বর্ষায় রাজধানীবাসীর আতঙ্ক ছিল এডিস মশা। এই আতঙ্ক কাটতে না কাটতেই কিউলেক্স মশার আতঙ্ক শুরু হয়েছে।
নগরবাসী জানিয়েছেন, বিকেলের পর থেকে মশার উপদ্রব বেড়ে যায়। সন্ধ্যা হলেই মশা বেড়ে যায়। স্প্রে, কয়েল কোনো কিছুতেই মশা নিয়ন্ত্রণ করা যায় না।
রাজধানীর বিভিন্ন এলাকার বাসিন্দারা অভিযোগ করে বলেছেন, অনেক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে বার্ষিক পরীক্ষা শুরু হয়েছে। অনেক জায়গায় শুরু হওয়ার পথে। কিন্তু মশার যন্ত্রণায় শিক্ষার্থীরা সন্ধ্যার পর পড়ার টেবিলে ঠিকমতো বসতে পারছে না। এছাড়া মশাবাহিত রোগ নিয়েও চিন্তায় আছেন তারা।
কীট বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন, শুষ্ক মৌসুমে কিউলেক্স মশা দেখা যায়। যেহেতু মশার উপদ্রব বেড়েছে, সেহেতু কিউলেক্স মশা রয়েছে। এ মশায় গোদ রোগের ভাইরাস রয়েছে।
ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন সূত্র জানিয়েছে, তাদের বিশেষজ্ঞ দল বিভিন্ন এলাকা ঘুরে কিউলেক্স মশার অস্তিত্ব খুঁজে পেয়েছেন। এজন্য বেশকিছু ‘হট স্পট’ বা প্রজনন স্থল চিহ্নিত করা হয়েছে। সিটি করপোরেশনের আয়তনের ভেতরে মশা প্রতিরোধ কার্যক্রমের সঙ্গে এই হটস্পট এলাকাগুলোতেও বিশেষ কার্যক্রম নেয়া হয়েছে।
ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন সূত্র জানিয়েছে, তাদের ৫৪টি ওয়ার্ডের মধ্যে কিউলেক্স মশার প্রজনন স্থল হিসেবে ৬২৬টি হটস্পট চিহ্নিত করেছেন। সেসব জায়গা পরিস্কার করে মশার ওষুধ ছিটানোর জন্য কার্যক্রমও হাতে নেয়া হয়েছে। ওষুধ ছিটানোর জন্য সংস্থাটি ২০টি মিক্সড ব্লেয়ার যন্ত্র ও দুটি ভেহিক্যাল মাউন্টেড ফগার কিনেছে।
অন্যদিকে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের কর্মকর্তাদের সঙ্গে আলাপ করে জানা গেছে, তারাও কিউলেক্স মশার হটস্পট চিহ্নিত করে দুই দফা ক্রাশ প্রোগ্রাম করেছেন। তবে কতগুলো হটস্পট চিহ্নিত করা হয়েছে- এ সম্পর্কে কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি।
ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনের বিভিন্ন এলাকায় বসবাসকারীদের সঙ্গে আলাপ করে জানান গেছে, উত্তর সিটি করপোরেশন এলাকায় মাঝে মধ্যে মশার ওষুধ প্রয়োগে লোকজন দেখা গেলেও দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের কর্মীদের খোঁজে পাওয়া দুষ্কর।
মোহাম্মদপুরের বাসিন্দা আলী আযম বলেন, গত এক মাসে দুইবার মশার ওষুধ ছিটাতে দেখেছি। কিন্তু মশা তো যাচ্ছে না। সন্ধ্যা হলেই মশার যন্ত্রণায় ঘরে থাকা যায় না।
আদাবর এলাকার গাজিউর রহমান বলেন, মশার যন্ত্রণায় সব সময় জানালা বন্ধ রাখি। আমার নবজাতক শিশু রয়েছে। এজন্য কয়েল বা মশার স্প্রে করতে পারি না।
শ্যামলীতে থাকেন মিসেস তাহসিন হাসান। তিনি বলেন, সিটি করপোরেশনের মশার ওষুধ ছিটানো আসলে ‘ওষুধের’ মতো হয়ে গেছে। দেখাই যায় না। কয়েল বা স্পেও কাজে আসে না।
ইব্রাহিমপুর এলাকার জান্নাতুল হুমায়রা বলেন, বিকেল হলেই মশার উপদ্রব বেড়ে যায়। মাঝে দুই দিন মশার ওষুধ ছিটাতে দেখেছি। প্রতিদিন ওষুধ ছিটানো দরকার।
বংশালের বাসিন্দা আবু তালহা বলেন, এলাকায় মশা প্রতিরোধে কোনো কার্যক্রম নেই। গত দেড়-দুই মাসে এখানে মশার ওষুধ ছিটানোর জন্য কেউ আসেনি।
যাত্রাবাড়ী এলাকায় বাসিন্দা তৈয়বুর রহমান বলেন, সরকার তো কিছুই দেয় না, তাই মশার কামড়ই সহ্য করতে হচ্ছে।
শন্তিনগর এলাকার মিজানুর রহমান বলেন, ডেঙ্গুর প্রকোপ যখন বাড়ল তখনও সিটি করপোরেশন উদাসীন ছিল। এখন শীত আসায় মশার প্রকোপ বেড়েছে। তারপরও তারা কোনো উদ্যোগ নিচ্ছে না। বাচ্চারা তো সন্ধ্যায় পড়তে বসতে পারে না।
ধানমন্ডি এলাকার বাসিন্দা সাইদুর রহমান শাওন বলেন, প্রথমে সিটি করপোরেশন কোনো গুরুত্ব দেয় না। বিষয়টি বড় হয়ে গেলে দায়ও নিতে চান না।
শীতে মশার উপদ্রব বৃদ্ধি ও এর প্রতিরোধে সম্প্রতি ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের মেয়র আতিকুল ইসলাম বলেন, এডিস মশার নির্মূলের মতো কিউলেক্স মশাও নির্মূল করা হচ্ছে। এজন্য প্রয়োজনীয় সব উদ্যোগ নেয়া হয়েছে।
ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (ডা.) মো. শরীফ আহমেদ বলেন, আমরা জরিপ করে কিউলেক্স মশার থাকতে পারে এমন জায়গা চিহ্নিত করে লার্ভিসাইড ওষুধ প্রয়োগ করছি। ইতিমধ্যে দুই সপ্তাহে দুটি ক্রাশ প্রোগ্রাম করা হয়েছে।