নিজে খেয়ে না খেয়ে ভ্যান চালিয়ে ছেলেকে বুয়েটে পড়তে পাঠিয়েছিলেন মো. আকাশ হোসেনের বাবা। আবরার হত্যাকাণ্ডে গ্রেপ্তারদের মধ্যে রয়েছেন আকাশ। বিশ্ববিদ্যালয়ে এসে ছেলে রাজনীতিতে জড়িয়ে পড়েছে ঘুনাক্ষরেও বুঝতে পারেননি বাবা। ছেলের গ্রেপ্তারের খবর শুনে প্রথমে অবিশ্বাস করলেও পরে নিশ্চিত হয়ে গোটা আকাশই যেন খানখান হয়ে ভেঙে পড়েছে তার মাথায়।
দেশজুড়ে আলোচিত বুয়েট শিক্ষার্থী আবরার ফাহাদ হত্যা মামলায় আসামি হয়ে পুলিশ হেফাজতে রয়েছেন ছেলে মো. আকাশ হোসেন। ছেলেকে দেখতে ঢাকায় এসেছিলেন আতিকুল ইসলাম।
বৃহস্পতিবার ঢাকার আদালত চত্বরে আকাশের বাবা আতিকুল ইসলাম এ প্রতিবেদককে ছেলেকে নিয়ে তার স্বপ্নের কথা বলছিলেন। ভ্যান চালিয়ে হাড়ভাঙ্গা পরিশ্রম করে ছেলেকে ইঞ্জিনিয়ার করার স্বপ্ন ছিল তার। কিন্তু দেশের উচ্চশিক্ষার শীর্ষ বিদ্যাপীঠে এসে ছেলের এমন কাণ্ডে নিজেকে কোনও সান্তনাই দিতে পারছেন না এই অসহায় পিতা।
আতিকুল ইসলাম বলেন, ‘আমার তো কোথাও যাওয়ার নেই। দরিদ্র মানুষ আমি। মাথায় আকাশ ভেঙ্গে পড়েছে। অমানবিক পরিশ্রম করে তিনি মেধাবী সন্তানকে বুয়েটে ভর্তি করিয়েছিলেন। কিন্তু ছেলে আবরার হত্যার আসামী। এটাই আমি বিশ্বাস করতে পারছি না। আমার বিবশ্বাস ছেলে এমন কাজ করতে পারে না।’
এদিকে বুধবার রিমান্ড আবেদনের শুনানিকালে আকাশসহ দুই আসামির পক্ষে কোনো আইনজীবী না থাকায় বিচারক তাদের কিছু বলার আছে কিনা জিজ্ঞাসা করেন। এ সময় আকাশ জানান, তিনি এ ঘটনার সঙ্গে জড়িত নন। ভিডিও ফুটেজেও তাকে দেখা যায়নি।
আকাশের বাবা আতিকুল ইসলাম বলেন, ‘আকাশ ছাত্রলীগের বুয়েট শাখার সদস্য, এটা জানতাম না। তবে ছেলেকে রাজনীতিতে জড়িত না হতে বারবার নিষেধ করেছিলাম। সে যদি আমার কথা শুনতো তাহলে আজ এ পরিস্থিতি হতো না।’
আতিকুল বলেন, ‘আমার সব স্বপ্ন শেষ। এখন স্বপ্ন পূরণ তো দূরের কথা, জীবনটাই বাঁচানো দায় হয়ে পড়ছে। পুরো পরিবার দুশ্চিন্তায় চোখে মুখে সব ঝাপসা দেখতেছি। ছেলেকে বুয়েটে পাঠায়ছিলাম ইঞ্জিনিয়ার বানাতে। নিজে না খেয়ে তার জন্য মাসে মাসে টাকা পাঠায়ছি আজ এই দিন দেখার জন্য!’
তিনি বলেন, ‘আকাশ মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিকে গোল্ডেন এ প্লাস পেয়েছিল জয়পুরহাট জেলার সবাই তার সুনাম করেছিল। এলাকার মানুষ তার লেখাপড়ায় নিজ থেকে সহযোগিতা করেছে। আজ সব শেষ হয়ে গেল।