দেশজনতা অনলাইন : ক্যাসিনো ব্যাবসার সঙ্গে সম্পৃক্ত এমন রাজনীতিবিদ কিংবা ব্যবসায়ীদের নামের তালিকা ক্রমশই দীর্ঘ হচ্ছে।
প্রথম পর্যায়ে ৪৩ জনের অবৈধ সম্পদের বিরুদ্ধে অনুসন্ধান শুরু করে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।
প্রতিদিনই পুরাতন তালিকার সঙ্গে নতুন নতুন অভিযোগসহ যোগ হচ্ছে নতুন নাম। সর্বশেষ তথ্যানুসারে এখন পর্যন্ত ৭৯ জন আলোচিত ব্যক্তিদের অবৈধ সম্পদের অনুসন্ধান চলমান রয়েছে দুদকে।
তালিকায় যুক্ত হওয়া নতুনদের মধ্যে রয়েছে ওমানে থাকা শীর্ষ সন্ত্রাসী নাদিম ও জার্মানিতে থাকা জিসান, ঢাকা (উত্তর) ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি এস এম রবিউল ইসলাম সোহেল, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এফ রহমান হল ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক মিজানুর রহমান, নয়াটোলার সেন্টু, বাড্ডার নাসির, বনানী গোল্ড ক্লাবের ব্যাবসায়ী আবদুল আওয়াল, আবুল কাশেম, ওয়ান্ডার্স ক্লাবের কর্মচারী আবুল কালাম ও শিক্ষা ভবনের ঠিকাদার মো. শফিকুল ইসলামসহ মোট ৭৯ জন।
তালিকায় নতুন যুক্ত হওয়া ব্যক্তিসহ অন্তত ৫০ জনের বিষয়ে তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ করার কাজ বেশ এগিয়েছে বলে জানা গেছে।
বিষয়টি নিশ্চিত করে দুদক সচিব মুহাম্মদ দিলোয়ার বখ্ত বলেন, ‘তালিকায় থাকা অন্তত ৫০ জনের বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকে তথ্য-উপাত্ত চাওয়া হয়েছে। অবৈধ সম্পদের অভিযোগে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে যদি মামলা হয়, আর যদি ওই আসামি বিদেশে পালিয়ে থাকে, তাদের ফিরিয়ে আনতে আইনি ব্যবস্থাও নেওয়া হবে।’
এর আগে ভোলা-৩ আসনের সংসদ সদস্য নুরুন্নবী চৌধুরী শাওন, চট্টগ্রাম-১২ (পটিয়া) আসনে সাংসদ সামশুল হক চৌধুরী, সুনামগঞ্জ–১ আসনের সরকার দলীয় সংসদ সদস্য মোয়াজ্জেম হোসেন রতন, জি কে বিল্ডার্সের স্বত্বাধিকারী যুবলীগের নেতা গোলাম কিবরিয়া শামীম, তার স্ত্রী শামীমা সুলতানা ও মা-বাবা, ঢাকা মহানগর দক্ষিণ যুবলীগের বহিষ্কৃত সভাপতি ইসমাইল হোসেন চৌধুরী সম্রাট, তার বাবা ফয়েজ আহমেদ চৌধুরী, মা সায়েরা খাতুন ও স্ত্রী শারমিন চৌধুরী, গণপূর্তের সাবেক প্রধান প্রকৌশলী মোহাম্মদ রফিকুল ইসলাম ও সাবেক অতিরিক্ত প্রকৌশলী আব্দুল হাই, অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী উৎপল কুমার দে ও নির্বাহী প্রকৌশলী আবদুল হালিম, বহিষ্কৃত যুবলীগ নেতা খালেদ মাহমুদ ভূঁইয়া, এনামুল হক ওরফে আরমান, কাজী আনিসুর রহমান, স্বেচ্ছাসেবক লীগের আহ্বায়ক মোল্লা আবু কাওসার, ওয়ার্ড কাউন্সিলর এ কে এম মমিনুল হক সাঈদ ও হাবিবুর রহমান ওরফে পাগলা মিজান, গেন্ডারিয়া থানা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি