দাখিল করে, তারা সেই উদ্যোগ নিচ্ছেন। একইভাবে ভ্যাটের ক্ষেত্রেও বছর শেষে লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে এনবিআর সক্ষম হবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন।
এনবিআরের হিসাবে, জুলাই থেকে অক্টোবর—এই চার মাসে সার্বিকভাবে রাজস্ব আয়ের প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৪ দশমিক ৩৩ শতাংশ। আগের বছরের একই সময়ে রাজস্ব আয়ের প্রবৃদ্ধি হয় ৬ দশমিক ৭৪ শতাংশ। এই অর্থবছরের প্রথম চার মাসে রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্য ছিল ৮৫ হাজার ৩১৭ কোটি ২১ লাখ টাকা, অথচ আদায় হয়েছে ৬৫ হাজার ৯৬ কোটি ৪৬ লাখ টাকা। আর ভ্যাট আদায়ে লক্ষ্যের চেয়ে ঘাটতি হয়েছে ৮ হাজার ২৫৮ কোটি টাকা। এই খাতে আদায় হয়েছে ২৪ হাজার ৭৫১ কোটি টাকা।
অন্যদিকে আমদানি ও রফতানিতে চলতি অর্থবছরের প্রথম চার মাসে গতবারের একই সময়ের প্রায় সমান রাজস্ব আদায় হয়েছে। এই খাতে ঘাটতি হয়েছে ৭ হাজার ৭৯৯ কোটি টাকা। এই সময়ে ২৮ হাজার ৪৪৮ কোটি টাকার লক্ষ্যের বিপরীতে আদায় হয়েছে ২০ হাজার ৬৪৯ কোটি টাকা। আয়কর ও ভ্রমণ খাতে জুলাই-অক্টোবর সময়ে ঘাটতি হয়েছে ৪ হাজার ১৬৩ কোটি টাকা। এই খাতে ২৩ হাজার ৮৫৮ কোটি টাকা লক্ষ্যের বিপরীতে আদায় হয়েছে ১৯ হাজার ৬৯৫ কোটি টাকা।