বিদেশে বিশেষ করে সৌদি আরবে নারী শ্রমিক পাঠানো নিয়ে সংসদে তোপের মুখে পড়েছেন প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রী মো. ইমরান আহমেদ।
প্রশ্নোত্তর পর্বে এ নিয়ে তাকে একের পর এক প্রশ্নের মুখোমুখি হতে হয়। এই সময় তাকে প্রশ্নকারী বিরোধী দলের একাধিক এমপি বিদেশে কর্মরত মহিলা শ্রমিকদের উপরে যৌন নির্যাতনের বিষয়ে প্রশ্ন করেন। স্বাধীন দেশের মানসম্মান রক্ষায় সৌদি আরবে নারী শ্রমিক না পাঠানোর জন্য অনুরোধ করেন তারা।
মঙ্গলবার জাতীয় সংসদে প্রশ্নোত্তর পর্বে এঘটনা ঘটে। এসময় জাতীয় পার্টির মুজিবুল হক চুন্নু ও কাজী ফিরোজ রশীদ আক্রমনাত্মক প্রশ্ন করেন। এছাড়াও জাতীয় ঐক্য ফ্রন্টের সুলতান মোহাম্মদ মনসুর আহমদ সৌদিতে নারী শ্রমিক পাঠানোর বিরোধীতা করে বক্তব্য দেন। সম্পৃরক প্রশ্ন করতে গিয়ে তারা নারী শ্রমিক পাঠানোর বিরোধীতা করেন।
সাংসদরা দাবি করেন, বাংলাদেশ এখন আর তলাবিহীন ঝুঁড়ি নয় যে, নারীদের সম্ভমহানীর জন্য তাদের বিদেশে পাঠাতে হবে। এর পরিবর্তে বেশি করে পুরুষ শ্রমিক পাঠানোর জন্য বলেন তারা।
এবিষয়ে জাতীয় পার্টির মুজিবুল হক চুন্নু বলেন, ‘সৌদি আরবে বিশেষ করে নারী গৃহকর্মীদের সেক্সয়াল হেরাসমেন্টসহ নানা ধরনের নির্যাতন করা হয়। এটা স্বীকৃত। এই অত্যাচারের কারণে অনেক মহিলা সুযোগ পেলেই পালিয়ে যাচ্ছে, জেলখানায় যায় এবং অনেক কিছু হচ্ছে। এজন্য বহির্বিশ্বে থেকে আমাদের অনেক প্রশ্ন আসছে। মাননীয় মন্ত্রীদের কাছে আমার প্রশ্ন, এই যে মহিলা কর্মীরা পাঠাচ্ছি, তাদেরকে সেক্সুয়াল হ্যারাসমেন্ট থেকে বাঁচানোর জন্য, তাদের ইজ্জত সম্মানের সাথে চাকরি করার জন্য সরকারের পক্ষ থেকে কোনো রকম উদ্যোগ নিয়েছেন কিনা?’
সুলতান মোহাম্মদ মনসুর আহমদ বলেন, ‘বাংলাদেশ থেকে মহিলা শ্রমিক পাঠানোর ব্যাপারে মন্ত্রী বলছেন যে, শিক্ষা দিয়ে নারীদের পাঠানো হবে। কিন্তু সৌদি আরবকে তো কন্ট্রোল করতে আপনি এখান থেকে পারবেন না। আর ওরা কিভাবে এটা কন্ট্রোল করে সেটা আপনি, আমি, অনেকেই জানি। আমরা বিভিন্ন সময় গিয়েছি, দেখেছি। আমার অনুরোধ থাকবে, এই সমাজজীবনকে বাঁচানোর জন্য, এই দেশের মান মর্যাদা ও ঐতিহ্য রক্ষার্থে আমাদের মহিলা শ্রমিক না পাঠিয়ে পুরুষ শ্রমিক পাঠান। এতে দেশের মান বাঁচবে। আমাদের মান ইজ্জত বাঁচবে, পারিবারিক পরিবেশও সুন্দর থাকবে। বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের বাংলাদেশ মাথা উঁচু করে দাঁড়াবে। আর না হলে আমরা দাসের বাংলাদেশ পরিণত হব।’
কাজী ফিরোজ রশীদ বলেন, ‘মাননীয় মন্ত্রী বললেন রিক্রুটিং এজেন্ট বিদেশে লোক পাঠায়। তাহলে উনাদের দায়িত্বটা কি? প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রীর দায়িত্বটা কি? আমাদের মা বোনদের আমরা পাঠিয়ে দিচ্ছি, ওখান থেকে যৌন নির্যাতনের শিকার হয়ে, নানান রকম অন্যায় অত্যাচারের শিকার হয়ে তারা লাশ হয়ে ফিরে আসে। এযাবত ছয় থেকে সাত শত লাশ এসেছে এবং তাদের সবারই লেখা থাকে এটা স্বাভাবিক মৃত্যু। ওখানে পোস্টমর্টেম যে হয়, সেটাও বাংলাদেশের অ্যাম্বাসি দেখে না। একই রকমের পোস্টমর্টেম করে তারা।‘
জবাবে প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রী ইমরান আহমেদ বলেন, ‘বিদেশে নারী শ্রমিকরা হয়রানির শিকার হন, মন্ত্রী ও মন্ত্রণালয় কিছুই জানে না, এটা সঠিক নয়। সংসদের বিরোধী দলীয় এমপিদের এ ইস্যুতে বক্তব্য শুনে আমার মনে হয়েছে, অভিযোগ করার জন্য অভিযোগ এবং রাজনৈতিক মাঠে দেয়া বক্তব্যের মতো।’
মন্ত্রী বলেন, বিদেশে মহিলা কর্মী পাঠানো রিক্রুট এজেন্সীদের মধ্যে অনিয়মের কারণে ১৬০টির কার্যক্রম স্থগিত করা হয়েছে। ৩টি এজেন্সীর লাইসেন্স বাতিল করা হয়েছে। জরিমানা করা হয়েছে কোটি টাকার বেশি। এক্ষেত্রে সরকারের অবস্থান জিরো টলারেন্স।