দেশজনতা অনলাইনঃ নীলফামারি জেলায় বাড়ছে শীতের প্রকোপ। শীতে সবচেয়ে বেশি অসহায় অবস্থায় আছে এ জেলার শ্রমজীবী মানুষ। তাই শীতবস্ত্র কিনতে তাদের ফুটপাতের দোকানগুলোতে ভিড় করতে দেখা যাচ্ছে।
জেলার ডিমলা উপজেলার তিস্তা চরের মানুষের মধ্যে সবচেয়ে বেশি শীত আতঙ্ক দেখা গিয়েছে।
জানা যায়, এখন পর্যন্ত জেলার ছয় উপজেলায় ৭ হাজার ৫০০ কম্বল বিতরণ করা হয়েছে। এর মধ্যে সদরের ২ হাজার ১৪০, ডিমলায় এক হাজার, ডোমারে এক হাজার, জলঢাকায় এক হাজার ২০০ কম্বল, কিশোরগঞ্জে এক হাজার ও সৈয়দপুর উপজেলায় এক হাজার ১৬০টি কম্বল বিতরণ করা হয়েছে। এসব কম্বল দ্রুত ইউনিয়ন পর্যায় বিতরণ করা হবে।
নীলফামারী জেলা শহরের বড় মাঠের পুরাতন কাপড়ের দোকানে কাপড় কিনতে আসা গৃহিনী শরিফা বেগমের সঙ্গে কথা হলে তিনি জানান, তাদের আট সদস্যের পরিবার। ছেলে ও মেয়ের জন্য অভিজাত দোকান থেকে গরম কাপড় কেনা সম্ভব না। তাই পুরনো কাপড়ের দোকানে এসেছেন।
ফুটপাত থেকে শুরু করে অভিজাত মার্কেটগুলোতে গরম কাপড়ের চাহিদা বেড়েছে। শহরের অলিতে-গলিতে কাপড়ের দোকান সাজিয়ে বসেছেন মৌসুমি ব্যবসায়িরা। এসব দোকানে কম দামে বিদেশি পুরোনো গরম কাপড় পাওয়া যায়। প্রতিদিন গ্রাম ও শহরের শত শত নারী-পুরুষ আসছেন এ দোকানগুলোতে। সকাল থেকে শুরু করে রাত ১০টা পর্যন্ত এসব দোকান খোলা থাকে। কম পয়সায় পছন্দের গরম কাপড় দেখে শুনে কিনছেন ক্রেতারা।
নীলফামারী শহরে সপ্তাহে দুইদিন (বুধবার, রবিবার) বড় মাঠে মৌসুমি ব্যবসায়ী ছাড়াও ফুটপাতে দোকান বসে। ফুটপাতের দোকানদার মোতারুল ইসলম বলেন, সব শ্রেণি পেশার মানুষ আমাদের কাছে গরম কাপড় কিনতে আসে। ১৫ টাকা থেকে ১৫০ টাকা পর্যন্ত শীতের কাপড় বিক্রি হচ্ছে। এরমধ্যে সুয়েটার, ট্রাওজার, জ্যাকেট, মাফলার, মাংকি ক্যাপ, প্যান্ট, সার্ট ও মোজাসহ হরেক রকমের শীতের কাপড় বিক্রি হচ্ছে।
তিনি জানান, নিম্ন ও মধ্যবিত্ত শ্রেণির ক্রেতারই বেশি। সেই সঙ্গে ভ্যান চালক, রিকশা চালক, দিন মজুরসহ হতদরিদ্র ও শীতার্ত মানুষ শীতবস্ত্র কিনছেন।
নীলফামারী সদরের রামনগর ইউনিয়নের বাহালী পাড়া গ্রামের মহির উদ্দিন (৪৫) বলেন, ‘শীতের পোশাক বাজারে উঠছে শুরু করেছে। এখান থেকে ইচ্ছেমতো কম দামে গরম কাপড় কেনা যায়।
বড়মাঠে সৈয়দপুরের মৌসুমি কাপড় ব্যবসায়ী মোরসালিন বলেন, আমরা সারা বছর কাপড় নিয়ে জেলার বিভিন্ন এলাকায় ঘুরে ঘুরে ফেরি (বিক্রি) করি। মহাজনরা চট্রগাম থেকে বিদেশি পুরনো কাপড়ের চালান নিয়ে আসেন। আমরা কেজি দরে সেগুলি কিনে বিভিন্ন হাটে-বাজারে বিক্রি করি। এতে আমরাও লাভবান হই, গরিব মানুষও সস্তায় কাপড় কিনতে পেরে উপকৃত হয়।
নীলফামারী শিল্প ও বনিক সমিতির সাবেক সভাপতি ও সচেতন নাগরিক কমিটির (সনাক) সভাপতি এসএম শফিকুল আলম ডাবলু বলেন, ‘পুরনো কাপড় না আসলে গরিব ও নিম্ন আয়ের মানুষ চরম বিপাকে পড়তো।’
তিনি আরও বলেন, ‘শীতের তীব্রতা বাড়তে শুরু করেছে। সরকারি ও বেসরকারিভাবে শীতার্ত মানুষের মাঝে এখন পর্যন্ত শীতবস্ত্র বিতরণ শুরু হয়নি। তবে যেভাবে শীতের প্রকোপ দেখা যাচ্ছে, এবার শীত খানিকটা বেশি হবে।’
তবে জেলার ত্রাণ ও পূনর্বাসন কর্মকর্তা এসএ হায়াত বলেন, ‘এখন পর্যন্ত ছয় উপজেলায় ৭ হাজার ৫০০ কম্বল বিতরণ করা হয়েছে। এছাড়াও ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে আরও শীত বস্ত্র চাওয়া হয়েছে।’