জামালপুর সদর উপজেলার শ্রীপুর ইউনিয়নের রামকৃষ্ণপুর এলাকায় গত শুক্রবার (১৫ নভেম্বর) রাতে ধর্ষণের শিকার হন বলে অভিযোগ করেন এক গৃহবধূ। তিনি আরও অভিযোগ করেন, ধর্ষণকারীরা তার স্বামীকে নির্যাতন করে হত্যার পর গাছে ঝুলিয়ে আত্মহত্যা বলে চালিয়ে দেওয়ার চেষ্টা চালায়। এই ঘটনায় ১৬ নভেম্বর সকালে পুলিশ লাশ উদ্ধার করে অপমৃত্যুর মামলা নিলেও ধর্ষণের অভিযোগ আমলে নেয়নি। পরে সোমবার (১৮ নভেম্বর) ওই নারী প্রেস ক্লাবে গিয়ে সাংবাদিকদের বিষয়টি জানালে তাদের মধ্যস্থতায় ধর্ষণ মামলা দায়ের করা হয়। মামলায় রফিজ উদ্দিন (৩৮), ছানোয়ার (৩৪) ও শাওন (২৫) এই তিনজনকে আসামি করা হয়। তবে এখন পর্যন্ত শাওন ছাড়া আর কাউকে গ্রেফতার করতে পারেনি পুলিশ।
ভিকটিম অভিযোগ করেন, আসামিরা দীর্ঘদিন ধরে তাকে উত্ত্যক্ত করে আসছিল। তাদের পাত্তা না দিয়ে স্বামী ও শ্বশুরকে বিষয়টি জানানোয় ক্ষিপ্ত হয়ে তারা এ ঘটনা ঘটিয়েছে।
পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, সংঘবদ্ধ ধর্ষণ মামলার গ্রেফতারকৃত আসামি শাওনকে গত ২০ নভেম্বর আদালতে হাজির করে তিন দিনের রিমান্ড আবেদন করা হয়েছে। আদালতে আগামী ২৬ নভেম্বর রিমান্ড শুনানি হবে।
পুলিশ আরও জানায়, ইতোমধ্যে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার বাছির উদ্দিন, সদর থানার ওসি ছালেমুজ্জামান এবং র্যাব ও পুলিশের কর্মকর্তারা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে বিষয়টি তদন্ত করে দেখছেন।
অপরদিকে ওই গৃহবধূর ডাক্তারি পরীক্ষা সম্পন্ন হয়েছে বলে জানিয়েছেন জামালপুর জেনারেল হাসপাতালের সহকারী উপপরিচালক প্রফুল্ল কুমার সাহা। তিনি বলেন, ‘সংঘবদ্ধ ধর্ষণের শিকার ওই নারীকে চিকিৎসাসেবাসহ সব ধরনের সহযোগিতা করা হচ্ছে। শারীরিক পরীক্ষার রিপোর্ট তৈরির কাজ চলছে। যথাযথ সময়ে কর্তৃপক্ষের কাছে তা পাঠানো হবে।’ প্রাথমিক পরীক্ষায় ধর্ষণের আলামত পাওয়া যায় বলে চিকিৎসকরা আগেই জানিয়েছিলেন।
এদিকে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ওই গৃহবধূ জানান, ধর্ষক ও হত্যাকারীরা এলাকার চেয়ারম্যানসহ প্রভাবশালীদের কাছে দৌড়ঝাঁপ করছে। তারা হত্যাকাণ্ডটি ধামাচাপা দিতে এখনও অপতৎপরতা চালিয়ে যাচ্ছে। সঠিক বিচার পাবেন কিনা এ নিয়ে তিনি শঙ্কা প্রকাশ করেছেন।
এ বিষয়ে শ্রীপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আজিজুল হক বলেন, ‘ভিকটিমের অভিযোগ ঠিক নয়। নির্যাতনকরীরা দিনমজুর শ্রেণির এবং তারা কোনও প্রভাবশালীর সহায়তা পাবে না। আসামিরা সবাই পলাতক। বাড়ির আশপাশে বা এলাকায় তাদের কাউকে দেখতে পাওয়া যাচ্ছে না। আইনের মাধ্যমে নির্যাতনকরীদের শাস্তি নিশ্চিত করতে আমি অবশ্যই ভিকটিমের পরিবারকে সহায়তা করবো।’
ভিকটিমের প্রতিবেশীরা জানিয়েছেন, রামকৃষ্ণপুর গ্রামের কেউ এই ঘটনায় মুখ খুলছেন না। তারা নির্যাতিত গৃহবধূর পরিবারের সঙ্গে যাতায়াত বন্ধ করে দিয়েছেন এবং কোনও যোগাযোগ রাখছেন না। এবিষয়ে ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আজিজুল হকের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘এরকম কিছু আমার কানে আসেনি। তবে বিষয়টি দেখছি।’
মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ও জামালপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি তদন্ত) মো. রাশেদুল ইসলাম বলেন, ‘আসামি শাওনকে গত ২০ নভেম্বর আদালতে হাজির করে তিন দিনের রিমান্ড আবেদন করেছি। আদালত আগামী ২৬ নভেম্বর রিমান্ড শুনানির দিন ধার্য করেছেন। এদিকে গণধর্ষণের বিষয়ে ভিকটিমের মেডিক্যাল রিপোর্ট এখনও আমাদের হাতে আসেনি। অন্য আসামিদের গ্রেফতারের চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে। কোনও অগ্রগতি হলে সাংবাদিকদের জানানো হবে।’
জামালপুরের পুলিশ সুপার দেলোয়ার হোসেন বলেন, ‘তদন্ত চলছে। তদন্ত শেষ হলেই প্রকৃত ঘটনা বেরিয়ে আসবে।’