মানবাধিকার কমিশনের সুপারিশ সরকার অমান্য করলে সংশ্লিষ্ট কমিশন আইন ও সংবিধান অনুসারে তা আদালতের নজরে আনার নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট। মিরপুরে গৃহকর্মী খাদিজাকে নির্যাতনের ঘটনায় দায়ের করা রিটের ওপর সোমবার (১১ নভেম্বর) বিচারপতি শেখ হাসান আরিফ ও বিচারপতি রাজিক আল জলিলের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ নির্দেশনাসহ এ মামলার রায় দেন। আদালতে মানবাধিকার সংগঠন চিলড্রেন চ্যারিটি অব বাংলাদেশের করা রিটের পক্ষে শুনানিতে ছিলেন ব্যারিস্টার আব্দুল হালিম। তাকে সহযোগিতা করেন অ্যাডভোকেট ইশরাত হাসান।
রায় ঘোষণার সময় আদালত জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের প্রতি কয়েকটি নির্দেশনা দিয়েছেন। নির্দেশনাগুলো হলো-
‘মানবাধিকার লঙ্ঘন ও অভিযোগ নিষ্পত্তির বিষয়ে মানবাধিকার কমিশন যে খসড়া নীতিমালা তৈরি করেছে তা সুশীল সমাজের পরামর্শ নিয়ে যথাযথ সময়ের মধ্যে সম্পন্ন করতে হবে।’
‘কমিশনকে আইনের ১৬ ধারা অনুসারে পদক্ষেপ গ্রহণ করতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এই ধারা অনুসারে কমিশন দেওয়ানি আদালতের ক্ষমতা প্রয়োগ করতে পারে এবং তদন্ত বা অনুসন্ধানের স্বার্থে সাক্ষী তলব, নথি তলব বা জামিনযোগ্য পরোয়ানা ইস্যু করতে পারে।’
‘যদি কমিশনের কোনও সুপারিশ সরকার মান্য না করে তাহলে সংশ্লিষ্ট কমিশন আইনের ১৯ ধারা এবং সংবিধানের ১০২ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী প্রতিকার চাইতে হাইকোর্টের নজরে আনতে হবে।’
‘কমিশন থেকে যেসব আদেশ দেওয়া হয় সেসব আদেশের সত্যায়িত অনুলিপি ৩০ দিনের মধ্যে ইস্যু করতে বলা হয়েছে। এমন মানবাধিকার কমিশনের অভিযোগ নিষ্পত্তিতে তাদের পদ্ধতিগুলো নির্ধারণ করে নিতে হবে।’
‘কমিশনে কোনও অভিযোগ আসার পর তা যেন একজন ব্যক্তির স্বাক্ষরে নিষ্পত্তি বা আদেশ দেওয়া না হয়। কমিশন আইনের ১১ (৩) বা ২৮ ধারার নিয়ম অনুসারে যথাযথ ক্ষমতা প্রয়োগ করে আদেশ প্রদানকারীদের নাম ও পরিচয় লিখতে হবে।’
‘গৃহকর্মী খাদিজার (রাজধানীর মিরপুরে নির্যাতনের শিকার) বিষয়ে মানবাধিকার কমিশনকে ৬০ দিনের মধ্যে পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। এ সময় খাদিজা ও পরিবারের বক্তব্য শুনে খাদিজার মানবাধিকার লঙ্ঘিত হওয়ার অভিযোগ পাওয়া গেলে কমিশনের ১৯ ধারা অনুসারে অন্তর্বর্তীকালীন ক্ষতিপূরণ দিতে সরকারকে সুপারিশ করতে হবে।’
পরে ব্যারিস্টার আব্দুল হালিম বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘রায় ঘোষণার সময় আদালত বলেছেন, এতদিনে হয়তো পুলিশ খাদিজার পরিবারকে পক্ষপাতদুষ্ট করে ফেলেছে যেটা প্রতিবেদনে দেখা গেছে। ওই প্রতিবেদনে খাদিজার কোনও অভিযোগ নেই এবং তার বাবা সংক্ষুব্ধ নন। এ কারণে আদালত বিস্ময় ও হতাশা প্রকাশ করেছেন। আদালত বলেছেন, পাঁচ বছর পর মানবাধিকার লঙ্ঘনে ক্ষতিগ্রস্ত একজন ব্যক্তি বসে থাকবেন না। পুলিশ ইতোমধ্যে তাদের পক্ষপাতদুষ্ট করে ফেলেছে। এরপরও যেহেতু বিষয়টি মানবাধিকার কমিশনে গেছে তাই কমিশনের এখনও অনেক কিছু করণীয় আছে। তাই কমিশনকে খাদিজার অভিযোগ পর্যালোচনা করে ক্ষতিপূরণ দিতে সরকারকে সুপারিশ করতে বলা হয়েছে।’
প্রসঙ্গত, ২০১৩ সালে খাদিজাকে নির্যাতনের ঘটনা ঘটে। ওই ঘটনায় একটি জাতীয় পত্রিকায় প্রতিবেদন প্রকাশ হয়। এর পরিপ্রেক্ষিতে মানবাধিকার সংগঠন চিলড্রেন চ্যারিটি ফাউন্ডেশনের পক্ষ থেকে জাতীয় মানবাধিকার কমিশনকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণে চিঠি দেওয়া হয়। এর পাঁচ বছর কেটে গেলেও কোনও ব্যবস্থা না নেওয়ায় ২০১৮ সালের ২২ ডিসেম্বর হাইকোর্টে রিট দায়ের করা হয়।
ওই রিটের শুনানি নিয়ে আদালত গত ৯ জানুয়ারি মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনায় যথাযথ পদক্ষেপ নিতে জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের ব্যর্থতা কেন অবৈধ ঘোষণা করা হবে না তা জানতে চেয়ে রুল জারি করেছিলেন হাইকোর্ট। এছাড়া খাদিজাকে নির্যাতনের ঘটনায় কী ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে তা জানাতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সচিবকে নির্দেশ দিয়েছিলেন আদালত। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সচিব, জাতীয় মানবাধিকার কমিশন কর্তৃপক্ষসহ সংশ্লিষ্টদের এ রুলের জবাব দিতে বলা হয়েছিল। যার ধারাবাহিকতায় দীর্ঘদিন পর মামলাটির রুলের ওপর শুনানি শেষে রায় ঘোষণা করেন হাইকোর্ট।