দেশজনতা অনলাইন : বাংলাদেশে লিঙ্গভিত্তিক সহিংসতার শিকার প্রধানত নারীরাই। অধিকারকর্মীরা বলছেন, ৯৬ শতাংশ নারী লিঙ্গভিত্তিক সহিংসতার শিকার হলেও ন্যায়বিচার নিশ্চিত করা যায়নি। তাদের মতে, যেহেতু এই সহিংসতার শিকার নারী-পুরুষ উভয়ই হতে পারে এর প্রতিকারের বিষয়গুলোও আমাদের সমাজে নতুন এবং চ্যালেঞ্জিং।
তারা শঙ্কা প্রকাশ করে বলেন, আমাদের এখানে পুরুষদের নির্যাতনের ঘটনা নারীর তুলনায় কম এবং এ ধরনের ঘটনা ঘটলেও বেশিরভাগ ক্ষেত্রে সেগুলো প্রকাশ হয় না। এ কারণে প্রকৃত সংখ্যা জানার বিষয়টি বাধাগ্রস্ত হচ্ছে।
বাংলাদেশ নারী প্রগতি সংঘ (বিএনপিএস) ২০১৭ সালে ‘গণমাধ্যমে নারী: লিঙ্গভিত্তিক সহিংসতানির্ভর আধেয় সমীক্ষা’ শীর্ষক গবেষণায় দেখিয়েছে, দেশে নারীরাই লিঙ্গভিত্তিক সহিংসতার প্রধান শিকার যার হার ৯৬ শতাংশ। একই সঙ্গে এ ধরনের সহিংসতার শিকার নারী কিংবা যিনি অভিযুক্ত দুই পক্ষেরই বড় অংশের বয়স ১৯ থেকে ৩৪ বছর।
অ্যাসিড সারভাইভার ফাউন্ডেশনের গবেষণা বলছে, গত এক দশকে অ্যাসিডসহ অন্যান্য সহিংসতা যেমন ধর্ষণ, যৌন নির্যাতন, বাল্যবিয়ে ও অন্যান্য দগ্ধ সহিংসতার ট্রেন্ড বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, অ্যাসিড সহিংসতা কমলেও নারী ও শিশুর প্রতি অন্যান্য লিঙ্গভিত্তিক সহিংসতা বেড়েছে।
লিঙ্গভিত্তিক সহিংসতা নারীর প্রতি সহিংসতা থেকে কোন জায়গায় ভিন্ন বলতে গিয়ে নারীনেত্রীরা বলছেন, কেবল লৈঙ্গিক (নারী বা পুরুষ) বৈষম্যের কারণে যে সহিংসতা যাকে লিঙ্গভিত্তিক সহিংসতা বলা হয় এর শিকার নারী ও পুরুষ উভয়ই হতে পারে। বিশ্লেষকরা নারীর প্রতি সহিংসতা থেকে এই সহিংসতার ধরনকে একটু আলাদা করে দেখার কথা বলেন। তাদের মতে, এটি একই সঙ্গে পৃথক ধারণা। এ সহিংসতার ধরনের চেয়ে এর ভিন্নতা ভিকটিমের ধরনে।
সাম্প্রতিক এক জরিপ বলছে, পাবলিক প্লেসে ৯৭ দশমিক ৯৬ শতাংশ নারী ও কন্যাশিশু এক থেকে একাধিকবার যৌন হয়রানির শিকার হন। ৫৯ দশমিক ৪৫ শতাংশ নারী ১১ থেকে ১৭ বছর বয়সের মধ্যেই জীবনে প্রথমবারের মতো যৌন হয়রানির অভিজ্ঞতার সম্মুখীন হয়েছেন বলে জানিয়েছেন। ৫ দশমিক ৪৭ শতাংশ নারী ৬ বছর বয়সের আগেই এবং ১৫ দশমিক ২৬ শতাংশ নারী ১০ বছরের আগেই জীবনে প্রথম যৌন হয়রানির শিকার হয়েছিলেন বলে জরিপে উঠে এসেছে।
