এখন প্রায় বেশিরভাগ প্রতিষ্ঠানের অফিসেই এয়ার কন্ডিশনার (এসি) থাকে। আর প্রতিদিন অন্তত আট ঘণ্টা এসির মধ্যেই কাজ করতে হয় কর্মকর্তা-কর্মচারীদের। দিনের এক তৃতীয়াংশ সময় এভাবে এসির মধ্যে থাকা শরীরের ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে বলেই জানিয়েছেন গবেষকরা। সেসব সমস্যা আর তার সমাধানগুলো জানি চলুন।
ত্বক ও চোখের শুষ্ক ভাব: এয়ার কন্ডিশনার বাতাসের আর্দ্রতা কমিয়ে দেয়, এ কারণে আমাদের শরীর শুষ্ক থাকে। তবে খারাপ দিক হলো এসি কিন্তু বাতাসের প্রয়োজনীয় আর্দ্রতাও কমিয়ে দেয়। এতে করে আমাদের ত্বক শুষ্ক হয়ে উঠে, অনেক সময় তা চুলকানি সৃষ্টি করে। এসি আমাদের চোখের জন্যেও ক্ষতিকর বলছেন চিকিৎসকরা। ভারতীয় চিকিৎসক ড. রোমেল টিকো বলেছেন, ‘এসির কারণে আমাদের চোখ শুষ্ক হয়ে লালচে ভাব দেখা দিতে পারে, চোখ চুলকাতে পারে ও দৃষ্টি অস্পষ্ট হয়ে উঠতে পারে।’
যা করণীয়: এক্ষেত্রে আপনার ত্বকের আর্দ্রতা বজায় রাখতে হবে। তাই সম্ভব হলে সব সময় ভালো কোনো কোম্পানির ময়েশ্চারাইজার রাখুন সাথে। যখনই ত্বক শুষ্ক মনে হবে, ব্যবহার করুন। আর চোখের শুষ্কতা দূর করতে ডাক্তারের পরামর্শে চোখের ড্রপ ব্যবহার করতে পারেন, এতে অস্বস্তি দূর হবে। আর এসি যদিও আপনাকে পানি পানের কথা ভুলিয়ে দেবে, তবে শরীরে পানির ভারসাম্য ঠিক রাখতে পর্যাপ্ত পানি পান করতে ভুলবেন না।
মাংসপেশি সংকোচন, মাথাব্যথা ও পিঠ ব্যথা: আরেক ভারতীয় ডাক্তার অজয় আগারওয়াল জানিয়েছেন প্রচন্ড ব্যাক পেইন, মাংসপেশি সংকোচন ও মাথাব্যথার সমস্যা নিয়ে অনেক রোগী আসেন তার কাছে। তাদের বেশিরভাগই তরুণ কর্মজীবী। তিনি বলেছেন এটা দীর্ঘক্ষণ এসির নিচে বসে কাজ করার কারণে হতে পারে। কারণ এসি শরীরের জয়েন্টে ও মাংসপেশিতে ব্যথা তৈরি করে যা এক পর্যায়ে রিউমেটিক পেইনে রূপ নিতে পারে। আরো খারাপ পরিস্থিতি হয়ে এই সমস্যা আথ্রাইটিস হতে পারে।
যা করণীয়: অফিসে এটা খেয়াল রাখুন যেন এসির তাপমাত্রা ২০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের কম না হয়। তাপমাত্রা ২৫ থেকে ২৭ ডিগ্রির মধ্যে থাকা ভালো। দীর্ঘক্ষণ এসির মধ্যে না থাকার চেষ্টা করুন। আট ঘণ্টার অফিস সময়ের মধ্যে অন্তত দুই বার বাইরের হাওয়া খেয়ে আসার চেষ্টা করুন।
বিরামহীন ক্লান্তি: অফিসের এসিতে দীর্ঘক্ষণ কাজ করার কারণে অনেকেই বিরামহীন ক্লান্তিতে ভোগেন, যাকে ‘সিক বিল্ডিং সিনড্রোম’ বলে। এই অবস্থার জন্য আকস্মিক তাপমাত্রা পরিবর্তনকে দায়ী করেছেন ডা. আগারওয়াল।
যা করণীয়: অফিসে এমন জায়গায় থাকার চেষ্টা করুন, যেখানে বাইরের নির্মল হাওয়া আসা যাওয়া করে। আট ঘণ্টার অফিস সময়ে অন্তত দুই বার বাইরে যাওয়ার চেষ্টা করুন। ঠান্ডা লাগা থেকে রক্ষা পেতে বড় শাল বা গরম কাপড় পরতে পারেন অফিসে।
শ্বাস কষ্ট হওয়া: এয়ার কন্ডিশনার যদি নিয়মিত পরিষ্কার করা না হয়, তাহলে তাতে ফাঙ্গাস, ব্যাকটেরিয়া তৈরি হতে পারে। আর সেসব ব্যাকটেরিয়া ঘরে ঢুকলে কফ, শ্বাস কষ্টের মতো বেশ কিছু জটিলতা তৈরি করতে পারে। এছাড়া বদ্ধ ঘরে এক সাথে অনেক মানুষ থাকার কারণে ইনফেকশন সহজে একজনের কাছ থেকে আরেকজনের কাছে ছড়িয়ে পড়ে।
যা করণীয়: অফিসের এয়ারকন্ডিশনারগুলোর ফিল্টার ও ডাক্টগুলো নিয়মিত পরিষ্কার হচ্ছে কি না, তা নিশ্চিত হোন। এছাড়া ক্রস-ভেন্টিলেশন এলাকায় থাকতে চেষ্টা করুন।
এয়ার কন্ডিশনার কি নারীদের বেশি ক্ষতি করে?: সম্প্রতি এক গবেষণায় জানা গেছে, একই তাপমাত্রায় পুরুষদের চেয়ে নারীরা বেশি ঠান্ডা অনুভব করে। তাই এয়ার কন্ডিশনার নারীদের বেশি ক্ষতি করতে পারে বলা যায়। সে হিসেবে অফিসে এসির প্রভাব থেকে বাঁচতে নারীদের একটু বেশি সতর্কতা অবলম্বন করা উচিত।
তথ্যসূত্র: টাইমসস অব ইন্ডিয়া