এর দুই মাস পর ১২ আগস্ট ২৫টি ফগার মেশিন কেনার দরপত্র আহ্বান করে ডিএসসিসি। একই প্রতিষ্ঠান টেন্ডার প্রক্রিয়ার অংশ নেয়। প্রতিষ্ঠানটি ডিএনসিসি থেকে প্রতিটি মেশিনে ৪৬ হাজার ৭৫০ টাকা কমে এক লাখ ৬৭ হাজার টাকায় দর দেয়। ১০ কার্যদিবসের মধ্যে মেশিন সরবরাহ করতে কার্যাদেশ দেয় ডিএসসিসি। এতে ব্যয় হয়েছে ৪১ লাখ ৭৫ হাজার টাকা। যেখানে একই মেশিন কিনতে এক কোটি ১১ লাখ ২৬ হাজার ৫০০ টাকা বেশি খরচ হয়েছে ডিএনসিসির।
দামের এমন তফাতের বিষয়ে জানতে চাইলে ডিএনসিসির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা আবদুল হাই বলেন, ‘বিষয়টি সম্পর্কে আমি বেশি ভালো বলতে পারবো না। এগুলো সাবেক প্রধান ভাণ্ডার কর্মকর্তা জাকির হোসেনের সময় কেনা। তবে আমাদের মেশিনগুলো জার্মানির। আমরা উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানের কারখানা পরিদর্শন করে মেশিনগুলো কিনেছি।’
ডিএনসিসির প্রধান ভাণ্ডার ও ক্রয় কর্মকর্তা সগীর হোসেন বলেন, ‘একই উৎপাদন ও সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানের মেশিন যদি হয়ে থাকে তাহলে তো দামের এতো তফাৎ হওয়ার কথা নয়। আমরা তো অনেক দর কষাকষি করে কেনাকাটা করে থাকি। তাছাড়া যতো দূর জানি মেশিনগুলো ইজিপির মাধ্যমে টেন্ডার দিয়ে কেনা হয়েছে।’
জানা গেছে মেশিনগুলো কেনার জন্য ডিএনসিসির দু’জন কাউন্সিলর ও তৎকালীন প্রধান ভাণ্ডার ও ক্রয় কর্মকর্তা জাকির হোসেন ঠিকাদারের খরচে জার্মান যান। কাউন্সিলরা হচ্ছেন, প্যানেল মেয়র আলেয়া সারোয়ার ডেইজি ও ১১ নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর দেওয়ান আবদুল মান্নান।
এ প্রসঙ্গে প্যানেল মেয়র আলেয়া বলেন, ‘আমরা জার্মান গিয়ে দেখি আমাদের পৌঁছানোর আগেই মেশিন কেনার সব চুক্তি শেষ হয়ে গেছে। আমাদেরকে শুধু সরকারের টাকা খরচ করে পাঠানো হয়েছে। টাকাটা জায়েজ করতে আমাদের পাঠানো হয়েছে। যদি চুক্তির আগে ভ্রমণের ব্যবস্থা করা হতো তাহলে আরও অনেকগুলো কোম্পানির মেশিন দেখে-শুনে কেনা যেত। চুক্তি আগে হলে ভ্রমণের দরকার কী?’
জানতে চাইলে দেওয়ান আবদুল মান্নান জানান, মেশিন কেনায় অনিয়ম হয়েছে কিনা সেটা বলতে পারবো না।
ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান প্যারেন্টস এন্টারপ্রাইজের ম্যানেজিং পার্টনার সিরাজুল হক বলেন, ‘মেশিন কেনার জন্য দরপত্রে ডিএনসিসি তাদের কর্মকর্তাদের বিদেশ ভ্রমণের শর্ত জুড়ে দেয়। তাদের দু’জন কাউন্সিলর ও ভাণ্ডার কর্মকর্তাকে উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানের কারখানা দেখানোর জন্য জার্মানিতে নিয়ে যাই। তাদের সঙ্গে আমিও ছিলাম। এই খরচটা কি আমরা দেবো? সেটা তো গড় দামের সঙ্গে যুক্ত হবে। তাদের থাকা-খাওয়া থেকে শুরু করে পুরো ভ্রমণ ব্যয় আমাদের কোম্পানিকে বহন করতে হয়েছে। তাছাড়া ডিএনসিসি বলেছে, জরুরি ভিত্তিতে মেশিনগুলো সরবরাহ করতে। সে কারণে মেশিনগুলো বিমানে করে আনা হয়। বিমান ভাড়ায় অনেক টাকা খরচ হয়েছে। আমাদেরকে যদি ডিএসসিসি’র মতো সময় দেওয়া হতো তাহলে মেশিন জাহাজে আনতে পারতাম। তখন এত টাকা ব্যয় হতো না।’
ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান জরুরি ভিত্তিতে সরবরাহের নির্দেশের কথা বললেও ডিএনসিসির কার্যাদেশে দেখা গেছে, মেশিনগুলো সরবরাহের জন্য ৯০ দিন সময় দেওয়া হয়েছে। আর ডিএসসিসির মেশিনগুলো জাহাজে করে আমদানি করা হলেও সংস্থাটির কার্যাদেশে ১০ দিনের মধ্যে মেশিনগুলো সরবরাহের শর্ত দেওয়া হয়। ১০ দিনের মধ্যে ডিএসসিসির মেশিনগুলো জাহাজে করে আমদানি করতে পারলেও ৯০দিন সময় পাওয়া ডিএনসিসির মেশিনগুলো বিমানে আনে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান।
দক্ষিণ সিটির একটি সূত্র জানিয়েছে, তারা দরপত্র পাওয়ার পর পালস ফগ কোম্পানির সঙ্গে যোগাযোগ করে। তারা জানায়, তাদের প্রতিটি মেশিনের দাম এক লাখ ৬০ হাজার টাকা। ডিএসসিসি তাদেরকে জানায়, মেশিনগুলোর আন্তর্জাতিক দরের চেয়ে কোম্পানিটির বাংলাদেশি বিক্রয় প্রতিনিধি ডিএসসিসির কাছে বেশি দাম চাচ্ছে। পরে উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানের মধ্যস্থতায় প্রতিটি মেশিনে মেসার্স প্যারেন্টস এন্টারপ্রাইজকে সাত হাজার টাকা লাভ দিয়ে ১ লাখ ৬৭ হাজার টাকায় কেনার সিদ্ধান্ত নেয় ডিএসসিসি।