২৩শে নভেম্বর, ২০২৪ ইং | ৮ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ | বিকাল ৩:৩০

ভাঙা সংসার জোড়া লাগল যেভাবে

 লক্ষ্মীপুরের কমলনগর উপজেলার উত্তর চর মার্টিন গ্রামের হাফেজ আহমদের মেয়ে রূপা আক্তার। ২০১১ সালে একই গ্রামের হোসেন আহমদের ছেলে আবদুল জাহেরের সঙ্গে পারিবারিকভাবে বিয়ে হয় তার। তাদের দুই ছেলে সন্তান আছে। চলতি বছরের ২৩ জানুয়ারি পারিবারিক কলহের জেরে রূপাকে তালাক দেন আবদুল জাহের।

সম্প্রতি জেলা লিগ্যাল এইড অফিসে বিকল্প বিরোধ নিষ্পত্তির মাধ্যমে এ দম্পতির ভাঙা সংসার ‘জোড়া’ লেগেছে। জাহের ভুল বুঝতে পেরে রূপাকে পুনরায় বিয়ে করেছেন।

জানা গেছে, আবদুল জাহের বেকারি শ্রমিক। স্বল্প আয়েই ভালোভাবে চলছিল রূপা ও জাহেরের সংসার। হঠাৎ করে পারিবারিক বিভিন্ন সমস্যাকে কেন্দ্র করে রূপার সঙ্গে তার শ্বশুরবাড়ির লোকজনের ভুল বোঝাবুঝি হয়। এর পরিপ্রেক্ষিতে চলতি বছরের ২৩ জানুয়ারি রূপাকে তালাক দেন জাহের। কিন্তু রূপা সংসার ভাঙতে নারাজ। কিন্তু কী করবেন তিনি? আদালতে স্বামীর বিরুদ্ধে মামলা করে অধিকার আদায় করবেন? তাহলে তো অনেক টাকার দরকার। কিন্তু তার দরিদ্র বাবার পক্ষে এত টাকা দেয়া সম্ভব নয়। অন্যদিকে, দুই সন্তানকে নিয়ে দিশেহারা অবস্থা তার। এসব নিয়ে ভাবতে ভাবতে রূপা তার বাবার বাড়িতে প্রায় ৪ মাস কাটিয়ে দেন।

এরপর একদিন রূপা ছুটে গেলেন জেলা লিগ্যাল এইড অফিসে। তিনি জানতে পারেন, সেখানে সরকারিভাবে আইনি সহায়তা দেয়া হয়। এজন্য টাকা-পয়সা দিতে হয় না। রূপা ১৬ মে জেলা লিগ্যাল এইড অফিসে অভিযোগ দায়ের করেন। তবে সেটি মামলা নয়। কারণ, রূপা ইতোমধ্যে জেনেছেন, মামলা ছাড়াই বিকল্প বিরোধ নিষ্পত্তির মাধ্যমে ন্যায্য অধিকার আদায়ের আইনি প্রক্রিয়া রয়েছে।

জেলা লিগ্যাল এইড কর্মকর্তা ও সিনিয়র সহকারী জজ ফাহ্দ বিন আমিন চৌধুরী বলেন, লিগ্যাল নোটিশ পেয়ে আবদুল জাহের অফিসে আসেন। জাহের জানান যে, তিনি সংসার করবেন না। তবে দেনমোহরের সব টাকা পরিশোধ করতে পারবেন না। যতটুকু পারেন কিস্তিতে পরিশোধ করবেন। তাকে মামলার কুফল ও মানহানি সম্পর্কে বোঝানো হয়। তবু তিনি তার সিদ্ধান্তে অনড় ছিলেন। দেনমোহরের কিছু টাকা জমা দিয়ে যান।

এ নিয়ে রূপা কিছুটা হতাশ হয়েছিলেন। কারণ, ইতোমধ্যে তালাক কার্যকর হয়েছিল। কিন্তু সেই হতাশার রেশ কাটতে বেশি দিন লাগেনি। মাত্র তিনটি আপস বৈঠক। এরইমধ্যে রূপা ও জাহেরের ভাঙা সংসার ‘জোড়া’ লেগে যায়। জাহের তার ভুল বুঝতে পেরে তালাক প্রত্যাহার করেন এবং রূপাকে পুনরায় বিয়ে করার সম্মতি জানান। পরে জেলা লিগ্যাল এইড কর্মকর্তা তার অফিসে কাজী ডেকে বিয়ের আয়োজন করেন। এ সময় ওই দম্পতি, তাদের দুই শিশু সন্তান, বিয়ের সাক্ষী, কাজী, ইউএসএআইডি ও এইড কুমিল্লার প্রতিনিধিসহ উপস্থিত সবাইকে মিষ্টিমুখ করানো হয়। ১৭ সেপ্টেম্বর জেলা লিগ্যাল এইড অফিসে আবদুল জাহের ও রূপা আক্তারের আপস চুক্তিপত্র সম্পাদন করা হয়।

পরে আবদুল জাহের বলেন, ‘মাথা গরম হওয়ায় অনেক বড় ভুল হয়েছিল। সাজানো সংসারটাই হারাতে বসেছিলাম। জেলা লিগ্যাল এইড অফিসের সহযোগিতায় সংসার ফিরে পেয়েছি। ফিরে পেয়েছি স্ত্রী ও সন্তানদের।’

জেলা লিগ্যাল এইড কর্মকর্তা ফাহ্দ বিন আমিন চৌধুরী বলেন, ‘রাগ, জেদ থেকে নেয়া সিদ্ধান্তের নেতিবাচক পরিণতি হয়। প্রকৃত পরিস্থিতি বিশ্লেষণ করলে যেকোনো বিরোধ থেকেই ইতিবাচক পরিণতির দিকে অগ্রসর হওয়া যায়। ’

প্রকাশ :সেপ্টেম্বর ২১, ২০১৯ ২:৫০ অপরাহ্ণ