সমুদ্রের সার্বভৌমত্ব রক্ষায় ১৯৭৪ সালের সমুদ্র আইনকে সংশোধন করে যুগোপযোগী করা হয়েছে। ‘বাংলাদেশ মেরিটাইম অঞ্চল আইন, ২০১৯’ এর খসড়া নীতিগত অনুমোদন দিয়েছে মন্ত্রিসভা। এ আইনে জলদস্যুতার জন্য সর্বোচ্চ যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের বিধান রাখা হয়েছে।
সোমবার তেজগাঁওয়ে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে মন্ত্রিসভার নিয়মিত বৈঠকে এই অনুমোদন দেয়া হয়। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এতে সভাপতিত্ব করেন।
বৈঠক শেষে সচিবালয়ে সংবাদ সম্মেলন করে মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম আইনটি অনুমোদনের কথা জানান।
তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশ মেরিটাইম অঞ্চল আইন হলে তা ব্যাপকভিত্তিক মেরিটাইম অঞ্চল নির্ধারণসহ অভ্যন্তরীণ জলসীমা ও রাষ্ট্রীয় জলসীমা, ২০০ নটিক্যাল মাইল পর্যন্ত একচ্ছত্র অর্থনৈতিক অঞ্চল এবং ৩৫০ নটিক্যাল মাইল পর্যন্ত মহীসোপানে সমুদ্র সম্পদের উপর বাংলাদেশের সার্বভৌম অধিকার প্রতিষ্ঠিত হবে।’
‘এছাড়া জলদস্যুতা, সমুদ্রে সন্ত্রাস, সমুদ্র দূষণসহ সমুদ্রে সংঘটিত অপরাধসমূহ ও নৌচলাচল নিরাপত্তা বিঘ্নকারী বেআইনি কর্মকাণ্ড নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হবে।’
মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, ‘পাশাপাশি সামুদ্রিক বৈজ্ঞানিক গবেষণা, সুষ্ঠু সমুদ্র ব্যবস্থাপনা, জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ এবং মেরিটাইম সহযোগিতা থেকে সুফল প্রাপ্তির ক্ষেত্রে এ আইনটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে বলে আশা করা যায়।’
খসড়া আইনানুযায়ী জলদস্যুতার ক্ষেত্রে শাস্তির বিষয়ে তিনি বলেন, ‘জলদস্যুতা, সশস্ত্র চুরি, সমুদ্র সন্ত্রাস করতে গিয়ে কেউ খুন করলে মৃত্যুদণ্ড হবে। সাধারণ কোনও ব্যক্তি জলদস্যুতা বা সমুদ্র সন্ত্রাস করলে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডে দণ্ডিত হবেন। আর যেগুলো দস্যুতা করে নেবে তা জব্ধ করা হবে।’
‘কোন ব্যক্তি জলদস্যুতা বা সমুদ্র সন্ত্রাসের চেষ্টা বা সহায়তা করলে সেক্ষেত্রে সর্বোচ্চ ১৪ বছর কারাদণ্ড ও অর্থদণ্ডে দণ্ডিত হবেন। আর যদি (জলদস্যুতায়) সহযোগী হয় সহায়তা দেয় সেক্ষেত্রেও সর্বোচ্চ ১৪ বছর পর্যন্ত কারাদণ্ড ও অর্থ দণ্ডে দণ্ডিত হবেন।’
বাংলাদেশের জলসীমায় এসে ভিন্ন দেশের লোকও এসব অপরাধ করে তাহলে একই শাস্তি প্রযোজ্য থাকবে বলেও জানান মন্ত্রিপরিষদ সচিব। নানা প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে খসড়া আইনটি চূড়ান্ত করা হয় বলেও জানিয়েছেন খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৭৪ সালে সর্বপ্রথম বাংলাদেশের মেরিটাইম অঞ্চলের সীমানা নির্ধারণ এবং সমুদ্র সম্পদ অনুসন্ধান ও আহরণে ‘দ্য টেরিটোরিয়াল ওয়াটারস অ্যান্ড মেরিটাইম অ্যাক্ট ১৯৭৪’ প্রণয়ন করেন।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একটি সূত্র জানায়, ১৯৭৪ সালের আইনে ৯টি ধারা ছিল। সংশোধিত আইনের খসড়ায় ১১৬টি ধারা রাখা হয়েছে। সংশোধিত আইনের খসড়ায় মোট সমুদ্রসীমার বিস্তৃতি উল্লেখ করে দেশি-বিদেশি জাহাজ চলাচল কীভাবে নিয়ন্ত্রণ করা হবে, তার বিস্তারিত বলা হয়েছে। এছাড়া মহীসোপান, গভীর সমুদ্র ও একচ্ছত্র অর্থনৈতিক আঞ্চল থেকে কীভাবে সম্পদ আহরণ করা যাবে, তার বিস্তারিত নির্দেশনাও রয়েছে সংশোধিত আইনে।