এ পরিস্থিতি থেকে বেরিয়ে আসতে চাইলে পুরুষতান্ত্রিক সমাজে নারীকে যেভাবে দেখা হয় সেই দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তন আনতে হবে মন্তব্য করে অধিকারকর্মীরা বলছেন, একই সঙ্গে ঘটনার সঙ্গে জড়িত অপরাধীদেরও বিচার নিশ্চিত করতে হবে। তা না হলে নারী নিপীড়নের ঘটনা আরও বাড়বে। লিঙ্গভিত্তিক সহিংসতা কোনগুলো এ প্রশ্নে নারী অধিকার কর্মীরা বলছেন- ধর্ষণ, শারীরিক নির্যাতন, অ্যাসিড নিক্ষেপ, গৃহকর্মী নির্যাতন, যৌতুক ও নারী পাচারের মতো ঘটনাগুলো লিঙ্গভিত্তিক সহিংসতা। গবেষণা বলছে, এ ধরনের সহিংসতার শিকার আমাদের দেশে প্রধানত নারীরাই।
ব্র্যাকের জেন্ডার জাস্টিস অ্যান্ড ডাইভার্সিটি প্রকল্পের সেলিনা আহমেদ লিঙ্গভিত্তিক সহিংসতার বিষয়টি স্পষ্ট করে বলেন, ‘যখন ব্যক্তি তার লৈঙ্গিক ভূমিকা ও পরিচয়ের কারণে ভিকটিম হয় তখন সেটাকে লিঙ্গভিত্তিক সহিংসতা বলা হয়। এক্ষেত্রে নারী ও পুরুষ উভয়ই ভিকটিম হতে পারে। নারীর প্রতি সহিংসতা ও লিঙ্গভিত্তিক সহিংসতা এই জায়গায় একেবারেই পৃথক আইডেনটিটি।’
নারী অধিকারকর্মী খুশী কবীর মনে করেন, ‘নারীর প্রতি সহিংসতাকে লিঙ্গভিত্তিক সহিংসতা শব্দটি দিয়ে প্রতিস্থাপন করা হয়েছে তা নয়, বরং নারীর প্রতি সহিংসতা নিয়ে আমরা যারা কাজ করছি তাদের কাজের পরিসর আরও বেড়ে যায় যখন লিঙ্গভিত্তিক সহিংসতা বলছি। স্পষ্ট করে বলতে হলে, নারীর প্রতি সহিংসতা বিষয়টিকে এককভাবে দেখার এখন আর সুযোগ নেই। যখন নারীর অধিকার নিয়ে কাজ শুরু হয় তখন দৃষ্টিভঙ্গি অন্য রকম ছিল। কিন্তু এরপর রাজন রাকীবের যৌন নির্যাতন নিপীড়নের ঘটনাগুলো আমাদের আরেকটু দায়িত্বশীল হতে শেখায়। একেক জনের লৈঙ্গিক পার্থক্যকে সমান মর্যাদা হয়তো আগে দেওয়া হতো না। কিন্তু হিজড়া জনগোষ্ঠীসহ লৈঙ্গিক পার্থক্য ধারণ করে এমন অনেক নির্যাতনের শিকারদের দেখে মনে হয়েছে, নারীর প্রতি সহিংসতার সঙ্গে লিঙ্গভিত্তিক সহিংসতা বিষয়টি যুক্ত করে নেওয়া দরকার।’
আইন ও সালিশ কেন্দ্রের নির্বাহী পরিচালক শীপা হাফিজা বলেন, গত ১০ বছরে বাংলাদেশে ১০ হাজারের বেশি ধর্ষণের ঘটনা ঘটেছে। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে ধর্ষণের শিকার ন্যায়বিচার পাচ্ছে না। অধিকাংশ ক্ষেত্রে আমরা দেখেছি, সুবিধাবঞ্চিতরা বিচারহীনতার শিকার হন। এ পরিস্থিতিগুলো ঘটছে ক্ষমতা কাঠামোর মধ্যে।
