২২শে নভেম্বর, ২০২৪ ইং | ৭ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ | রাত ১:০২

এমপি লিটন হত্যা মামলায় সাত জনের মৃত্যুদণ্ড

আওয়ামী লীগের সাবেক এমপি মঞ্জুরুল ইসলাম লিটন হত্যা মামলায় সাত জনকে মৃত্যুদণ্ডের রায় দিয়েছেন আদালত। আজ বৃহস্পতিবার (২৮ নভেম্বর) বেলা ১২টার দিকে গাইবান্ধা জেলা ও দায়রা জজ আদালতের বিচারক দিলীপ কুমার ভৌমিক এই রায় ঘোষণা করেন। রায়ের সময় ছয় আসামি আদালতে উপস্থিত ছিলেন। চার্জশিটে অভিযুক্ত আট আসামির মধ্যে মৃত একজনকে ছাড়া বাকিদের মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হলো।

দণ্ডপ্রাপ্ত আসামিরা হলেন, সাবেক এমপি আবদুল কাদের খাঁন, তার পিএস শামছুজ্জোহা, গাড়িচালক হান্নান, ভাতিজা মেহেদি, গৃহকর্মী শাহীন, রানা ও চন্দন কুমার। হত্যাকাণ্ডে অভিযুক্ত আটজন আসামির মধ্যে কসাই সুবল কারাগারে অসুস্থ অবস্থায় মারা যান। আর চন্দন কুমার ভারতে পলাতক রয়েছে। সুবল ছাড়া বাকি সাত জনকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়েছে।

এর আগে গত ১৯ নভেম্বর গাইবান্ধা জেলা ও দায়রা জজ আদালতে রাষ্ট্রপক্ষ ও আসামিপক্ষের আইনজীবীদের যুক্তি খণ্ডন শেষে বিচারক রায়ের দিন ধার্য করেন।

২০১৬ সালের ৩১ ডিসেম্বর সুন্দরগঞ্জের বামনডাঙ্গার (মাস্টারপাড়া) গ্রামের নিজবাড়িতে খুন হন গাইবান্ধা-১ (সুন্দরগঞ্জ) আসনে ক্ষমতাসীন দলের এমপি লিটন। দুটি মোটরসাইকেলে করে আসা দুর্বৃত্তরা গুলি করে তাকে হত্যা করে পালিয়ে যায়। সেই হত্যাকাণ্ডের দুই বছর ১১ মাসের মাথায় চাঞ্চল্যকর এই হত্যা মামলার রায় হলো।

হত্যার মূল পরিকল্পনাকারী জাতীয় পার্টির সাবেক সংসদ সদস্য কর্নেল (অব.) ডা. আবদুল কাদের খানসহ আট জন অভিযুক্ত হন।.

গাইবান্ধা জেলা জজ আদালতের পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) এবং এই মামলার রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী অ্যাডভোকেট শফিকুল ইসলাম শফিক বলেন, ‘এই হত্যাকাণ্ড যে পরিকল্পিত ছিল তা মামলার সাক্ষ্য-প্রমাণ, আসামিদের স্বীকারোক্তি ও যুক্তিতর্কে প্রমাণ হয়েছে।’

তবে আসামিপক্ষের আইনজীবী অ্যাডভোকেট মো. আবদুল হামিদ বলেন, ‘লিটনকে যেমন পরিকল্পিতভাবে হত্যা করা হয়েছে, তেমনি এ মামলায় আসামি কাদের খাঁনকে ফাঁসানো হয়েছে। রায়ের বিরুদ্ধে উচ্চ আদালতে যাবো আমরা।’

২০১৬ সালের ৩১ ডিসেম্বর মঞ্জুরুল ইসলাম লিটন হত্যাকাণ্ডের পরদিন ১ জানুযারি অজ্ঞাত ৫-৬ জনকে আসামি করে সুন্দরগঞ্জ থানায় একটি হত্যা মামলা দায়েন করেন লিটনের ছোট বোন ফাহমিদা বুলবুল কাকলী। পরে অধিকতর তদন্ত শেষে ২০১৭ সালের ৩০ এপ্রিল ডা. আবদুল কাদের খাঁনসহ আটজনের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র (চার্জশিট) দাখিল করে পুলিশ।

২০১৮ সালের ৮ এপ্রিল থেকে আদালতে এ মামলার সাক্ষ্যগ্রহণ শুরু হয়, শেষ হয় গত ৩১ অক্টোবর। মামলার বাদী ও নিহতের স্ত্রীসহ ৫৯ জন সাক্ষী আদালতে সাক্ষ্য দিয়েছেন। গত ১৮ ও ১৯ নভেম্বর জেলা জজ আদালতের বিচারক দিলীপ কুমার ভৌমিক রাষ্ট্র ও আসামিপক্ষের আইনজীবীদের যুক্তিতর্ক গ্রহণ করেন।

লিটন হত্যাকাণ্ডের পর ক্লু উদ্ধারে মাঠে নামে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা। কিন্তু আড়াই মাসেও কোনও কূল-কিনারা করা যাচ্ছিলো না। পরে হত্যাকাণ্ডে ব্যবহ্নত একটি পিস্তুলের ফেলে যাওয়া ম্যাগজিনের সূত্র ধরেই হত্যার রহস্য উন্মোচন করা হয়। এরপর ২০১৭ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি বগুড়ার বাসা থেকে হত্যার মূল পরিকল্পনাকারী সন্দেহে জাতীয় পার্টির সাবেক এমপি কর্নেল (অব.) আবদুল কাদের খাঁনকে গ্রেফতার করে পুলিশ। কাদের খাঁনের দেওয়া স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে হত্যায় অংশ নেওয়া কিলারদের শনাক্ত ও তাদের গ্রেফতার করে পুলিশ। গ্রেফতারের পর আসামি কাদের খাঁনসহ ছয় আসামি গাইবান্ধা জেলা কারাগারে রয়েছেন। আসামিরা হলেন, কাদের খাঁনের পিএস শামছুজ্জোহা, গাড়িচালক হান্নান, ভাতিজা মেহেদি, শাহীন ও রানা মিয়া। তবে আসামি কসাই সুবল চন্দ্রের মৃত্যু হয়েছে এবং অপর আসামি চন্দন কুমার ভারতে পালিয়েছে।

এছাড়া লিটন হত্যার ঘটনায় অস্ত্র আইন মামলায় চলতি বছরের গত ১১ এপ্রিল আবদুল কাদের খাঁনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের আদেশ দেন আদালত।

প্রকাশ :নভেম্বর ২৮, ২০১৯ ১২:৩৪ অপরাহ্ণ