২২শে নভেম্বর, ২০২৪ ইং | ৭ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ | বিকাল ৩:২৮

তাদের অবৈধ সম্পদই আছে ১২ কোটি টাকার

ওয়াক্‌ফ প্রতিষ্ঠান হামদর্দ ল্যাবরেটরিজের বিতর্কিত ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) হাকিম ইউসুফ হারুন ভূঁইয়া ও তার চার সন্তানের বিরুদ্ধে ১২ কোটি টাকারও বেশি অবৈধ সম্পদ অর্জনের তথ্য পেয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। দুদকের ঊর্ধ্বতন সূত্র এ তথ্যের সত্যতা নিশ্চিত করেছে। এছাড়া দুদক কর্মকর্তার সুপারিশের নথি পর্যালোচনা করেও এ তথ্য মিলেছে। এরইমধ্যে দুদকের ডেস্ক অফিসারের বিশ্লেষণ ও সুপারিশের ভিত্তিতে ইউসুফ হারুন ও তার সন্তানদের বিরুদ্ধে দুর্নীতির মামলার অনুমোদন চাওয়া হয়েছে।

দুদকের নথিতে বলা হয়েছে, ইউসুফ হারুন ভূঁইয়া একই সঙ্গে হামদর্দের চিফ মোতাওয়াল্লি ও এমডি। আর এই প্রতিষ্ঠানে তার তিন সন্তান গুরুত্বপূর্ণ পদে দায়িত্ব পালন করছেন। আরেক সন্তান হামদর্দের সঙ্গে জড়িত একটি প্রতিষ্ঠানের চেয়ারম্যান।

দুদকের অনুসন্ধানে প্রাপ্ত তথ্য বলছে, হামদর্দে স্বেচ্ছাচারিতা, দুর্নীতি আর অনিয়ম করে হাকিম মো. ইউসুফ হারুন ভূঁইয়া ও তার চার সন্তান ১২ কোটি ১৯ লাখ ৮৩ হাজার টাকার অবৈধ সম্পদ অর্জন করেছেন। এরমধ্যে ইউসুফ হারুন ভূঁইয়া ৪৫ লাখ ৯৭ হাজার ৬০৫ হাজার টাকা, তার বড় ছেলে হাকিম গুলজার আহেমদ ভূঁইয়া ৫ কোটি ৫১ লাখ ৮১ হাজার ৪৫৪ টাকা, মেজো ছেলে হাকিম সাইফুদ্দিন মুরাদ ভূঁইয়া ৩ কোটি ১৩ লাখ ১৩ হাজার ৫৮৩ টাকা, ছোট ছেলে মোহাম্মদ জামাল উদ্দিন ভূঁইয়া রাসেল ১ কোটি ৯ লাখ ৬৬ হাজার টাকা এবং মেয়ে ডা. হাকিম নার্গিস মার্জান ১ কোটি ৯৯ লাখ ২৬ হাজার ৩৪০ টাকার অবৈধ সম্পদ অর্জন করেছেন।

দুদকের নথি থেকে জানা যায়, ইউসুফ হারুন ভূঁইয়ার বড় ছেলে গুলজার আহেমদ ভূঁইয়া ‘জনকল্যাণ ফার্মাসিউটিক্যাল’ নামে একটি প্রতিষ্ঠানের চেয়ারম্যান। হামদর্দের সঙ্গে এই প্রতিষ্ঠানটির ব্যবসা রয়েছে। মেজো ছেলে হাকিম সাইফুদ্দিন মুরাদ ভূঁইয়া হামদর্দের পরিচালক (বিপণন), ছোট ছেলে মোহাম্মদ জামাল উদ্দিন ভূঁইয়া রাসেল হামদর্দের উপ-ব্যবস্থাপনা পরিচালক (ডিএমডি)। আর মেয়ে ডা. হাকিম নার্গিস মার্জান হামদর্দের হিউম্যান রিসোর্স ও ডেভেলপমেন্ট বিভাগের পরিচালক।

ইউসুফ হারুন ভূঁইয়ার দুর্নীতি অনুসন্ধানে নেমে দুদক ১০টি সুনির্দিষ্ট অভিযোগ পেয়েছে। অভিযোগগুলো হলো—

১. স্বজনপ্রীতির মাধ্যমে নিজের সন্তানদের পরিচালক হিসেবে হামদর্দে নিয়োগ দেওয়া।

২. অনিয়মের মাধ্যমে নির্ধারিত বেতনের চেয়ে বেশি বেতন নেওয়া।

৩. কাঁচামাল ও যন্ত্রপাতি আমদানির নামে বিপুল পরিমাণ টাকা আত্মসাৎ।

৪. জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জন।

৫. লোকসানি ও ঋণখেলাপি প্রতিষ্ঠান হওয়ার পরও জনকল্যাণ ফার্মাসিউটিক্যাল নামে একটি প্রতিষ্ঠানকে হামদর্দের কাছে ভাড়া দেওয়া।

৬. ২০১৩ সালে তৎকালীন ওয়াক্‌ফ প্রশাসক নূরুল হুদাকে আড়াই কোটি টাকা ঘুষ দিয়ে ট্রাস্টি বোর্ডকে পাশ কাটিয়ে মোতাওয়াল্লি কমিটি গঠন।

৭. দরপত্র ছাড়াই অথবা গোপন টেন্ডারের মাধ্যমে কাঁচামাল আমদানি করা।

৮. আত্মীয়-স্বজনদের কেনাকাটা ও সরবরাহের সুযোগ দেওয়া।

৯. অনিয়ম, দুর্নীতি ও স্বেচ্ছাচারিতার প্রতিবাদ করায় কর্মীদের বরখাস্ত করা।

১০. ওয়াক্‌ফ আইনের তোয়াক্কা না করা।

এ বছরের জানুয়ারি মাসে প্রধানমন্ত্রীর দফতর, ধর্ম মন্ত্রণালয়, জাতীয় নিরাপত্তা গোয়েন্দা সংস্থা (এনএসআই), দুদক ও জাতীয় রাজস্ব বোর্ডে (এনবিআর) হাকিম ইউসুফ হারুনের অনিয়ম, দুর্নীতির বিষয়ে অভিযোগ জমা হয়।

গত ২৬ মে নোটিশ পাঠিয়ে ১১ জুন দুদকে হাজির হতে বলা হয় ইউসুফ হারুনকে। তবে অসুস্থতার অজুহাত দেখিয়ে ওই দিন হাজির হননি তিনি। এরপর ২৯ আগস্ট সেগুনবাগিচায় দুদকের প্রধান কার্যালয়ে তাকে প্রায় সাড়ে তিন ঘণ্টা জিজ্ঞাসাবাদ করেন দুদকের সহকারী পরিচালক মো. সাইদুজ্জামান।

অভিযোগের বিষয়ে জানতে রাজধানীর বাংলামোটরে হামদর্দের প্রধান কার্যালয়ে ইউসুফ হারুন ভূঁইয়া ও তার সন্তানদের সঙ্গে পৃথকভাবে যোগাযোগ করা হলেও তাদের কারও বক্তব্য পাওয়া যায়নি।

প্রকাশ :অক্টোবর ২৯, ২০১৯ ১২:০৫ অপরাহ্ণ