অনলাইনে অবৈধ ক্যাসিনো ব্যবসার মূলহোতা সেলিম প্রধান ক্যাসিনো ব্যবসার পাশাপাশি আরও অনেক ব্যবসার সঙ্গে জড়িত। অবৈধ এসব ব্যবসা ছাড়াও চাঁদাবাজি থেকেও কোটি কোটি টাকা আয় করেছেন তিনি। তার মধ্যে রাজশাহীসহ উত্তর-পশ্চিমাঞ্চল সীমান্তে ভারতীয় গবাদিপশুর সব খাটাল ও মাদক সিন্ডিকেটগুলো থেকেই তিনি আয় করেছেন প্রায় ২০ কোটি টাকা। আর এই টাকা আয় করেছেন দুই বছরেই।
থাই এয়ারওয়েজে করে ব্যাংকক যাওয়া সময় গতকাল শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে উজোজাহাজ থেকে সেলিম প্রধানকে আটক করে র্যাব। পরে তাকে নিজেদের হেফাজতে নেয় র্যাব। এরপর তার কাছে থেকে তথ্য নিয়ে অভিযান চালাচ্ছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীটি।
র্যাবের হাতে আটক হওয়ার পরই সেলিম প্রধানকে নিয়ে নানারকম আলোচনা-গুঞ্জন ছড়িয়ে পড়ে। অনলাইনে ক্যাসিনো পরিচালনাকারী এবং বাংলাদেশের কান্ট্রি প্রধান সেলিম ওয়ান্ডারার্স ক্লাবেরও সহ-সভাপতি। তিনি গ্রেপ্তার বিসিবি পরিচালক লোকমান হোসেন ভূঁইয়ার জানা যায়।
অনুসন্ধানে দেখা গেছে যে, সেলিম প্রধান হলেন একজন ঋণখেলাপি এবং বাংলাদেশ থেকে বিদেশে অর্থ পাচারকারী।
ওয়ান ইলেভেনের সময় উত্থান হওয়া সেলিম প্রধানের ক্যাসিনো ব্যবসা ছাড়াও ব্যাংককের পাতায়ায় বিলাসবহুল হোটেল, ডিসকো বারসহ কয়েকটি প্রতিষ্ঠান রয়েছে।
সংশ্লিষ্টরা জানান, শুধু অনলাইন ক্যাসিনো পরিচালনাই নয়, সেলিম প্রধান রাজশাহীসহ সীমান্ত এলাকায় ভারতীয় গবাদিপশুর সব খাটাল ও মাদক সিন্ডিকেটের হোতা। এমনকি সীমান্তে জাল টাকার মূল সিন্ডিকেটের নিয়ন্ত্রণও তার হাতে।
প্রশাসনের বিভিন্ন ব্যক্তির সঙ্গে সখ্য গড়ে তুলে তিনি খাটাল, মাদক ও জাল টাকার সিন্ডিকেট নিয়ন্ত্রণ করেন। সেখান থেকে প্রতি মাসে কোটি কোটি টাকা চাঁদা নেন। দুই বছরে তিনি সীমান্ত এলাকা থেকে ২০ কোটি টাকার মতো চাঁদা নিয়েছেন।
খোঁজ নিয়ে জানা যায় রাজশাহী, চাঁপাইনবাবগঞ্জ ও নওগাঁসহ দেশের উত্তর-পশ্চিম সীমান্তে ভারতীয় গবাদিপশু থেকে রাজস্ব আদায়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় অনুমোদিত ২২টি খাটাল আছে। বিজিবি এসব খাটালের ব্যবস্থাপনা করে থাকে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক খাটাল মালিক জানান, তারা যথাযথ প্রক্রিয়া অনুসরণ করে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে খাটালের অনুমোদন পেলেও সেলিম প্রধানকে টাকা না দিলে গবাদিপশু রাখার অনুমতি পাওয়া যায় না।
প্রতিটি খাটাল থেকে সেলিম প্রধান ২০ লাখ থেকে ৫০ লাখ পর্যন্ত এককালীন টাকা নিয়েছেন। এরপরও খাটালে গবাদিপশু এলে প্রতিটিতে তাকে তিন হাজার টাকা করে দিতে হতো। এজন্য খাটাল মালিকরা সেলিম প্রধানের নামে আলাদা করে টাকা তুলতে বাধ্য হয়েছেন।
এভাবে তিনি গত দুই বছরে উত্তর-পশ্চিমাঞ্চল সীমান্ত থেকে ২০ কোটি টাকার বেশি চাঁদা নিয়েছেন বলে সংশ্লিষ্টরা জানান। আর তার সহযোগী হিসেবে কাজ করেছেন ইটভাটা শ্রমিক কেনাল। চাঁদাবাজির টাকার ভাগ পেয়ে তিনিও কোটিপতি বনে যান। এছাড়া আরও অনেকে তার সঙ্গে চাঁদাবাজিতে জড়িয়ে পড়েন।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক খাটাল মালিক অভিযোগ করেন, তিনি গত জুনে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে খাটালের অনুমোদন পান। বৈধ কাগজপত্র থাকার পরও সেলিম প্রধানের লোকজন খাটালটি দখল করে রেখেছে। তারা মোটা অঙ্কের টাকা দাবি করেছে। খাটাল বন্ধ থাকায় তিনি এখন বেকার।
অন্যদিকে এলাকাবাসী জানিয়েছেন সীমান্তে ওঠা লাখ লাখ টাকা কুরিয়ার সার্ভিসসহ অন্যান্য মাধ্যমে কেনাল প্রতিদিনই সেলিম প্রধানের কাছে পৌঁছে দিয়েছেন।
অনুসন্ধানে আরও জানা যায়, ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসলে সরকারের একাধিক নেতা ও মন্ত্রীর সঙ্গে তার সখ্যতা গড়ে ওঠে সেলিমের। এটা কাজে লাগিয়ে তিনি বিভিন্ন ব্যাংক থেকে ঋণ নেন। অভিযোগ আছে, ঋণের অধিকাংশ অর্থই তিনি ব্যাংককে পাচার করেন এবং সেখানে তিনি বিলাসবহুল জীবনযাপন শুরু করেন।
জানা গেছে যে, দুটি ব্যাংকে তিনি ঋণখেলাপি। কিন্তু ক্ষমতাসীন দলের প্রভাবশালী ব্যক্তিদের সঙ্গে তার যোগসাজশ থাকার কারণে তিনি ধরাছোঁয়ার বাইরে ছিলেন।