তিনি বলেন, ‘একবিংশ শতকে এসে আমরা বলছি, লৈঙ্গিক পরিচয়কেন্দ্রিক যে সহিংসতাগুলোর শিকার হতে হয় নারীকে সেগুলোকে চিহ্নিত করার কথা। যখন কিনা একজন পুরুষও এ ধরনের ঘটনার শিকার হতে পারে তখন তার প্রতিকারের কথা বলতে হবে।’
তারা শঙ্কা প্রকাশ করে বলেন, আমাদের এখানে পুরুষদের নির্যাতনের ঘটনা নারীর তুলনায় কম এবং এ ধরনের ঘটনা ঘটলেও বেশিরভাগ ক্ষেত্রে সেগুলো প্রকাশ হয় না। এ কারণে প্রকৃত সংখ্যা জানার বিষয়টি বাধাগ্রস্ত হচ্ছে।
বাংলাদেশ নারী প্রগতি সংঘ (বিএনপিএস) ২০১৭ সালে ‘গণমাধ্যমে নারী: লিঙ্গভিত্তিক সহিংসতানির্ভর আধেয় সমীক্ষা’ শীর্ষক গবেষণায় দেখিয়েছে, দেশে নারীরাই লিঙ্গভিত্তিক সহিংসতার প্রধান শিকার যার হার ৯৬ শতাংশ। একই সঙ্গে এ ধরনের সহিংসতার শিকার নারী কিংবা যিনি অভিযুক্ত দুই পক্ষেরই বড় অংশের বয়স ১৯ থেকে ৩৪ বছর।
অ্যাসিড সারভাইভার ফাউন্ডেশনের গবেষণা বলছে, গত এক দশকে অ্যাসিডসহ অন্যান্য সহিংসতা যেমন ধর্ষণ, যৌন নির্যাতন, বাল্যবিয়ে ও অন্যান্য দগ্ধ সহিংসতার ট্রেন্ড বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, অ্যাসিড সহিংসতা কমলেও নারী ও শিশুর প্রতি অন্যান্য লিঙ্গভিত্তিক সহিংসতা বেড়েছে।
লিঙ্গভিত্তিক সহিংসতা নারীর প্রতি সহিংসতা থেকে কোন জায়গায় ভিন্ন বলতে গিয়ে নারীনেত্রীরা বলছেন, কেবল লৈঙ্গিক (নারী বা পুরুষ) বৈষম্যের কারণে যে সহিংসতা যাকে লিঙ্গভিত্তিক সহিংসতা বলা হয় এর শিকার নারী ও পুরুষ উভয়ই হতে পারে। বিশ্লেষকরা নারীর প্রতি সহিংসতা থেকে এই সহিংসতার ধরনকে একটু আলাদা করে দেখার কথা বলেন। তাদের মতে, এটি একই সঙ্গে পৃথক ধারণা। এ সহিংসতার ধরনের চেয়ে এর ভিন্নতা ভিকটিমের ধরনে।
সাম্প্রতিক এক জরিপ বলছে, পাবলিক প্লেসে ৯৭ দশমিক ৯৬ শতাংশ নারী ও কন্যাশিশু এক থেকে একাধিকবার যৌন হয়রানির শিকার হন। ৫৯ দশমিক ৪৫ শতাংশ নারী ১১ থেকে ১৭ বছর বয়সের মধ্যেই জীবনে প্রথমবারের মতো যৌন হয়রানির অভিজ্ঞতার সম্মুখীন হয়েছেন বলে জানিয়েছেন। ৫ দশমিক ৪৭ শতাংশ নারী ৬ বছর বয়সের আগেই এবং ১৫ দশমিক ২৬ শতাংশ নারী ১০ বছরের আগেই জীবনে প্রথম যৌন হয়রানির শিকার হয়েছিলেন বলে জরিপে উঠে এসেছে।
