উল্লেখ্য, ভারত সরকার গত ১৩ সেপ্টেম্বর থেকে ২৫০ ডলারের প্রতিটন পেঁয়াজের মূল্য নির্ধারণ করে দেয় ৮৫২ ডলার। এই ঘোষণার ২৪ ঘণ্টা না যেতেই দেশে পেঁয়াজের বাজারে অস্থিরতা দেখা দেয়। ৫০ টাকা কেজি দরের পেঁয়াজ বিক্রি হতে থাকে ৮৫ টাকা দরে। পরবর্তী সময়ে কোনও পূর্ব ঘোষণা ছাড়াই গত ২৯ সেপ্টেম্বর ভারত পেঁয়াজ রফতানি পুরোপুরি বন্ধ করার ঘোষণা দেয়। এই ঘোষণার ১২ ঘণ্টার ব্যবধানে ৮৫ টাকা কেজি দরে বিক্রি হওয়া পেঁয়াজের মূল্য কোথাও ১০০, কোথাও ১১০ আবার কোথাও ১২০ থেকে ১৩০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হতে শুরু করে। এ সময় দেশে পেঁয়াজ নিয়ে অস্থিরতা চরম আকার ধারণ করে। এমন পরিস্থিতিতে দেশে উৎপাদিত পেঁয়াজের সরবরাহ বাড়ানোর উদ্যোগ নেয় সরকার।
এদিকে, সরকারের এই উদ্যোগের অংশ হিসেবে কদিন আগে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় থেকে ৮ জন যুগ্ম সচিবকে ৮টি বিভাগীয় শহরে পাঠানো হয়। স্থানীয় জেলা প্রশাসনকে সঙ্গে নিয়ে তারা বাজারে পেঁয়াজের সরবরাহ নিশ্চিত করার দায়িত্ব দেওয়া হয় তাদের। সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ৮ যুগ্মসচিব ৮টি বিভাগীয় শহরের পাশাপাশি বিভাগের সব জেলা, উপজেলা পরিদর্শন করে ঢাকায় ফিরেছেন। এই ৮ যুগ্মসচিব রবিবার (১৩ অক্টোবর) দুপুরে বাণিজ্য সচিবের দফতরে অনুষ্ঠিত বৈঠকে উপস্থিত হয়ে এই সংক্রান্ত অভিজ্ঞতার বর্ণনা দিয়েছেন বলেও মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে।
ঢাকায় ফেরা কর্মকর্তাদের বর্ণনা মতে, সব সময় অভিযান ভালো ফল দেয় না। অভিযানে পেঁয়াজের সরবরাহ কিছু সময়ের জন্য বাড়লেও অভিযান শেষে আবার সরবরাহ কমিয়ে দিয়ে বাজারে কৃত্রিম সংকট তৈরি করেন সিন্ডিকেট ব্যবসায়ীরা। ফলে মূল্য বেড়েছে।
বৈঠক সূত্রে জানা গেছে, বৈঠকে উপস্থিত টিসিবির চেয়ারম্যান জানিয়েছেন, মিয়ানমার থেকে আমদানি করা পেঁয়াজের মূল্য পড়ে সর্বোচ্চ ৬০ থেকে ৬২ টাকা কেজি। এর সঙ্গে পরিবহন খরচ ও মুনাফা বাবদ সর্বোচ্চ ৫ টাকা যুক্ত করা যেতে পারে। কিন্তু কোনোভাবেই কেজিতে ১২ থেকে ১৫ টাকা বেশি মূল্য যোগ করার সুযোগ নেই। ফলে অতিরিক্ত মূল্য বাড়ানোর কারণ অনুসন্ধান করে সে ব্যাপারে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে আবারও দেশের পাঁচ জেলায় পাঁচ কর্মকর্তাকে পাঠনোর কথা ভাবছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। পেঁয়াজ উৎপাদনকারী তিন জেলা—ফরিদপুর পাবনা ও রাজবাড়ীসহ চট্টগ্রাম ও কক্সবাজার জেলায়ও যাবেন বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা। মিয়ানমার থেকে থেকে আমদানি হয় বলে কক্সবাজার এবং চট্টগ্রামের খাতুনগঞ্জে পাইকারি বাজার দেখতেই ফরিদপুর, রাজবাড়ি ও পাবনার পাশাপাশি ওই দুই জেলায়ও দুজন কর্মকর্তা পাঠানো হচ্ছে। এসব কর্মকর্তারা জেলায় জেলায় গিয়ে আবারও পেঁয়াজের সরবরাহ দেখবেন। অবৈধ মজুত কেউ করলে সেখানে অভিযান পরিচালনা করে তা বাজারে ছেড়ে দেওয়ার ব্যবস্থা করবেন।
মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, এই উদ্যোগের পাশাপাশি এই সংকটময় পরিস্থিতি এড়াতে পেঁয়াজের আমদানির কথা ভাবছেন। আইনগত জটিলতায় টিসিবি কোনও পণ্যই আমদানির এখতিয়ার রাখে না। তবে সরকারের বিশেষ বিবেচনা আইনে টিসিবি পেঁয়াজ আমদানির উদ্যোগ নিলেও সব প্রক্রিয়া শেষ করে তা দেশে পৌঁছাতে সময় লাগবে কমপক্ষে এক মাস। কিন্তু একমাস পর পেঁয়াজের বাজার পরিস্থিতি কেমন থাকবে, তা বোধগম্য নয় কারোই। পাশাপাশি এই লম্বা সময়ে পেঁয়াজ পচে যাওয়ার আশঙ্কাও রয়েছে।
এ ক্ষেত্রে দেশের শীর্ষ ২/৩টি ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে বিশেষ করে, মেঘনা, সিটি, এস আলম বা ইগলুর মতো বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে পেঁয়াজ আমদানির বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করার কথা ভাবছেন বাণিজ্য সচিব ড. জাফর উদ্দিন। ইতোমধ্যেই তিনি কয়েকজনের সঙ্গে মৌখিক আলোচনাও করেছেন। কিন্তু প্রশ্ন দেখা দিয়েছে, যারা কখনোই পেঁয়াজের ব্যবসা করেননি বা পেঁয়াজ আমদানি করেননি, তারা কোন আগ্রহে পেঁয়াজ আমদানি করবেন? যেহেতু আমদানি প্রক্রিয়াটি সময় সাপেক্ষ, সেহেতু একমাস বা দেড় মাস পর বাজারে চাহিদা কমে গেলে তাদের আমদানি করা পেঁয়াজ কিনবে কে? এজন্য সরকারের পক্ষ থেকে তাদের এসব বিষয়ে নিশ্চয়তা দেওয়া হবে। তাদের আশ্বস্ত করা হবে, আমদানি করা পেঁয়াজ বাজারে চাহিদা থকিুক বা থাকুক, তা সরকার কিনবে। একইসঙ্গে আমদানিকারকদের ব্যাকিং সুবিধাসহ বিভিন্ন প্রয়োজনীয় সুবিধা দিতে কর্মকর্তাদের সঙ্গে আলোচনা করেছেন বাণিজ্য সচিব । তবে কোনও কিছুই চূড়ান্ত করেননি তিনি। কারণ বাণিজ্যমন্ত্রীর অনুপস্থিতিতে এসব গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া ঠিক হবে না বলেও তিনি মনে করেন।