আদালতে জঙ্গির মাথায় আইএস লোগো সংবলিত টুপি কাণ্ডের রহস্য উদঘাটনে ব্যর্থ হয়েছে কারা অধিদফতর ও ঢাকা মহানগর পুলিশ। জঙ্গি কিভাবে টুপি পেল সেই রহস্য উদঘাটন ছাড়াই প্রতিবেদন তদন্ত শেষ করেছে দুটি বিভাগ। অপরদিকে, জঙ্গি রাকিবুল হাসান রিগ্যান তদন্ত কমিটি ও আদালতেও টুপি পাওয়ার বিষয়ে ভিন্ন ভিন্ন বক্তব্য দিয়েছে। চারটি জায়গায় সে চার ধরনের বক্তব্য দিয়েছে। তার বক্তব্য নিয়ে তৈরি হয়েছে বিভ্রান্তি। তাই টুপি রহস্য অজানা রেখেই কারা কর্তৃপক্ষ ও ডিএমপি তদন্ত শেষ করছে।
গত ২৭ নভেম্বর (বুধবার) আলোচিত হলি আর্টিজান জঙ্গি হামলা মামলার রায় ঘোষণা করা হয়। সেসময় আদালতে উপস্থিত মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামি রাকিবুল হাসান রিগ্যানের মাথায় আইএস-এর টুপি দেখা যায়। এই টুপি কিভাবে জঙ্গিরা পেল তা তদন্তে কারা অধিদফতর ও ঢাকা মহানগর পুলিশ পৃথক দুটি কমিটি গঠন করে। কারা অধিদফতরের গঠিত তিন সদস্য বিশিষ্ট তদন্ত কমিটির প্রধান ছিলেন অতিরিক্ত আইজি প্রিজন কর্নেল আবরার হোসেন। অপর দু্ই সদস্য ছিলেন-ঢাকা বিভাগীয় ডিআইজি (প্রিজন) টিপু সুলতান এবং এআইজি প্রিজন (ট্রেনিং) আমিরুল ইসলাম। তারা গত ৩০ নভেম্বর কারা মহাপরিদর্শকের (আইজি প্রিজন) তদন্ত শেষে প্রতিবেদন জমা দিয়েছেন।
কারা অধিদদফতরের তদন্তে আইএস টুপির বিষয়ে কারাগারের কারও সংশ্লিষ্টতা পাওয়া যায়নি বলে জানিয়েছে কারা অধিদফতর।
ঢাকা বিভাগীয় ডিআইজি (প্রিজন) টিপু সুলতান বলেন,‘এ বিষয়ে কারা অধিদফতরের পক্ষ থেকে ৩ সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। তদন্ত শেষে কারা মহাপরিদর্শকের কাছে একটি প্রতিবেদন জমা দেওয়া হয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘আদালতে আসামির মাথায় আইএস-এর টুপি থাকার বিষয়ে কারাগারের কারও কোনও সংশ্লিষ্টতা পাওয়া যায়নি।’
কারা সূত্র জানায়, রায় ঘোষণার পরপরই তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। এবং ওই দিনই তদন্ত কমিটির সদস্যরা কারাগারে আসেন। তখন আসামিদের ভেতরে নেওয়া ও বাহিরে নেওয়ার সব পয়েন্টের সিসিটিভি ক্যামেরার ফুটেজ চেক করা হয়েছে। এছাড়াও যারা আসামিদের তল্লাশি করেছেন,তাদের জিজ্ঞাসাবাদসহ সার্বিক বিষয় পর্যবেক্ষণ করে গেছে তদন্ত কমিটি। তবে তদন্তে নিশ্চিত হওয়া যায় যে,আসামিরা কারাগারের ভেতর থেকে এই টুপি পায়নি। এছাড়াও কারাগারের কেউ এর সঙ্গে জড়িত নন।
অপরদিকে, ঘটনার পর ডিএমপি ঘটনা তদন্তে একটি কমিটি গঠন করে। এই কমিটির প্রধান ছিলেন, মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) যুগ্ম কমিশনার মাহবুব আলম, ডিবির উপকমিশনার (উত্তর) মশিউর রহমান এবং ডিএমপির অতিরিক্ত উপকমিশনার শাহদাৎ হোসেন।