এ পরিস্থিতি থেকে বেরিয়ে আসতে চাইলে পুরুষতান্ত্রিক সমাজে নারীকে যেভাবে দেখা হয় সেই দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তন আনতে হবে মন্তব্য করে অধিকারকর্মীরা বলছেন, একই সঙ্গে ঘটনার সঙ্গে জড়িত অপরাধীদেরও বিচার নিশ্চিত করতে হবে। তা না হলে নারী নিপীড়নের ঘটনা আরও বাড়বে। লিঙ্গভিত্তিক সহিংসতা কোনগুলো এ প্রশ্নে নারী অধিকার কর্মীরা বলছেন- ধর্ষণ, শারীরিক নির্যাতন, অ্যাসিড নিক্ষেপ, গৃহকর্মী নির্যাতন, যৌতুক ও নারী পাচারের মতো ঘটনাগুলো লিঙ্গভিত্তিক সহিংসতা। গবেষণা বলছে, এ ধরনের সহিংসতার শিকার আমাদের দেশে প্রধানত নারীরাই।
ব্র্যাকের জেন্ডার জাস্টিস অ্যান্ড ডাইভার্সিটি প্রকল্পের সেলিনা আহমেদ লিঙ্গভিত্তিক সহিংসতার বিষয়টি স্পষ্ট করে বলেন, ‘যখন ব্যক্তি তার লৈঙ্গিক ভূমিকা ও পরিচয়ের কারণে ভিকটিম হয় তখন সেটাকে লিঙ্গভিত্তিক সহিংসতা বলা হয়। এক্ষেত্রে নারী ও পুরুষ উভয়ই ভিকটিম হতে পারে। নারীর প্রতি সহিংসতা ও লিঙ্গভিত্তিক সহিংসতা এই জায়গায় একেবারেই পৃথক আইডেনটিটি।’
নারী অধিকারকর্মী খুশী কবীর মনে করেন, ‘নারীর প্রতি সহিংসতাকে লিঙ্গভিত্তিক সহিংসতা শব্দটি দিয়ে প্রতিস্থাপন করা হয়েছে তা নয়, বরং নারীর প্রতি সহিংসতা নিয়ে আমরা যারা কাজ করছি তাদের কাজের পরিসর আরও বেড়ে যায় যখন লিঙ্গভিত্তিক সহিংসতা বলছি। স্পষ্ট করে বলতে হলে, নারীর প্রতি সহিংসতা বিষয়টিকে এককভাবে দেখার এখন আর সুযোগ নেই। যখন নারীর অধিকার নিয়ে কাজ শুরু হয় তখন দৃষ্টিভঙ্গি অন্য রকম ছিল। কিন্তু এরপর রাজন রাকীবের যৌন নির্যাতন নিপীড়নের ঘটনাগুলো আমাদের আরেকটু দায়িত্বশীল হতে শেখায়। একেক জনের লৈঙ্গিক পার্থক্যকে সমান মর্যাদা হয়তো আগে দেওয়া হতো না। কিন্তু হিজড়া জনগোষ্ঠীসহ লৈঙ্গিক পার্থক্য ধারণ করে এমন অনেক নির্যাতনের শিকারদের দেখে মনে হয়েছে, নারীর প্রতি সহিংসতার সঙ্গে লিঙ্গভিত্তিক সহিংসতা বিষয়টি যুক্ত করে নেওয়া দরকার।’
আইন ও সালিশ কেন্দ্রের নির্বাহী পরিচালক শীপা হাফিজা বলেন, গত ১০ বছরে বাংলাদেশে ১০ হাজারের বেশি ধর্ষণের ঘটনা ঘটেছে। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে ধর্ষণের শিকার ন্যায়বিচার পাচ্ছে না। অধিকাংশ ক্ষেত্রে আমরা দেখেছি, সুবিধাবঞ্চিতরা বিচারহীনতার শিকার হন। এ পরিস্থিতিগুলো ঘটছে ক্ষমতা কাঠামোর মধ্যে।
তিনি বলেন, ‘একবিংশ শতকে এসে আমরা বলছি, লৈঙ্গিক পরিচয়কেন্দ্রিক যে সহিংসতাগুলোর শিকার হতে হয় নারীকে সেগুলোকে চিহ্নিত করার কথা। যখন কিনা একজন পুরুষও এ ধরনের ঘটনার শিকার হতে পারে তখন তার প্রতিকারের কথা বলতে হবে।’