শনিবার সকাল ৮টা। রাজশাহী মহানগরীর সাহেববাজার বড় মসজিদের সামনে সারি করে রাখা হয়েছে ইট, ব্যাগ, মিষ্টির প্যাকেট, পানির বোতল ও খবরের কাগজ। পাশাপাশি দুটি লাইনে এসব রাখা হয়েছে ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) পেঁয়াজ কেনার জন্য।
প্রতিদিন এই স্থানে টিসিবির ডিলার ট্রাকে করে পেঁয়াজ বিক্রি করেন। প্রতিদিন সকাল ১০টায় ট্রাক আসার আগে পেঁয়াজ কিনতে আসা মানুষ দাঁড়িয়ে যান লাইনে। কিন্তু শনিবার পেঁয়াজের ক্রেতারা নিজে লাইনে না দাঁড়িয়ে থেকে ইট, ব্যাগ, খবরের কাগজ লাইনে রেখে দেন। এমন দীর্ঘ দুটি লাইন দেখে হাসাহাসি করেছেন অনেকে। কিন্তু যারা এই লাইন করেছিলেন তারা বলছেন, নিজেদের সুবিধার জন্যই এই ব্যবস্থা।
রাজশাহীতে পেঁয়াজের বাজার এখনো অস্থিতিশীল। গত ২৪ নভেম্বর থেকে ৪৫ টাকা কেজি দরে টিসিবির পেঁয়াজ বিক্রি চলছে। দীর্ঘ লাইনে দাঁড়িয়ে সেদিন থেকে নগরীর পাঁচটি পয়েন্ট থেকে পেঁয়াজ কিনছেন ক্রেতারা। মানুষের এত ভিড় নিয়ে কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা যেন না ঘটে তার জন্য থাকে পুলিশের পাহারাও।
শনিবার সকালে সাহেববাজার জিরোপয়েন্টে বড় মসজিদের সামনে গিয়ে দেখা যায়, সকাল ৮টা থেকেই ইট, খবরের কাগজ, মিষ্টির প্যাকেট ও পানির বোতল লাইন করে রেখে দেয়া হয়েছে। যারা রেখেছেন তাদের কেউ লাইনের আশপাশেই ঘোরাফেরা করছেন, কেউবা গিয়েছেন প্রয়োজনীয় কাজ সারতে। আবার কেউ গিয়েছেন সবজির বাজারে। তাদের আশা ছিল, প্রয়োজনীয় কাজ সারতে সারতেই পেঁয়াজের ট্রাক চলে আসবে। কিন্তু শেষে তাদের নিরাশ হয়ে ফিরতে হয়। এ দিন নগরীর কোথাও পেঁয়াজ বিক্রি করা হয়নি।
নগরীর হড়গ্রাম বাজার থেকে পেঁয়াজ কিনতে এসেছিলেন আবদুর রহিম। তিনি একটি খবরের কাগজ লাইনে রেখে গিয়েছিলেন বাজার করতে। সকাল ৯টার দিকে এসে তিনি দেখছিলেন তার কাগজ ঠিক আছে কিনা। তিনি বলেন, ‘‘আমি এর আগে দুইবার এসে পেঁয়াজ নিয়ে গিয়েছি। অনেক ভিড় হয়। পায়ে ব্যথা ধরে যায়। তাই এই ব্যবস্থা করেছি।’’
রহিমের মতো একই কথা বলেন আবদুস সালাম। তিনি নগরীর বড়কুঠি এলাকা থেকে এসেছেন। তিনি বলেন, ‘‘আমি লাইনে ইট রেখেছি। লাইনে এতক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকা যায় না। তাই এই ব্যবস্থা করেছি।’’
লাইনে মিষ্টির প্যাকেট রেখে ঘোরাফেরা করছিলেন শফিকুল ইসলাম। তিনি বলেন, ‘‘লাইনে অনেকক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকা কষ্টকর। তাই সবাই এই ব্যবস্থা করেছেন। তাদের দেখাদেখি আমিও করেছি।’’ তবে সকাল ১০টার পর তারা জানতে পারেন পেঁয়াজের ট্রাক আসবে না। তখন তাদের হতাশ হয়ে ফিরতে হয়।
টিসিবির আঞ্চলিক অফিস প্রধান প্রতাপ কুমার বলেন, মজুদ না থাকার কারণে শনিবার নগরীর কোথাও পেঁয়াজ বিত্রিু হয়নি। তবে পেঁয়াজ চট্টগ্রাম থেকে আনা হচ্ছে। দুপুর পর্যন্ত একটি ট্রাক পুঠিয়ায় এসেছে। আরেকটি নাটোর পর্যন্ত এসেছে। রাজশাহীতে আসতে দেরি হবে। এগুলো ডিলারদের দেয়ার পর বিক্রয় পয়েন্টে যেতে অনেক দেরি হয়ে যেত। তাই পেঁয়াজ বিক্রি করা হয়নি।
তিনি জানান, রোববার থেকে পেঁয়াজ বিক্রি করা হবে। বাজার পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হওয়া পর্যন্ত পেঁয়াজ বিক্রি চলবে বলেও জানান তিনি।