দলীয় নেতা-কর্মীরা বলেছেন, তাদের পিঠ দেয়ালে ঠেকে গেছে। যা হারাবার তা হারিয়েছেন। এখন আর বাকি কিছু নেই। লাখ লাখ নেতা-কর্মী ঘর ছাড়া। মামলা-হামলায় বাড়ি ঘরে যেতে পারেন না। আর কতদিন এভাবে চলবে। এ থেকে মুক্তির জন্য এবার সব পিছুটান ফেলে মাঠে নামবেন নেতা-কর্মীরা। দলের নেতা-কর্মীদের মধ্যে কারো প্রতি কারো ক্ষোভ বা মতানৈক্য থাকলেও আন্দোলনের ব্যাপারে, তাদের নেত্রীর মুক্তির ইস্যুতে তারা এক।
নেতারা বলছেন, এই লক্ষ্যে দল পুনর্গঠন প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। তৃণমূলের নেতা-কর্মীদের মধ্যে এক ধরনের জাগরণ তৈরি হয়েছে।
বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবিতে কয়েকটি বিভাগীয় সমাবেশ অুনষ্ঠিত হয়েছে। সেসব সমাবেশে কেন্দ্রীয় নেতাদের ভাষণের সময়ে তৃণমূলের নেতা-কর্মীরা বৃহৎ কর্মসূচি চাই বলে স্লোগান দিয়েছেন। স্থানীয় অনেক নেতা-কর্মীও তাদের বক্তৃতায় বৃহৎ কর্মসূচির দাবি জানিয়েছেন। কেন্দ্রীয় নেতারাও বুঝেছেন তৃণমূল প্রস্তুত আছে।
বেশকিছু দিন ধরে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়শ্বের চন্দ্র রায় রাস্তার নামার ব্যাপারে তাগিদ দিয়ে আসছেন। তিনি বলেন, আইনি প্রক্রিয়ায় বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার মুক্তি মিলবে না। রাজপথে আন্দোলন সংগ্রামের মাধ্যমে খালেদা জিয়াকে মুক্ত করে আসতে হবে। তাহলে গণতন্ত্র মুক্তি পাবে।
সবশেষ ২৪ নভেম্বর বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরও কঠোর হুঁশিয়ারি দিয়েছেন। তিনি বলেছেন, আর কোনো সভা সেমিনারে অনুমতি চাওয়া হবে না। যখন প্রয়োজন তখনই সভা সমাবেশ করবেন।
তার সেই বক্তব্যের একদিন পরই ২৬ নভেম্বর রাস্তায় নামে বিএনপি নেতা-কর্মী। হাইকোর্টের সামনে সড়ক অবরোধ করে, বিক্ষোভ করে। এ সময় পুলিশের সাথে তাদের ধাওয়া পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। বিক্ষোভকারীরা বেশ কয়েকটি গাড়ি ভাঙচুর করে।
এর আগে বিক্ষোভ কর্মসূচিতে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল্লাহ আল নোমান বলেন, আজকে রাস্তায় নামাটা অসাংবিধানিক নয় এবং আইন বিরোধী ও ক্ষমতার মালিক হওয়া সত্ত্বেও সবকিছু থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। দেশে বর্তমানে নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্য ঊর্ধ্বগতি। পেঁয়াজ, চাল, তেল জনগণের ক্রয় ক্ষমতার বাইরে চলে যাচ্ছে। এসব বিষয় নিয়ে আমাদের আন্দোলন করার অধিকার আছে। জনগণের অধিকার ফিরিয়ে দেওয়ার জন্য আন্দোলন করার অধিকার আমাদের আছে।
বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল এ প্রতিবেদকে বলেন, আন্দোলনের প্রস্তুতি তো বিএনপির আছে। বিএনপির কর্মসূচি তো করেই যাচ্ছে। ঘরে-বাইরে দুদিকেই সমান তালে।
তিনি বলেন, বাংলাদেশের ইতিহাস বলে এবং এই দেশের মাটির যে বৈশিষ্ট্য চরিত্র তাতে দেখা যায় যে, কখনো দিন তারিখ ঘোষণা করে কিংবা আগাম বলে দিয়ে আন্দোলন হয় না। যেমন ডা. মিলনের মৃত্যু না হলে এরশাদের পতনের আন্দোলনে এতো জনস্রোত নামতো ওই সময়- এটা কিন্তু কোনো ব্যাকরণে মেলে না। সুতরাং ওই ধরনের প্রস্তুতি তৈরির জন্য যে ধরনের উপাদান দরকার- সেগুলো বিএনপির মধ্যে রয়েছে।
তবে বিএনপির কিছু কিছু নেতার মধ্যে পিছুটান আছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘যে পিছু টান আছে বা যে ভীতিটা আছে। এই ভীতির পর্দাটাকে সরিয়ে ফেলতে হবে। যদি তারা না সরায় সেখানে পরবর্তী স্তরে নেতৃত্ব এসে এই ভীতির পর্দা সরিয়ে যখন নামতে পারবে, তখনই এ আন্দোলনের মূল কর্মকাণ্ড শুরু হবে। ’
সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল বলেন, ‘চলমান পরিস্থিতি থেকে পরিত্রাণ পেতে ও গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনতে শুধু বিএনপি নেতা-কর্মীই নয়, সচেতন সব মানুষেরও এই আন্দোলনে শামিল হওয়া দরকার’।