এই কমিটির তদন্ত চূড়ান্ত। বৃহস্পতিবার এই কমিটি ডিএমপি কমিশনারের কাছে প্রতিবেদন জমা দেবেন। এই কমিটির প্রধান মাহবুব আলম বলেন, ‘রিগ্যান টুপি সংক্রান্ত কারা অধিদফতর, আদালত, আমাদের তদন্ত কর্মকর্তার কাছে এবং আমাদের সিটিটিসি’র কাছে চার ভিন্নভিন্ন বক্তব্য দিয়েছে। তার এক বক্তব্যের সঙ্গে আরেক বক্তব্যের মিল নেই। এসব বক্তব্য আমরা নিয়েছি। তার এই বক্তব্য দিয়ে কোনও উপসংহারে আসা যাচ্ছে না। এছাড়াও যারা আসামি আনা নেওয়ার দায়িত্বে ছিলেন,তাদেরও জিজ্ঞাসাবাদ করেছি। তবে কিভাবে সে টুপি পেলো তা বের করা সম্ভব হয়নি।’
গোয়েন্দা পুলিশের এই কর্মকর্তা বলেন,‘আমাদের কাছে রিগ্যান বলেছে টুপিটি তার পকেটেই ছিল।’ এই কর্মকর্তার বক্তব্য ইঙ্গিত করে রিগ্যান টুপিটি কারাগার থেকে নিয়ে এসেছে। তবে কারাগার থেকে নিয়ে আসার স্পষ্ট প্রমাণ পুলিশ দিতে পারছে না।
মাহবুব আলম বলেন,‘এই বিষয়টি এখনও স্পষ্ট না। আইএস টুপিটা সে কোথায় পেল? সে সঠিক কথা বলছে না। তবে আমরা আদালত চত্বরের অনেকগুলো ভিডিও ফুটেজ প্রতিবেদনের সঙ্গে জমা দেবো। সেখানে দেখা যায়,রিগ্যানের কাছে অপর এক জঙ্গি সাদা একটি টুপি দেয়,সেটি সে রাখেনি। পরে কালো টুপিটি বের করে, যখন সে টুপিটি মাথায় দেয় তাও দেখা যায়। আদালত চত্বরে কেউ তাকে টুপি দেয়নি। তার পকেটেই টুপি ছিল। এরকম কোন ফুটেজ পাওয়া যায়নি।’
অর্থাৎ কারা অধিদফতরের তদন্তে যে দাবি করা হয়েছে, সেই দাবির সত্যতা মিলছে না পুলিশের তদন্তে। কারণ, পুলিশ তাদের তদন্তে সরাসরি টুপি পাওয়ার জায়গা হিসেবে কারাগারকে ইঙ্গিত না করলেও আকার ইঙ্গিতে কারাগারকেই বোঝাচ্ছে।
এবিষয়ে মাহবুব আলম বলেন,‘কারাগারে টুপি পরা নিষিদ্ধ না। এবিষয়ে কোনও ড্রেস কোড নেই। সেখানে তারা টুপি পরে। কাউকে বাধাও দেওয়া হয় না। টুপির বিষয়ে তো কোন বিধিনিষেধই নেই। কালো টুপি হয়তো উল্টো করে মাথায় দিয়ে লোগো ডেকে রাখে।’
তিনি বলেন,‘রিগ্যান আদালত চত্বর থেকে ফেরার সময় টুপিটি আবার প্রিজন ভ্যান থেকে অন্য কোথাও ফেলে রেখে যায়। তবে জায়গাটি সে নির্দিষ্ট করে বলতে পারেনি।’
এদিকে গত ৩ ডিসেম্বর আদালতে গুলশানে হলি আর্টিজান হামলায় মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত রাকিবুল হাসান রিগ্যানসহ ছয় আসামি কল্যাণপুর জঙ্গি আস্তানা মামলায় ঢাকার সন্ত্রাস দমন ট্রাইব্যুনালে হাজির করা হয়। এসময় বিচারক মজিবুর রহমান আইএসের টুপি পাওয়ার বিষয় জানতে চাইলে রিগ্যান বলে, ‘আদালতে ভিড়ের মধ্যে কেউ একজন আমাকে আইএসের টুপি দিয়েছিল।’
তবে সিসি ক্যামেরার ফুটেজে এরকম কোনও চিত্র পাওয়া যায়নি বলে জানিয়েছেন মাহবুব আলম।