এদিকে, প্রতিদিন বাজারে বাড়ছে পেঁয়াজের মূল্য। উঠতে উঠতে এক কেজি দেশি পেঁয়াজ শুক্রবার বিক্রি হয়েছে ১৬০ টাকা দরে। কারও কোনও নিয়ন্ত্রণ নেই। কারও কোনও নির্দেশনাও মানছেন না ব্যবসায়ীরা। এই নৈরাজ্যের জন্য ব্যবসায়ীরা একজন আরেকজনকে দায়ী করছেন।
খুচরা ব্যবসায়ীরা বলছেন, পাইকারি ব্যবসায়ীদের কারণে পেঁয়াজের মূল্য বেড়েছে। পাইকারি ব্যবসায়ীরা বলছেন আমদানিকারকরা কারসাজি করে মূল্য বাড়িয়েছেন। আর আমদানিকারকরা বলছেন, পেঁয়াজের বাজারে সিন্ডিকেট কাজ করছে। এই সিন্ডিকেটের কারণেই পেঁয়াজের বাজারে নৈরাজ্য সৃষ্টি হয়েছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, পেঁয়াজের অস্বাভাবিক মূল্য বাড়ায় নাভিশ্বাস উঠেছে সাধারণ ক্রেতাদের। শুক্রবার (০৮ নভেম্বর) প্রতিকেজি পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ১৬০ টাকা কেজি দরে।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, বেসরকারি ২/৩টি ব্যবসায়িক গ্রুপকে দিয়ে পেঁয়াজের বড় চালান আনার উদ্যোগ নিলেও তা আজও দেশে পৌঁছায়নি। ওই পেঁয়াজ কবে নাগাদ আসবে, তা ঠিক করে বলতে পারছেন না কেউই। এদিকে, শুক্রবার রংপুরে এক অনুষ্ঠান শেষে বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশী বলেছেন, ‘পেঁয়াজের মূল্য ১০০ টাকার নিচে আসার সম্ভাবনা আপাতত নেই।’
এ প্রসঙ্গে একটি বেসরকারি ব্যাংকের কর্মচারী হারুন অর রশিদ বলেন, এমনিতেই বাজার অস্থির। তার ওপর মন্ত্রীদের নানা ধরনের মন্তব্য বাজারকে আরও অস্থির করে তুলেছে। মন্ত্রী যখন বলেন পেঁয়াজের কেজি ১০০ টাকার নিচে নামবে না, তখন কেন ব্যবসায়ীরা মূল্য কমাবেন? তাদের দায়িত্ব বাজার নিয়ন্ত্রণ করা। তারা যখন সেই দায়িত্ব পালন করতে পারছেন না তখন উচিত চুপচাপ থাকা। তারা তা না করে বাজার অস্থির করার মসলা মেশাচ্ছেন ’
রাজধানীর শাজাহানপুর এলাকার খুচরা ব্যবসায়ী আলতাফ হোসেন বলেন, ‘আমরা যে মূল্যে কিনি তার সঙ্গে সামান্য মুনাফা যুক্ত করে বিক্রি করি। সিন্ডিকেট বুঝি না। করিও না। এর সঙ্গে খুচরা ব্যবসায়ীরা জড়িত নন।’
শ্যামবাজারের পাইকারি ব্যবসায়ী মোবারক হোসেন বলেন, ‘আমরা কেজিতে ২ থেকে ৫ টাকা ব্যবসা করি, এর বেশি নয়। কোনও সিন্ডিকেটের সঙ্গে আমরা জড়িত নই।’ তিনি বলেন, ‘আমদানিকারকরা একটি নির্দিষ্ট দরে প্রতিমণ পেঁয়াজ বিক্রি করেন। আমরা সেই দরেই কিনি। এখানে হেরফের করার কোনও সুযোগ নেই।’
আমদানিকারক হাজী মোহাম্মদ মাজেদ বলেন, ‘মিয়ানমার থেকে পেঁয়াজ কিনি। ওই দেশের ব্যবসায়ীরা যে দর ঠিক করে দেন, সেই ধরেই আমাদের কিনতে হচ্ছে। পেঁয়াজের বাজার অস্থির করার পেছনে আমাদের দায়ী করাটা ঠিক হবে না।’
এদিকে, খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, শুধু খুচরা, পাইকারি বা আমদানিকারক একা নন, পেঁয়াজের বাজার অস্থির করার পেছনে সব ধরনের ব্যবসায়ীর হাত রয়েছে। ভারত পেঁয়াজ রফতানি করবে না—এমন সংবাদ শোনার পর সব শ্রেণির ব্যবসায়ী নিজের মতো করে মূল্য বাড়িয়েছেন। যিনি যেভাবে পেরেছেন সেভাবেই মূল্য বাড়িয়েছেন।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে কনজুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব)-এর সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট হুমায়ুন কবীর বলেন, ‘একদিকে সরকারের ব্যর্থতা, অন্যদিকে ব্যবসায়ীদের অতি মুনাফার লোভ। এসব কারণে পেঁয়াজের বাজারে নৈরাজ্য নেমে এসেছে। সরকার আগে থেকে ব্যবস্থা নিলে এমন পরিস্থিতি হতো না।’
গত সপ্তাহে ভারত শর্তসাপেক্ষে সীমিত আকারে পেঁয়াজ রফতানির অনুমতি দিলেও দেশের বাজারে এর কোনও প্রভাব পড়েনি। সাধারণ মানুষ আশা করেছিল—সীমিত আকারে হলেও পেঁয়াজ রফতানির সিদ্ধান্ত বাংলাদেশের জন্য কোনও সুসংবাদ বয়ে আনবে। কিন্তু আনেনি।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে শ্যামবাজারের পেঁয়াজ আমদানিকারক হাজী আবদুল মাজেদ বলেন, ‘আমরা পেঁয়াজের মূল্য বাড়াই না। যে দরে আমদানি করি, সেই দরের সঙ্গে পরিবহন খরচ ও মুনাফা যোগ করে বিক্রি করি।’
জানতে চাইলে বাণিজ্য সচিব ড. জাফর উদ্দিন বলেন, ‘আগামী কয়েক দিনের মধ্যে মেঘনা, সিটি ও এস আলম গ্রুপের আমদানি করা পেঁয়াজ দেশে পৌঁছাবে। নভেম্বরের শেষ সপ্তাহে দেশও নতুন পেঁয়াজ উঠতে শুরু করবে। তার আগেই নতুন পেঁয়াজ উঠতে শুরু করবে ভারতে।’ তখন ভারতের নিষেধাজ্ঞা উঠে গেলে দেশের বাজারে পেঁয়াজের মূল্য কমবে বলেও তিনি মনে করেন।