পুরো একটি বছর সাকিবের এভাবে ক্রিকেটের বাইরে থাকাটা সত্যিই হতাশাজনক বাংলাদেশের ক্রিকেটের জন্য। হাবিবুল বাশার তো এক কথায় বলেই ফেললেন, ‘বাংলাদেশের ক্রিকেটের সবচেয়ে দুঃখের, বেদনার দিন। গোটা জাতি বেদনায় নীল।’
তার মতে সাকিব শক্ত মানসিকতার। আর এটাই তাকে আরও পরিণত করবে। এক বছর পর যখন তিনি ক্রিকেটে ফিরবেন, তখন অন্য সাকিবকে দেখা যাবে বলে মনে করেন সাবেক এই অধিনায়ক। শুধু তিনিই নন, সাবেক ক্রিকেটার থেকে শুরু করে সতীর্থ, বন্ধু-বান্ধব এবং ভক্তরাও মনে করেন এমনটা সম্ভব তিনি সাকিব বলেই।
গত কিছুদিন ক্রিকেটাঙ্গনে ইস্যুর অভাব ছিল না। ভারত সফরের ঠিক আগে ক্রিকেটারদের আন্দোলন। তামিমের সফর থেকে নিজেকে গুটিয়ে নেওয়া। গ্রামীণফোনের সঙ্গে চুক্তির কারণে সাকিব আল হাসানকে কারণ দর্শানোর নোটিশ। এসব বিষয় নিয়ে গত কয়েকদিন ধরে এমনিতেই উত্তাল ছিল ক্রিকেটাঙ্গন।
নতুন করে মঙ্গলবার সকাল থেকেই সাকিবের নিষেধাজ্ঞা নিয়ে গুঞ্জন ওঠে। সকাল গড়িয়ে বিকেল, বিকেল গড়িয়ে সন্ধ্যা। অবশেষে সাড়ে ছয়টার আইসিসি সংবাদ বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে সাকিবের নিষেধাজ্ঞার বিষয়টি নিশ্চিত করে।
আইসিসির সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে লেখা ছিল−তিনটি ম্যাচে জুয়াড়ির প্রস্তাব গোপন রাখায় সাকিবকে দুই বছরের নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়েছে। মূলত আইসিসির দুর্নীতিবিরোধী আইনের তিনটি ধারা ভেঙে এই শাস্তি পেয়েছেন সাকিব। তবে শুনানিতে সবকিছু মেনে নেওয়ায় এক বছরের স্থগিত নিষেধাজ্ঞার বিধান রেখেছে আইসিসি।
সাকিবের নিষেধাজ্ঞার খবরটি সন্ধ্যার পর এলেও বোর্ড প্রধান দুপুরের মধ্যেই বিসিবিতে উপস্থিত হয়েছিলেন। আইসিসির ঘোষণার আগে কোনোভাবেই বিসিবির প্রতিক্রিয়া জানানোর সুযোগ ছিল না। তাই বিসিবিও চুপ ছিল এই ইস্যুতে। অপেক্ষায় ছিল আইসিসির আনুষ্ঠানিক বার্তার।
আইসিসির বিজ্ঞপ্তির পর সাকিবও বনানী থেকে মিরপুরে আসেন রাতে। সন্ধ্যা সাতটা থেকে প্রধান ফটকের সামনে সাকিবের জন্য অপেক্ষায় থাকে গণমাধ্যমকর্মীরা। কিন্তু সাকিব এলেন রাত ৮টায়। তাও আবার অগোচরে স্টেডিয়ামের তিন নম্বর গেট দিয়ে! ততক্ষণে সাকিবকে ঘিরে হুলুস্থুল অফিসে ঢোকার প্রধান ফটকে।
সাকিব বিসিবিতে এসে সোজা চলে যান বিসিবি প্রধানের রুমে। সেখানে বিসিবির অন্য পরিচালকদের সঙ্গে আধাঘণ্টার মতো বৈঠক করলেন। এরপর হাজির হন সংবাদ সম্মেলনে। সেখানে তিনি লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন।
আইসিসির কাছে যে বক্তব্য দিয়েছিলেন, সেটাই পড়ে শোনান সবার সামনে। প্রশ্ন করলেও লিখিত বক্তব্যের বাইরে অন্য কিছু বলেননি। বিশ্বসেরা এই অলরাউন্ডারের বক্তব্য শেষ হতেই বোর্ড প্রধান তার বক্তব্য দেন। বিস্ময় প্রকাশ করে বোর্ড প্রধান বলেন, ‘আমরা আসলে ব্যথিত ও বিস্মিত। এই নিষেধাজ্ঞায় সাকিবের চেয়েও বেশি ব্যথিত আমরা। সাকিব খেলতে পারবে না, এটা আসলে মানা যায় না।’
বুধবার তিনটার ফ্লাইটে দিল্লির উদ্দেশে রওনা দেবে বাংলাদেশ দল। সাকিবকে ছাড়া বাংলাদেশ দলকে কেবল ভারতের বিপক্ষেই নয়, আগামী একটি বছর আরও অনেক সিরিজেই খেলতে হবে। এমনকি ২০২০ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপেও পাওয়া যাচ্ছে না সাকিবকে।
ওয়ানডে অধিনায়ক মাশরাফি অবশ্য একটি জায়গায় বড় আশা দেখছেন। মানুষটা সাকিব বলেই তিনি মনে করেন আগামী ২০২৩ বিশ্বকাপে সাকিবের নেতৃত্বেই ফাইনাল খেলবে বাংলাদেশ!
শুধু মাশরাফি নন, ক্রিকেটভক্তদের প্রত্যাশা আগামী ২০২০ সালের ২৯ অক্টোবর নতুন সাকিবকেই হয়তো দেখবে ক্রিকেট বিশ্ব। যে সাকিবের হাত ধরে বাংলাদেশের ক্রিকেট আরও এগিয়ে যাবে।