২২শে নভেম্বর, ২০২৪ ইং | ৭ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ | রাত ১:৩৯

কমেছে সঞ্চয়পত্র বিক্রি : বাড়ছে ঋণ গ্রহণের পরিমাণ

দেশে রাজস্ব আদায়ে একটু ধীরগতি ও উৎসে কর বেড়ে যাওয়া এবং বিভিন্ন ক্ষেত্রে কড়াকড়ি আরোপের ফলে সঞ্চয়পত্র বিক্রি কমে যাওয়ায় সরকারকে ব্যাংক থেকে প্রচুর ঋণ নিতে হচ্ছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, চলতি অর্থবছরের (২০১৯-২০) সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ব্যাংক থেকে ২৩ হাজার ৭৬১ কোটি টাকার বেশি ঋণ নিয়েছে সরকার।

কিন্তু চলতি এ পুরো অর্থবছরে (১ জুলাই থেকে আগামী বছরের ৩০ জুন) ব্যাংক থেকে সরকারের ঋণ নেওয়ার লক্ষ্য ধরা হয়েছে ৪৭ হাজার ৩৬৪ কোটি টাকা।

এর মধ্যে বাংলাদেশ ব্যাংক ঋণ সরবরাহ করেছে ৬ হাজার ৪৩৯ কোটি টাকা। আর বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো করেছে ১৭ হাজার ৩২৩ কোটি টাকা।

এদিকে, সরকার ট্রেজারি বিল ও বন্ডের বিপরীতে ৯১ দিন থেকে শুরু করে ২০ বছর পর্যন্ত মেয়াদে ঋণ নেয়।

এ ধারাবাহিকতা অব্যাহত থাকলে অর্থবছর শেষে সরকারের ব্যাংক থেকে ঋণের পরিমাণ লক্ষ্যমাত্রার কয়েকগুণ বেশি হয়ে যাবে। ফলে দেশের পুরো অর্থনীতি বড় ধরণের সংকটের মুখে পরবে বলেও আশংকা করছেন বিশ্লেষকরা।

এ বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. সালেহ উদ্দিন আহমেদ  বলেন, ‘মাত্র দেড় মাসে পুরো অর্থবছরের বাজেটের লক্ষ্যমাত্রার অর্ধেকের বেশি ঋণ নিয়ে ফেললে আগামী কয়েক মাসের নেওয়া ঋণ গত অর্থবছরের পুরো লক্ষ্যমাত্রাকে প্রায় ছুঁয়ে ফেলবে বলে মনে করা হচ্ছে। অন্যদিকে, সরকারের বড় বড় প্রকল্পের (পদ্মা সেতু, মেট্রোরেল ইত্যাদি) খরচ মেটানোর জন্য কিছুটা বাধ্য হয়েই এ ঋণ নেওয়ার প্রয়োজন হচ্ছে।’

এছাড়া, রাজস্ব আদায়ে যে ধীরগতি, এটি অব্যাহত থাকলে সরকারের ঋণ গ্রহণের পরিমাণ আরো বাড়বে ও বেসরকারি খাতে ঋণের প্রবাহ কমে যাওয়াসহ বিনিয়োগে বড় ধরণের নেতিবাচক প্রভাব পরার আশংকা করছেন অর্থনৈতিক বিশ্লেষকরা।

এদিকে, বিক্রি হওয়া সঞ্চয়পত্রের সুদ-আসল পরিশোধের পর যা অবশিষ্ট থাকে, তাকে বলা হয় নিট বিক্রি। ওই অর্থ সরকারের কোষাগারে জমা থাকে এবং সরকার তা রাষ্ট্রীয় কর্মসূচি বাস্তবায়নে কাজে লাগায়। বিনিময়ে সঞ্চয়পত্রের গ্রাহকদের প্রতি মাসে সুদ দিতে হয়। এ কারণে অর্থনীতির পরিভাষায় সঞ্চয়পত্রের নিট বিক্রিকে সরকারের ‘ঋণ’ বা ‘ধার’  হিসেবে গণ্য করা হয়। কিন্তু সঞ্চয়পত্র বিক্রি কমে যাওয়ায় এখান থেকেও সরকার যে বড় ধরণের ঋণ গ্রহণ করতে পারবে এ নিয়েও শঙ্কা থেকে যাবে।

এদিকে জাতীয় সঞ্চয় অধিদপ্তরের তথ্য মতে, গত বছরের জুলাই মাসের চেয়ে এই বছর সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগ নেমে এসেছে অর্ধেক। ২০১৮ সালের জুলাই মাসে ৫ হাজার ৩৬ কোটি টাকার সঞ্চয়পত্র বিক্রি হয়েছিল। কিন্তু চলতি বছরের জুলাই মাসে ২ হাজার ১৬০ কোটি টাকার সঞ্চয়পত্র বিক্রি হয়েছে। যা ২০১৯ সালের জুলাইয়ের চেয়ে ২ হাজর ৮৭৬ কোটি টাকা বেশি।

২০১৮ সালের জুলাই মাসে নিট সঞ্চয়পত্র বিক্রির পরিমাণ ছিল ৫ হাজার ৩৫ কোটি ৭৪ লাখ টাকা। ২০১৮-১৯ অর্থবছরে নিট সঞ্চয়পত্র বিক্রির পরিমাণ ছিল প্রায় ৫০ হাজার কোটি টাকা। বিক্রির চাপ কমাতে চলতি বাজেটে সঞ্চয়পত্রের মুনাফার উপর উৎসে করের হার ৫ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ১০ শতাংশ করা হয়। একইসঙ্গে সঞ্চয়পত্র কিনতে টিআইএন (কর শণাক্তকরণ নম্বর) এবং ব্যাংক অ্যাকাউন্ট বাধ্যতামূলকসহ আরো কিছু নতুন শর্তই সঞ্চয়পত্র বিক্রি কমে যাওয়ার কারণ হিসেবে ধরা হচ্ছে।

প্রসঙ্গত, বাজেট ঘাটতি পূরণে প্রতিবছরই দুইভাবে ঋণ নিয়ে থাকে সরকার। এর একটি হচ্ছে বৈদেশিক সহায়তা, অন্যটি অভ্যন্তরীণ উৎস। অভ্যন্তরীণ উৎস হিসেবে ব্যাংক ও সঞ্চয়পত্র খাত থেকে ঋণ নেওয়া হয়। অভ্যন্তরীণ উৎস থেকে সরকারের ৭৭ হাজার ৩৬৩ কোটি টাকা ধার করার লক্ষ্য রয়েছে। এরমধ্যে সঞ্চয়পত্র থেকে ২৭ হাজার কোটি টাকা ঋণ নেওয়ার পরিকল্পনা করা হয়েছে।

প্রকাশ :সেপ্টেম্বর ২২, ২০১৯ ৩:৩৭ অপরাহ্ণ