নিউইয়র্কে চিকিৎসাধীন বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান ও ঢাকা সিটি কর্পোরেশনের সাবেক মেয়র বীর মুক্তিযোদ্ধা সাদেক হোসেন খোকার শারীরিক অবস্থা একই রকম রয়েছেন।
রোববার বেলা ১০ টার দিকে বাবার কাছে হাসপাতালে থাকা ইঞ্জিনিয়ার ইশরাক হোসেন বলেন, ‘বাবার অবস্থা একই রকম। খুবই ক্রিটিক্যাল অবস্থা।’
তিনি বাবার জন্য সকলের কাছে দোয়া চেয়েছেন।
তিনি আরো বলেন, ‘যদি কোনো দুর্ঘটনা ঘটে যায়, পাসপোর্ট জটিলতার কারণে বাবাকে দেশে আনা যাবে কিনা তা নিয়ে সংশয় ছিলো। তবে সেই সমস্যার সমাধান হয়েছে।’
সাদেক হোসেন খোকার স্ত্রী ইসমত আরা তাকে ও তার স্বামীকে দ্রুত পাসপোর্ট দেওয়ার জন্য নিউইয়র্কে ১ নভেম্বর বাংলাদেশ দূতাবাসে আবেদন করেন।
আবেদনে তিনি লিখেছেন, ২০১৭ সালে পাসপোর্টের মেয়াদ শেষ হয়। এরপর ওই বছর ২৬ জানুয়ারি নতুন পাসপোর্টের জন্য আবেদন করি। তারপর থেকে এ পর্যন্ত বারবার যোগাযোগ করেও পাসপোর্ট পাই নি।
স্বামীর বর্তমান অবস্থা উল্লেখ করে তিনি লিখেছেন, ‘আমার স্বামী বাংলাদেশের একজন সুপিরচিত রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব। তার ক্যান্সার চিকিৎসার জন্য গত পাঁচ বছর ধরে আমরা নিউইয়র্কে আছি। এখন তার শারীরিক অবস্থার মারাত্মক অবনতি ঘটেছে। গত দুই সপ্তাহ নিবিড় পর্যবেক্ষণে আছেন। সবশেষ তাকে বিশেষ ব্যবস্থায় অক্সিজেন দিয়ে কোনো মতে বাঁচিয়ে রাখা হয়েছে। পাসপোর্ট না থাকায় বর্তমান পরিস্থিতিতে জীবিত বা মৃত কোনো অবস্থায় তার দেশে ফেরার সুযোগ নেই।’
এ অবস্থায় মানবিক বিবেচনায় দ্রুততম সময়ে তাদের জন্য পাসপোর্ট ইস্যু করার অনুরোধ জানান তিনি।
দেশে আনার ব্যাপারে কোনো সমাধান হয়েছে কিনা জানতে চাইলে ইশরাক হোসেন বলেন, ‘আজ কনস্যুলেট থেকে মৌখিক ভাবে জানিয়েছে তাকে দেশে নেওয়ায় কোনো সমস্যা হবে না। তাই তেমন যদি কোনো কিছু হয়ে যায়, বাবার শেষ ইচ্ছা অনুযায়ী তাকে দেশে নিয়ে যাওয়া হবে।’
২০১৪ সালের মে মাসে ক্যান্সার চিকিৎসার জন্য সস্ত্রীক যুক্তরাষ্ট্রে গিয়েছিলেন সাদেক হোসেন খোকা। এরপর আর দেশে আসেননি।
গত ১৮ অক্টোবর সকালে খোকার শারীরিক অবস্থার অবনতি হলে তাৎক্ষনিক ভাবে তাকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
নিউইয়র্কের মেমোরিয়াল স্লোয়েন ক্যাটারিং ক্যান্সার ইনস্টিটিউটে চিকিৎসাধীন সাদেক হোসেন খোকার অবস্থা সংকটাপন্ন। চিকিৎসকরাও আশা ছেড়ে দিয়েছেন। এ অবস্থা থেকে তার ফিরে আসার সম্ভাবনা ক্ষীণ।
১৯৭১ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র থাকাকালীন তিনি মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছিলেন। আশির দশকে বামপন্থি রাজনীতি ছেড়ে বিএনপিতে আসেন খোকা।
১৯৯১ সালের জাতীয় নির্বাচনে ঢাকা-৭ আসনে (সূত্রাপুর-কোতোয়ালি) শেখ হাসিনাকে পরাজিত করে প্রথমবারের মতো এমপি নির্বাচিত হয়ে আলোচনায় আসেন তিনি। এসময় তিনি যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পান।
১৯৯৬ সালের নির্বাচনে ঢাকার আটটি আসনের মধ্যে সাতটিতে বিএনপি প্রার্থী পরাজিত হলেও একমাত্র খোকাই নির্বাচিত হন। দিনে দিনে তার জনপ্রিয়তা বাড়তে থাকে। ঢাকার রাজনীতিতে খোকা অন্যতম হয়ে ওঠেন।
২০০১ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনেও তিনি জয়ী হন। এসময় তিনি মৎস্য ও পশুসম্পদমন্ত্রীর দায়িত্ব পান।
২০০২ সালের ২৫ এপ্রিল অবিভক্ত ঢাকা সিটি করপোরেশন নির্বাচনে তিনি মেয়র নির্বাচিত হন। ২০১১ সালের ২৯ নভেম্বর পর্যন্ত তিনি সুনামের সাথে অবিভক্ত ঢাকার মেয়রের দায়িত্ব পালন করেন।