রবিবার নেদারল্যান্ডসের উদ্দেশে দেশ ছাড়ার সময় রাজধানী নেপিদোর বিমানবন্দরে সু চি-কে হাস্যোজ্জ্বল অবস্থায় দেখা যায়। এ সময় দেশটির কর্মকর্তারা তার সঙ্গে ছিলেন।
আগের দিন শনিবার নেপিদো-তে সু চি-র সমর্থনে হাজার হাজার মানুষের এক বিশাল বিক্ষোভ অনুষ্ঠিত হয়। তার জন্য প্রার্থনা অনুষ্ঠানেও হাজির হয় বিপুল সংখ্যক বর্মি নাগরিক। আগামী ১০-১২ ডিসেম্বর মামলার শুনানিকালে ফের এ ধরনের বিক্ষোভের প্রস্তুতি নিয়েছে সু চি-র সমর্থকরা।.
মামলায় পূর্ণাঙ্গ শুনানির আগে রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর সুরক্ষায় আপাত ব্যবস্থা নিতে জাতিসংঘের ১৬ সদস্যের বিচারক প্যানেলের প্রতি আহ্বান জানাবে পশ্চিম আফ্রিকার দেশ গাম্বিয়া।
এদিকে এই বিচারিক প্রক্রিয়া শুরুর আগ মুহূর্তে মিয়ানমারের প্রধান পৃষ্ঠপোষক হিসেবে পরিচিত চীনা পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়াং ই-কে আমন্ত্রণ জানায় বার্মিজ কর্তৃপক্ষ। দুই দিনের সফরে শনিবার নেপিদো পৌঁছান তিনি। নেদারল্যান্ডসে যাত্রার আগে চীনা মন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠক করেন সু চি। বৈঠকে উভয়েই দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক আরও জোরদার করার অঙ্গীকার ব্যক্ত করেন।
সর্বশেষ ২০১৬ সালে পশ্চিম ইউরোপ সফরে গিয়েছিলেন মিয়ানমারের রাষ্ট্রীয় উপদেষ্টা অং সান সু চি। অর্ধ-শতাব্দীর সামরিক শাসনের অবসান ঘটিয়ে সাধারণ নির্বাচনে জয়ী হওয়ার পর তিনি সেখানে গিয়েছিলেন গণতন্ত্রের পতাকা হাতে। ৩ বছরের ব্যবধানে এবার তিনি ইউরোপে যাচ্ছেন গণহত্যার অভিযোগ মাথায় নিয়ে। যে সামরিক বাহিনীর বিরুদ্ধে সংগ্রাম করে তিনি দুনিয়াব্যাপী নন্দিত হয়েছিলেন, এবার তার ইউরোপ সফরের উদ্দেশ্য তাদের গণহত্যার পক্ষে সাফাই গাওয়া। ব্রিটিশ বার্তা সংস্থা রয়টার্সের এক বিশ্লেষণে বলা হয়েছে, মিয়ানমারের আসন্ন নির্বাচনকে সামনে রেখে ‘রাজনৈতিক স্বার্থ হাসিল’ করতেই নেদারল্যান্ডসের হেগ-এ যাচ্ছেন তিনি।.
জাতিসংঘসহ বিভিন্ন মানবাধিকার সংগঠন ইতোমধ্যে রোহিঙ্গা নিধনের ঘটনায় গণহত্যার আলামত খুঁজে পেয়েছে। তবে এসব অভিযোগ অস্বীকার করে আসছে মিয়ানমারের সেনাবাহিনী। সু চি-ও গণহত্যাকে আড়াল করার চেষ্টা করেছেন। তার কার্যালয় সূত্র জানিয়েছে, ‘জাতীয় স্বার্থ রক্ষায়’ আগামী ১০ ডিসেম্বর গাম্বিয়ার দায়েরকৃত মামলার প্রথম শুনানিতে অংশ নেবেন তিনি। সু চির দল ন্যাশনাল লিগ ফর ডেমোক্রেসি পার্টির মুখপাত্র মিও নায়ান্ট বলেছেন, ‘মিয়ানমার ও আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের মধ্যে মতপার্থক্য রয়েছে। রাখাইনের উত্তরাঞ্চলে আসলে কী ঘটেছিল, জাতিসংঘের আদালতে তার ব্যাখ্যা দেবেন রাষ্ট্রীয় উপদেষ্টা।’
রয়টার্সের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, মামলার শুনানিতে মিয়ানমারের প্রতিনিধি দলের নেতৃত্বে সু চি থাকায় অনেকেই অবাক হয়েছেন। আন্তর্জাতিক অঙ্গনে শক্তিশালী যোগাযোগ রয়েছে সু চি-র এমন ঘনিষ্ঠজনরা এতে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। তারা বলছে, এতে করে বিদেশে তার ভাবমূর্তি আরও ক্ষুণ্ন হতে পারে। তবে মিয়ানমারের বাস্তবতা একেবারেই উল্টো। সু চি-র সমর্থনে বিশাল মিছিল হয়েছে সেখানে। ইন্টারন্যাশনাল ক্রাইসিস গ্রুপে নিযুক্ত মিয়ানমারের পরামর্শক রিচার্ড হর্সে রয়টার্সকে বলেন, ‘মিয়ানমারের অধিকাংশ মানুষ রোহিঙ্গা গণহত্যার অভিযোগকে পক্ষপাতমূলক ও রাজনৈতিকভাবে প্রভাবিত বলে মনে করে। আর এর বিরুদ্ধে জাতীয় স্বার্থ রক্ষায় সর্বোচ্চ ভূমিকা নেওয়া উচিত বলে মনে করেন সু চি।’.
উল্লেখ্য, প্রজন্মের পর প্রজন্ম ধরে রোহিঙ্গারা রাখাইনে থাকলেও মিয়ানমার তাদের নাগরিক বলে স্বীকার করে না। সেনাবাহিনীর পাশাপাশি বেসামরিক সরকার প্রধান সু চি-ও ‘রোহিঙ্গা’ শব্দটি ব্যবহারই করেন না। বরং তাদের ‘বাংলাদেশ থেকে যাওয়া সন্ত্রাসী’ হিসেবে আখ্যা দেয় তারা। এখনও সু চি-র দলের মুখপাত্র মিও নায়ান্ট বলছেন, এই ‘বাঙালিদের’ চলে যাওয়ার বিষয়টি আলাদা। সূত্র: রয়টার্স।