২১শে নভেম্বর, ২০২৪ ইং | ৬ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ | রাত ৮:১২

কাউন্সিলর বাবুল ও চাচা ওয়াকিল পুলিশের নজরদারিতে

দেশজনতা অনলাইনঃ চলমান শুদ্ধি অভিযানেও ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের ১৮ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর জাকির হোসেন বাবুলের অপতৎপরতা থেমে নেই। অভিযোগ রয়েছেÑ ঢাকা মহানগর উত্তর যুবলীগের সিনিয়র সহসভাপতি জাকির হোসেন বাবুল ১৮ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর হলেও গুলশান, বারিধারা, শাহজাদপুর, নতুন বাজার, নর্দ্দা ও কালাচাঁদপুরসহ আশপাশের এলাকার নিয়ন্ত্রণ তার হাতে। এসব এলাকার জমিদখল, চাঁদাবাজি, টেন্ডারবাজিসহ বিভিন্ন ধরনের অনৈতিক কর্মকাণ্ড চলে বাবুলের নির্দেশেই। স্থানীয়দের অভিযোগÑ চাচা ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের কোষাধ্যক্ষ ওয়াকিল উদ্দিন কাউন্সিলর বাবুলের নেপথ্য সহযোগী। জানা গেছে, চলমান শুদ্ধি অভিযানে অন্য অনেক কাউন্সিলরের মতো বাবুলও নজরদারিতে রয়েছেন। চাচা-ভাতিজার কর্মকাণ্ড খতিয়ে দেখছে আইনশৃঙ্খলাবাহিনী।।

স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের অভিযোগ, কাউন্সিলর জাকির হোসেন বাবুলের নিজস্ব ক্যাডার বাহিনী রয়েছে, যা ব্যবহার করে নানা উপায়ে তিনি হয়েছেন কোটিপতি। তার বিরুদ্ধে রয়েছে জমিদখল, চাঁঁদাবাজি, কড়াইল বস্তিতে অবৈধভাবে গ্যাস সংযোগ প্রদানসহ নানা অভিযোগ। কেউ কেউ বলেন, গুলশান, বারিধারা, শাহজাদপুর, নর্দ্দা ও কালাচাঁদপুরসহ আশপাশের এলাকায় সে অঘোষিত মহারাজা। তার আদেশেই চলে ওই এলাকার আইন। ফুটপাথের দোকান থেকে শুরু করে বড় বড় ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান সবখানেই চলে তার চাঁদাবাজি। চলাফেরা করেন ক্যাডার বাহিনী নিয়ে। এলাকায় একক নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করে বাবুল গড়ে তুলেছেন সম্পদের বিশাল পাহাড়, যা নিয়ে দুদকের অনুসন্ধান চলমান রয়েছে বলে জানা গেছে।
স্থানীয়দের অভিযোগ, ১৮ নম্বর ওয়ার্ডে কোনো বাড়ি কেনাবেচা করতে হলে মোট টাকার ওপর ২০ শতাংশ কমিশন দিতে হয় কাউন্সিলর বাবুলের ক্যাডারদের। এ ছাড়া বাবুলের সবুজ সঙ্কেত ছাড়া বারিধারায় কারো পক্ষে গাড়ির ব্যবসা করা অসম্ভব। কড়াইল বস্তিবাসীর পরিশোধিত গ্যাস বিল সরকারের কোষাগারে জমা পড়ে না। মোটা অঙ্কের এই গ্যাস বিলের টাকা মিলেমিশে আত্মসাৎ করেন কাউন্সিলরসহ ও অন্য নেতারা। এত দিন মুখ না খুললেও সম্প্রতি দুর্নীতির বিরুদ্ধে শুদ্ধি অভিযান শুরু হওয়ার পর থেকে এলাকাবাসী ও আওয়ামী লীগ নেতারা বাবুলের অপকর্মের বিরুদ্ধে মুখ খুলতে শুরু করেছেন।
তাদের বক্তব্য অনুযায়ী, বাবুল সব কিছুর নিয়ন্ত্রক হলেও তাকে চালাচ্ছেন তার চাচা সাবেক ওয়ার্ড কমিশনার ও ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের কোষাধ্যক্ষ ওয়াকিল উদ্দিন বাউল। তিনি এক দিকে জাতীয় পার্টি, আওয়ামী লীগ, বিএনপি সবাইকে ম্যানেজ করার কৌশল জানেন। আবার প্রশাসনিক লোকদের ম্যানেজ করে সুবিধা আদায়ের কৌশলে পারদর্শী।
আওয়ামী লীগ নেতারা জানান, ১৯৯০ সালে এরশাদ সরকারের পতনের সাথে সাথে আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে যোগ দেন ওয়াকিল; কিন্তু ১৯৯১ সালের বিএনপি সরকার গঠন করলে ওয়াকিল সুবিধাবঞ্চিত হবে ভাবা হলেও তা হয়নি। অভিযোগ রয়েছে বিএনপি নেতাদের ম্যানেজ করে জমি দখল ও চাঁদাবাজির নিয়ন্ত্রণ নিজের কাছে রাখতে সক্ষম হন। এরপর ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসার পর হাউজিং ব্যবসায় মনোনিবেশ করেন এবং নিরীহ মানুষের জমি দখল করে প্রচুর অর্থসম্পদের মালিক হন।
নানা অপকর্মের জন্য তত্ত্বাবধায়ক সরকারের শুরুতেই গ্রেফতার হন তিনি; কিন্তু বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে বসুন্ধরা থেকে ঘুষ লেনদেনের জবানবন্দী দিয়ে জেলখানা থেকে বের হয়ে যান তিনি। প্রধানমন্ত্রীর বিরুদ্ধে দেয়া ওয়াকিলের জবানবন্দীর অডিও-ভিডিও এখনো ভাইরাল। নেতাকর্র্মীদের অভিযোগÑ ওয়াকিলসহ তার বাহিনীর সব অনুপ্রবেশকারীর প্রভাবে কোণঠাসা স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীরা। এসব অভিযোগের বিষয়ে বাবুল ও ওয়াকিলের সাথে নানা মাধ্যমে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও পাওয়া যায়নি। সূএঃ( নয়া দিগন্ত )

প্রকাশ :নভেম্বর ২, ২০১৯ ১১:১১ পূর্বাহ্ণ