ক্ষতিগ্রস্ত চাষিদের পুর্নবাসন ও প্রশিক্ষণ দেয়ার আশ্বাস দিয়েছে জেলা মৎস্য বিভাগ।
জেলা মৎস্য অফিস সূত্রে জানা গেছে, গত ২১ সেপ্টেম্বর রাতে বাগেরহাটের তিনটি উপজেলায় ৩ হাজার ১০৩টি ঘেরের ৩৫৬ মেট্রিক টন চিংড়ি মাছ মরে যায়। এতে সাড়ে ৫ হাজার চিংড়ি চাষির ১৭ কোটি ৩৫ লাখ ৬৪ হাজার টাকা ক্ষতি হয়। চাষিদের দাবি ক্ষতির পরিমাণ এর দ্বিগুণের বেশি।
মৎস্য বিভাগ জানিয়েছে, ঘেরের জায়গার তুলনায় বেশি পরিমাণ চিংড়ির পোনা ছাড়া হয়। ওই রাতে বাগেরহাটে ভারি বৃষ্টিপাত হয়। এতে ঘেরের পানিতে অক্সিজেনের পরিমাণ কমে যায়। ফলে ব্যাপকহারে চিংড়ি মারা যায়।
ফকিরহাট উপজেলার কলকলিয়া এলাকার সুশান্ত মণ্ডল বলেন, ‘‘যুব উন্নয়ন অধিদপ্তর থেকে প্রশিক্ষণ নিয়ে ২০১৮ সালে চিংড়ি চাষ শুরু করি। ১২ বিঘা ও ৪ বিঘা জায়গার দুটি ঘের আছে। প্রথম বছর খরচ উঠিয়ে মোটামুটি লাভ ছিল। এ বছর ‘আশা’, ‘গ্রামীণ ব্যাংক’ ও ‘ডাক দিয়ে যাই’ এনজিও থেকে ঋণ নিয়ে দুই ঘেরে ১২ লাখ টাকা খরচ করি। স্বপ্ন ছিল ঋণের টাকা পরিশোধ করে কিছুটা লাভ থাকবে। কিন্তু এক রাতের মড়কে সব স্বপ্ন শেষ হয়ে গেছে।’’
নীলয় কুমার দে, বিভূতিভূষণ মজুমদার, মনোতোষ বাগচি, লাভলু কাজী বলেন, তারা ২৫ থেকে ৩০ বছর ধরে চিংড়ি চাষ করে আসছেন। কিন্তু এ ধরনের বিপর্যয়ে তাদের কখনো পড়তে হয়নি। চিংড়ি চাষের জন্য তারা এনজিও বা ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে থাকেন। বছর শেষে মাছ বিক্রি করে ঋণ পরিশোধ করেন। কিন্তু এবার ঘেরের মাছ যেভাবে মরেছে, তাতে ঋণের টাকা দূরে কথা, নিজেদের বিনিয়োগ উঠবে না। ইতোমধ্যে এনজিও থেকে ঋণ পরিশোধের তাগিদ দেয়া শুরু হয়েছে। ব্যাংক এবং এনজিও ঋণ মওকুফ ও সরকারি সহায়তা না পেলে নতুন করে চিংড়ি চাষ করা তাদের পক্ষে অসম্ভব।
কয়েক জন চাষি আক্ষেপ করে বলেন, প্রাকৃতিক এই দুর্যোগের আগে মৎস্য বিভাগের কোনো নির্দেশনা থাকলে, তাহলে এত বড় ক্ষতি হতো না। মৎস্য বিভাগের লোকজনের মাঠে পাওয়া যায় না, এমনকি ফোন দিলেও সময় মতো আসে না।
‘‘শুনেছি মৎস্য বিভাগ মাছ চাষিদের প্রশিক্ষণ দেয়, কিন্তু কাদের দেয়া হয় জানি না। আমাদের এলাকায় কখনো প্রশিক্ষণ দেয়া হয়নি।’’
ফকিরহাট উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান স্বপন দাস বলেন, এক রাতে মাছ মরে তার উপজেলার চিংড়ি চাষিরা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। এর ফলে উপজেলায় এক ধরনের মানবিক বিপর্যয় সৃষ্টি হয়েছে। এতে শুধু চাষিরা ক্ষতিগ্রস্ত হননি; ব্যাংক, এনজিও, স্থানীয় ব্যবসায়ীসহ এলাকার সকল মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত চাষিদের জন্য সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী, সচিব ও ডিজির সঙ্গে কথা বলেছেন। তারা ফকিরহাট উপজেলা পরিদর্শন করেছেন। মৎস্য চাষিদের ঋণ পুনঃনবায়ণ করার আশ্বাস দিয়েছেন।
তিনি বলেন, মৎস্য কর্মকর্তারা কখনো তাদের রুটিন ওয়ার্কের বাইরে যান না। চিংড়ি চাষকে টিকিয়ে রাখতে হলে, চাষিদের জন্য আরো প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করতে হবে। চাষিদের প্রনোদনা দিতে হবে। মৎস্য কর্মকর্তাদের সার্বক্ষণিক চাষিদের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করতে হবে।
ভারপ্রাপ্ত জেলা মৎস্য কর্মকর্তা এএসএম রাসেল বলেন, চাষিদের ক্ষতি নিরুপণ করে ঊধ্র্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে। এর পরিপ্রেক্ষিতে চাষিদের পুর্নবাসন ও ঋণ পুনঃনবায়ণের বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংক কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলে ব্যবস্থা নেয়ার আশ্বাস দেয়া হয়েছে।
মৎস্য কর্মকর্তারা চাষিদের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করেন না- এই অভিযোগের বিষয়ে তিনি বলেন, ‘‘আমরা সব সময় চেষ্টা করি চাষিদের সর্বোচ্চ সেবা দিতে। কিন্তু জনবল সংকটের কারণে কিছুটা সমস্যা হয়। চাষিদের প্রশিক্ষণের বিষয়ে আমরা আরো গুরুত্ব দিচ্ছি।’’