এনামুল হক ও তার ভাই থানা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক রূপন ভূঁইয়া, কলাবাগান ক্রীড়াচক্রের সভাপতি ও কৃষক লীগের নেতা সভাপতি শফিকুল ইসলাম, মোহামেডান স্পোর্টিং ক্লাবের ভারপ্রাপ্ত পরিচালক লোকমান হোসেন ভূইয়া ও অনলাইন ক্যাসিনোর হোতা সেলিম প্রধানসহ অর্ধশত ব্যক্তির তালিকা নিয়ে অনুসন্ধানের কথা জানিয়েছিল দুদক।
এরই মধ্যে জি কে বিল্ডার্সের স্বত্বাধিকারী কথিত যুবলীগ নেতা এস এম গোলাম কিবরিয়া শামীম ও তার মা এবং বহিষ্কৃত যুবলীগ নেতা খালেদ মাহমুদ ভূঁইয়ার বিরুদ্ধে ৩০২ কোটি টাকার, এনামুল হক এনু ও তার দুই সহযোগীদের বিরুদ্ধে ২১ কোটি ৮৯ লাখ ৪৩ হাজার টাকার এবং এনুর ভাই গেন্ডারিয়া থানা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক রূপন ভূঁইয়ার বিরুদ্ধে ১৪ কোটি ২১ লাখ টাকার অবৈধ সম্পদের অভিযোগে মামলা করেছে দুদক।
মামলা হয়েছে লোকমান হোসেন ভূঁইয়ার বিরুদ্ধে ৪ কোটি ৩৪ লাখ টাকার ও সেলিম প্রধানের বিরুদ্ধে ১২ কোটি ২৭ লাখ টাকা অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগে।
তালিকাভুক্ত তিন সংসদ সদস্যসহ ২৫ জন যাতে বিদেশে পালিয়ে যেতে না পারে তা রোধে বিদেশ যাত্রায় নিষেধাজ্ঞা দিয়ে চিঠি দিয়েছে দুদক।
অবৈধ সম্পদের প্রমাণ মিলেছে ঢাকা মহানগর দক্ষিণ যুবলীগের বহিষ্কৃত সভাপতি ইসমাইল হোসেন চৌধুরী সম্রাটের বিরুদ্ধে প্রায় দুই কোটি টাকার জ্ঞাত আয় বহির্ভূত সম্পদ তথ্য-প্রমাণ পেয়েছে সংস্থাটি। শিগগিরই আরো মামলার প্রস্তুতি চলমান রয়েছে। অনুসন্ধান পর্যায়ে তাদের আয়কর নথি, ব্যাংক হিসাব, রাজউক, ভূমি অফিসসহ বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থা থেকে প্রাপ্ত নথিপত্র পর্যালোচনা করা হচ্ছে।
অন্যদিকে বিভিন্ন সূত্রে জানা যায়, ক্যাসিনো ব্যবসার সঙ্গে জড়িতরা অবৈধ অর্থ লুকিয়ে রাখতে নামে-বেনামে ব্যাংক হিসাব খোলেন। বাড়ির কেয়ারটেকার, নিরাপত্তারক্ষী থেকে শুরু করে দূর সম্পর্কের একাধিক আত্মীয়র নামেও একাধিক ব্যাংক অ্যাকাউন্টের সন্ধান মিলছে। যত দিন যাচ্ছে সম্পদের তথ্য-প্রমাণ আসছে বিভিন্ন সংস্থার হাতে।
চলতি বছরের ১৮ সেপ্টেম্বর ক্যাসিনোবিরোধী অভিযান শুরু করে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা। অভিযানে যুবলীগ ও স্বেচ্ছাসেবক লীগের বেশ কয়েকজন নেতার ক্যাসিনো ব্যবসার সঙ্গে জড়িত থাকার প্রমাণ পাওয়া যায়।
এর পরপরই গত ৩০ সেপ্টেম্বর অনুসন্ধানের সিদ্ধান্ত নিয়ে কাজ শুরু করে সংস্থাটির পরিচালক সৈয়দ ইকবাল হোসেনের নেতৃত্বে পাঁচ সদস্যের টিম অনুসন্ধানের দায়িত্ব দেওয়া হয়। টিমের অপর সদস্যরা হলেন- উপ-পরিচালক মো. জাহাঙ্গির আলম, সালাউদ্দিন আহমেদ, সহকারী পরিচালক মামুনুর রশীদ চৌধুরি ও মোহাম্মদ নেয়ামুল আহসান গাজী।