২২শে নভেম্বর, ২০২৪ ইং | ৭ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ | সকাল ৮:২৭

মা-ছেলেকে খুনের দায়ে তিনজনের ফাঁসি, চারজনের যাবজ্জীবন

রাজশাহী ব্যুরো : রাজশাহীর বাগমারা উপজেলার দেউলা গ্রামের আকলিমা বেগম ও তার ছেলে জাহিদ হাসানকে গলাকেটে হত্যার মামলায় তিনজনের ফাঁসির আদেশ দিয়েছেন আদালত। এছাড়া রায়ে চারজনের যাবজ্জীবন কারাদণ্ড ও ১০ হাজার টাকা করে অর্থদণ্ড করা হয়।রাজশাহীর দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালের বিচারক অনুপ কুমার বুধবার সকালে মামলাটির রায় ঘোষণা করেন।

ফাঁসির দণ্ডপ্রাপ্তরা হলেন নিহত আকলিমা বেগমের দেবর আবুল হোসেন মাস্টার, তার সহযোগী হাবিবুর রহমান হাবিব এবং দুর্গাপুর উপজেলার দেবীপুর গ্রামের খলিলুর রহমানের ছেলে আবদুর রাজ্জাক। তাদের মধ্যে আবুল হোসেন বাগমারা উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক। দেউলা রানী রিভারভিউ উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকও তিনি। আর হাবিবুরের বাড়ি রাজশাহীর দুর্গাপুর উপজেলার আলীপুর গ্রামে।

আর যাবজ্জীবন দণ্ডপ্রাপ্তরা হলেন- দুর্গাপুরের শ্যামপুর গ্রামের আতাউর রহমানের ছেলে আব্দুল্লাহ আল কাফি, লবির উদ্দিনের ছেলে রুহুল আমিন, দুর্গাপুরের খিদ্রকাশিপুর গ্রামের ছাবের আলীর ছেলে রুস্তম আলী এবং খিদ্রলক্ষ্মীপুর গ্রামের মনিরুল ইসলাম ওরফে মনির। এরা ভাড়াটে খুনি হিসেবে হত্যাকাণ্ডে অংশ নেন।

আদালতের রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী এন্তাজুল হক বাবু জানান, ‘দ্রুত নিষ্পত্তির জন্য এ বছরের এপ্রিলেই মামলাটি জেলা জজ আদালত থেকে দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে পাঠানো হয়। মামলাটিতে মোট ৫১ জন সাক্ষী ছিলেন। আদালত ৪৭ জনের সাক্ষ্যগ্রহণ করেন। এরপর গত বুধবার উভয়পক্ষের যুক্তিতর্ক উপস্থাপন শেষে মামলার রায় ঘোষণার দিন আজকের দিন ধার্য করেছিল।

বাগমারার দেউলা গ্রামে নিজ বাড়িতে ২০১৪ সালের ২৪ নভেম্বর রাতে আকলিমা বেগম ও তার ছেলেকে গলাকেটে হত্যা করা হয়। এ ঘটনায় আকলিমার বড় ছেলে দুলাল হোসেন বাদী হয়ে অজ্ঞাত কয়েকজনকে আসামি করে বাগমারা থানায় একটি হত্যা মামলা করেন। এরপর থেকে বিভিন্ন সময় নানা মোড় নেয় এই জোড়া খুনের তদন্ত। তিন দফা বদল করা হয় তদন্ত কর্মকর্তা।

সর্বশেষ পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) মামলাটির তদন্ত করে। এরপর এই হত্যাকাণ্ডের রহস্য বেরিয়ে আসে। পরে ২০১৮ সালের ৩১ মে আদালতে পিবিআইয়ের পরিদর্শক আলমগীর হোসেন এ মামলার অভিযোগপত্র দাখিল করেন। এতে সাতজনকে অভিযুক্ত করা হয়।

এই হত্যার মূল পরিকল্পনাকারী ছিলেন দুইজন। তারা হলেন- নিহত আকলিমার দেবর আবুল হোসেন মাস্টার এবং তার সহযোগী হাবিবুর। আর বাকি আসামিরা ভাড়াটে খুনি হিসেবে হত্যাকাণ্ডে অংশ নেন।

নিহত আকলিমা বেগমের বড় ছেলে দুলাল হোসেন জানান, ‘ছোটবেলায় তার বাবা মারা যাওয়ার পর চাচা আবুল হোসেনই সব সম্পত্তির দেখাশোনা করতেন। ২০১৪ সালে ছোট ভাই জাহিদ হাসান রাজশাহী কলেজ থেকে দর্শন বিভাগে মাস্টার্স শেষ করেন। চাচা আবুল হোসেনের পর তার ভাই জাহিদ ছিল একমাত্র উচ্চশিক্ষিত। বিষয়টি মেনে নিতে পারতেন না চাচা। জাহিদ পড়াশোনা শেষ করে চাচার কাছ থেকে সব সম্পত্তি বুঝে নিতে চায়। এ নিয়ে চাচার সঙ্গে দ্বন্দ্ব শুরু হয়।

দুলাল আরও জানান, তিনি আলাদা বাড়ি করে থাকেন। আর তার মা ও ভাই এক বাড়িতে থাকতেন। বাড়িতে জাহিদ না থাকলে চাচা আবুল হোসেন বিভিন্ন স্থান থেকে নারীদের নিয়ে গিয়ে অসামাজিক কার্যকলাপ করতেন। এরপর লোকজন নিয়ে ওই নারীদের মাধ্যমে ব্ল্যাকমেইলও করা হতো। এসবের প্রতিবাদ করতেন তার মা। এ নিয়ে আবুল হোসেনের সঙ্গে দ্বন্দ্ব আরও বেড়ে যায়।

দুলাল বলেন, ২০১৩ সালে জাহিদের পড়াশোনার জন্য তার মা আকলিমা বেগম রাজশাহী মহানগরীর টিকাপাড়া এলাকায় ভাড়া থাকতেন। সেখানে হাবিবুর রহমানের সঙ্গে তার পরিচয় হয়। হাবিবুর মাদক ব্যবসা করতেন। এই কাজে তিনি আকলিমাকে ব্যবহারের চেষ্টা করতেন। কিন্তু আকলিমা এতে রাজি হননি। আবুল হোসেনের সঙ্গেও হাবিবুরের পরিচয় ছিল। এসব দ্বন্দ্বের জের ধরে তারা আকলিমা ও জাহিদকে হত্যার পরিকল্পনা করেন। পরিকল্পনা অনুযায়ী তারা ভাড়াটে খুনিদের দিয়ে তার মা ও ভাইয়ের গলাকেটে হত্যা করেন।

প্রকাশ :সেপ্টেম্বর ১৮, ২০১৯ ১২:৫১ অপরাহ্ণ