২১শে নভেম্বর, ২০২৪ ইং | ৬ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ | সন্ধ্যা ৭:৫৫

নতুন করে মাথা গোঁজার চেষ্টায় ‘বুলবুলে’ ক্ষতিগ্রস্তরা

ভোলা প্রতিনিধি : ঘূর্ণিঝড় বুলবুলের আঘাতে বেশ কয়েকটি জেলায় বহু ঘরবাড়ি বিধ্বস্ত হয়েছে। মারা গেছেন ১৪ জনের মতো। আহত হয়েছেন আরও অনেকে। ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বিভিন্ন ফসল। ঘূর্ণিঝড়ের তাণ্ডবে ক্ষতিগ্রস্ত ভোলার কয়েক শ পরিবার খোলা আকাশের নিচে মানবেতর দিন কাটাচ্ছে। বসতভিটা আর সহায়-সম্বল হারিয়ে নিঃস্বপ্রায় হয়ে পড়েছেন তারা।

ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের অভিযোগ, রবিবার দুপুর ১২টার দিকে প্রশাসনের লোকজন ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা পরিদর্শন করে আর্থিক সহায়তার আশ্বাস দিলেও তাদের তাৎক্ষণিক কোনো ত্রাণসামগ্রী দেয়নি। এতে করে ওই এলাকার লোকজন অনাহারে-অর্ধাহারে খোলা আকাশের নিচে দিনাতিপাত করছেন। পরিবার-পরিজন নিয়ে চরম অনিশ্চয়তায় মধ্যে পড়েছে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলো। তারপরেও ক্ষতচিহ্ন নিয়েই মাথা গোঁজার চেষ্টা করছেন ক্ষতিগ্রস্তরা।

জানা যায়, ঘূর্ণিঝড় বুলবুলের আঘাতে ভোলার চরফ্যাশন ও লালমোহন উপজেলায় বহু বসতঘর বিধ্বস্ত হয়েছে। এর মধ্যে কিছু ঘর সম্পূর্ণ আর কিছু আংশিক বিধ্বস্ত হয়েছে।

শনিবার দিবাগত রাত শেষে চরফ্যাশন উপজেলার চরকলমী, নজরুল নগর, এওয়াজপুর, ওসমানগঞ্জ এবং মুজিবনগর ইউনিয়নে বয়ে যাওয়া ঝড়ে বহু ক্ষয়ক্ষতি হয়।

নজরুল নগর ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান রুহুল আমিন হাওলাদার জানান, তার ইউনিয়নে ৩১টি ঘর সম্পূর্ণ এবং ৩০টি ঘর আংশিক বিধ্বস্ত হয়েছে। বিদ্যুতের তার ছিঁড়ে গেছে এবং অসংখ্য গাছ উপড়ে পড়েছে। চর কলমী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান কাওসার আহমেদ জানান, তার ইউনিয়নে ২২টি ঘর সম্পূর্ণ এবং ১৬টি ঘর আংশিক বিধ্বস্ত হয়েছে।

এছাড়া এওয়াজপুর ইউনিয়নে আটটি এবং ওসমানগঞ্জ ইউনিয়নে ৭টি ঘর সম্পূর্ণ বিধ্বস্ত হয়েছে। বৈরি আবহাওয়ার কারণে মোবাইল যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন থাকায় উপজেলার মূল ভূখণ্ড থেকে বিচ্ছিন্ন দ্বীপ মুজিব নগর, ঢালচর ইউনিয়নের ক্ষয়ক্ষতির তথ্য পাওয়া যায়নি। তবে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ আরও বাড়তে পারে বলে জানিয়েছে স্থানীয় জন প্রতিনিধিরা।

চরফ্যাশন উপজেলার চরকলমী ইউনিয়নের দক্ষিণ মঙ্গলগ্রামের হাসেম হাওলাদার বাড়িতে গিয়ে ঝড়ের তাণ্ডবে ধ্বংসচিহ্ন দেখা গেছে।

হাসেম হাওলাদার জানান, প্রচণ্ড গতির বাতাস মাথার ওপর থেকে বসতঘরগুলো উড়িয়ে নিয়ে যায়। তার বাড়িতে ৩টি টিনের ঘর ছিল। ঝড়ে ওই তিনটি ঘরই উড়িয়ে নিয়ে গেছে।

সরেজমিন দেখা যায়, হাসেম হাওলাদার ও তার পরিবারের লোকজন বিধ্বস্ত ঘরের টিন-কাঠ কুড়িয়ে এনে আবার নতুন করে মাথা গোঁজার ব্যবস্থা করছেন। হাসেম জানান, গরিব মানুষ হওয়ায় কোনো রকমে তার সংসার চলত। এবার ঝড়ও তাদের মাথা গোঁজার ঠাঁই ঘরটি ভেঙেচুরে উড়িয়ে নিয়ে যায়। নিঃস্ব হয়ে পড়েছেন তারা। তারপরেও ক্ষতচিহ্ন বুকে নিয়েই মাথা গোঁজার চেষ্টা করছেন তিনি।

ওই এলাকার আরও কয়েকজন জানান, ঘূর্ণিঝড়ের পর থেকে অনেক মানুষ খোলা আকাশের নিচে রয়েছে। এলাকায় খাদ্য সহায়তা দেওয়া হলেও এখনো অনেকে এই সহায়তা পাননি। তবে খাদ্য সহায়তার চেয়েও এখন প্রয়োজন মাথা গোঁজার ঘর নির্মাণের জন্য টিন ও অর্থ সহায়তা প্রয়োজন বলে তারা জানান।

উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. রুহুল আমিন এবং ঘূর্ণিঝড় প্রস্তুতি কর্মসূচির সহকারী পরিচালক মোকাম্মেল হক লিপন চরকলমী ও নজরুল ঝড়ের পর নগর ইউনিয়নের ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা পরিদর্শন করেছেন। এ সময় তারা ক্ষতিগ্রস্তদের মধ্যে শুকনো খাবার বিতরণ করেন।

অন্যদিকে লালমোহন উপজেলার লর্ডহার্ডিঞ্জ ইউনিয়নের ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা চর পেয়ারীমোহন গ্রামের বাসিন্দা আবু জাহের বলেন, শনিবার রাত নয়টার দিকে ঘূর্ণিঝড়ে ওই এলাকার বেশ কিছু ঘর বিধ্বস্ত হয়। কিন্তু ওই এলাকার ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারকে কোনো ত্রাণসামগ্রী দেয়া হয়নি।

ঘূর্ণিঝড়ে আহত আরিফ বলেন, টর্নেডোর আঘাতে তাদের বসতঘরটি উড়িয়ে নিয়ে যায়। এতে তার বাবা-মা ভাইসহ পরিবারের ছয়জন আহত হয়েছে। কিন্তু তারা এখনও কোনো সরকারি সহায়তা বা ত্রাণ পায়নি।

উপজেলা নির্বাহী অফিসার হাবিবুল হাসান রুমি বলেন, আমরা ঘূর্ণিঝড়ে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা পরিদর্শন করেছি। প্রশাসনের পক্ষ তাদের তালিকা তৈরি করা হচ্ছে। প্রকৃত ক্ষতিগ্রস্তদের চিহ্নিত করে প্রয়োজনীয় খাদ্য ও নির্মাণসামগ্রী বিতরণ করা হবে।

প্রকাশ :নভেম্বর ১১, ২০১৯ ১:১৮ অপরাহ্ণ