এদিকে মৃত্যুর আগে ওই লরি থেকে মায়ের কাছে বার্তা পাঠিয়েছিল ভিয়েতনামের এক তরুণী।
ডেইলি মেইল জানিয়েছে, ২৬ বছরের ফম থি ত্রা মাই নামের ওই তরুণী মাকে লিখেছে- ‘আমি দু:খিত মম। আমার যাত্রা সফল হয়নি। আমি তোমাকে ভালবাসি। আমি মারা যাচ্ছি, কেননা আমি শ্বাস নিতে পারছি না।’
মাইয়ের পরিবারের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, উন্নত জীবনের আশায় চীন হয়ে যুক্তরাজ্যে যাওয়ার জন্য পাচারকারীদের তারা ৩০ হাজার পাউন্ড দিয়েছিল।
সিএনএনকে মাইয়ের মা নগুয়েন থি ফং ও বাবা ফম ভ্যান থিন বলেন, ‘মেয়ের কাছ থেকে ওই বার্তা পাওয়া আমাদের জন্য প্রচণ্ড বেদনাদায়ক। মাই বুঝতে পেরেছিল সে মারা যাচ্ছে। আমরা আমাদের আদরের মেয়ে ও টাকা সবই হারিয়েছি। তিল তিল করে আমরা অর্থ সঞ্চয় করেছিলাম মেয়েকে যুক্তরাজ্যে পাঠানোর জন্য।
লরি থেকে উদ্ধার হওয়া ৩৯ মৃতদেহের মধ্যে ছয় থেকে সাতজন ভিয়েতনামের নাগরিক বলে ধারণা করা হচ্ছে।
লন্ডনে ভিয়েতনাম দূতবাস জানিয়েছে, নিহতদের মধ্যে তাদের স্বজনরা আছে কি না তা খুঁজে পেতে সহায়তা করার অনুরোধ করেছে ভিয়েতনামের কয়েকটি পরিবার।
একটি পরিবার জানিয়েছে, নিহতদের মধ্যে নগুয়েন দিন লুয়ং (২০) নামে তাদের এক স্বজন রয়েছে বলে তারা ধারণা করছেন ।
বিবিসি জানিয়েছে, একসঙ্গে ৩৯ মৃতদেহ উদ্ধারের ঘটনায় শুক্রবার স্ট্যাটস্টেড বিমানবন্দর থেকে নর্দান আয়ারল্যান্ডের ৪৮ বছরের এক বাসিন্দাকে আটক করা হয়।
জোয়ানা মাহের (৩৮) ও তার স্বামী টমাসকে (৩৮) আটক করা হয় ওয়ারিংটন থেকে। তারা ওই লরির মালিক। অবশ্য তারা দাবি করেছেন এক বছর আগে তারা লরিটি বিক্রি করে দিয়েছেন আয়াল্যান্ডের এক ব্যক্তির কাছে।
আর মৃতদেহ উদ্ধারের সময় আটক হন ওই লরির চালক মরিস মো রবিনসন। তাকেই বেশি সময় ধরে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে।
এছাড়া আরো এক লরি চালককে খুঁজছে পুলিশ। ওই চালক লরিতে করে ওই ৩৯ জনকে বেলজিয়ামের বন্দরে নিয়ে এসেছিলেন। সিসিটিভি ফুটেজে বিষয়টি ধরা পড়েছে।
প্রসঙ্গত, গত বুধবার এসেক্সে একটি শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত লরি থেকে ৩৯ মৃতদেহ উদ্ধার করা হয়। এদের মধ্যে আট নারী, এক কিশোর ও ৩০ জন প্রাপ্তবয়ষ্ক পুরুষ।
চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানায়, ব্রিটেনে নিযুক্ত রাষ্ট্রদূতকে ঘটনাস্থলে গিয়ে গোটা বিষয়টি খতিয়ে দেখার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। লন্ডনের চীনা দূতাবাস বলেছে, তারা এসেক্সে একটি দল পাঠিয়েছে। তবে পুলিশ এখনো লাশগুলোর পরিচয় শনাক্ত করতে পারেনি বলে জানিয়েছেন চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র হুয়া চুনিং।
এক সংবাদ সম্মেলনে চুনিং বলেন, ব্রিটেন খুব শিগগিরই লাশগুলোর পরিচয় যাচাই এবং নিশ্চিত করে কি হয়েছে তা বের করবে বলে তাদের প্রত্যাশা। পাশাপাশি এ ঘটনায় জড়িতদের কঠোর সাজা দেওয়া হবে- এমনটিই আশা করছে তারা।
এছাড়া বেলজিয়াম পুলিশের কাছেও এই ঘটনার তদন্তের দাবি জানিয়েছে সে দেশের চীনা দূতাবাস।