কুমিল্লার যুবক আসিফ আকবর প্রথম অ্যালবামের আকাশছোঁয়া সফলতার পর আর সেই মিঠুকে দেখতে পাননি। এ ধরণের আক্ষেপ ফুটে উঠেছে তার লেখায়। লেখনিতে এমনিতেই তিনি বেশ দক্ষ। তার ওপর এই লেখার ভেতরে শব্দ প্রয়োগের মুন্সিয়ানা লেখাটিকে পাঠকের মনে আরো বেশি আবেগ ছড়িয়ে দিয়েছে।
লেখাটি ছিল এমন-
‘সারাটা জীবন কেটে গেল সংগ্রামে, এখনো কিছুটা জীবন বাকি। একজন অশিক্ষিত গায়কের সফলতায় সেই ছেলেটি খুব উচ্ছ্বসিত, মিঠু থেকে আসিফ, দারুণ ব্যাপার। আসিফের অনেক ফ্যান, আসিফ নিজেই বুঝতে পারে না, সে আসলে কি করল! দশ দিক ঘেরাও করে রাখা এত এত ভালোবাসা, কীভাবে সামলানো যায়? চিন্তার বিষয় আলবৎ… আমার আত্মীয়-স্বজন থেকে শুরু করে মহল্লার পাওনাদার দোকানি বসরাও মিঠু্কে ভুল করে হলেও কখনো না কখনো আসিফ নামেই সম্বোধন করে ফেলে, ভালোই লাগে।
আবার ভয়ও লাগত, আসিফ নামটা কী আমাকে সবার কাছ থেকে আস্তে আস্তে দুরে সরিয়ে দিচ্ছে! ভয় পেলেই ভয়ের অভিষেক হয়, আমারও তাই হয়েছে। যাদের খুব কাছের আপনজন ছিলাম, তারাও ভালোবাসার বাইরে আমার অহেতুক ব্যস্ততাকে গুরুত্ব দেয়া শুরু করে, আমাকে আসিফই ভাবতে লাগল, তথাকথিত তারকা। আমি মিঠু থেকে আসিফ হয়ে নিজের শত্রু হিসেবে নিজেকেই প্রতিপক্ষ বানিয়ে ফেললাম। এ ধরনের ভাবনা নিয়ে আমি আসিফ হইনি, নিয়তি সফলতা দেয়ার পাশাপাশি আমাকে আপনজনদের কাছ থেকে অনেকটা স্লো পয়জনিং এর মতো ফর্মুলায় একা করে দিয়েছে।
আরেক দিকে ভালোবাসার ভক্তকূল, তাদেরকে দেয়ার মতো সময় পাই না। আমি বেসিক শিল্পী না, ভয় হয় যদি ভুলভাল কিংবা বেসুরো গাই, তাহলে তিরষ্কারের মাইলস্টোন হয়ে যাব। চাপ আর চাপ চারিদিকে, একটু আত্মবিশ্বাস থাকায় এখনো স্ট্রোক হয়নি, হতে কতক্ষণ? যোগ্যতার বাইরে প্রাপ্তি সবসময় হজমে সমস্যা তৈরি করে, আমারো হয়তো এখন তাই হচ্ছে। একেক সময় একেক ট্রেন্ড আসে, তাল মেলাতে গিয়ে বিপাকে থাকি, তারপরও লাইফ চ্যালেঞ্জ নিয়ে নেই, কারণ এই পোঁকাটাকে মারতে পারিনি এখনো। এই পোঁকাটাই সাধারণ সহজ-সরল ফুর্তি প্রিয় মিঠুকে আসিফ বানিয়ে ফেলেছে, আর চারিদিকে দুরত্ব লাগামহীন গতি পাচ্ছে।
ব্যক্তিজীবন আর ঘুম উধাও হয়ে গেছে জীবন থেকে। এই পোস্টটা দিয়েই শুটিংয়ে যাব, যেতে হবে। প্রতিদিনই ভাবি একটু বিশ্রামে থেকে আরাম করি, আরামটা ভালোবাসার বিকল্প হতে পারেনি এখনো। শরীর মন একটু প্রশান্তি চায়, দিতে হবে। উসাইন বোল্ট নিজেও সারাজীবন স্প্রিন্টে থাকবে না, বিশ্রাম যাবে-ই। হঠাৎ করেই শুনতে পেলাম, মিঠু আসিফকে বলছে, আসিফ আকবর, প্লিজ মিঠুকে বিশ্রাম দাও, ওর মনের কথা শোনার চেষ্টা করো, একটু বোঝার চেষ্টা করো… জীবন মৃত্যু সফলতা ব্যর্থতা একধরনের খেলা, বহুদিন বোকা বানিয়ে রেখেছো… এবার একটু ঘুমোতে চাই…প্রয়োজনে একেবারে…। সবসময়ই বলব… ভালোবাসা অবিরাম…।’
গানের পক্ষে প্রতিবাদ করতে গিয়ে নিজের কেরিয়ারের অনেক ক্ষতি করলেও তিনি দামেননি। সংগীতের যেখানেই অসঙ্গতি সেখানেই তিনি সোচ্চার থেকেছেন। অডিও পাইরেসি যখন এ শিল্পকে ধ্বংসের দোড়গোড়ায় নিয়ে যাচ্ছিলো তখন তিনি নিজেই মাঠে নেমেছিলেন। প্রতিবাদে গান গাওয়া থেকে দূরে ছিলেন। সিনেমার প্লেব্যাকে গায়ক-গায়িকাদের সম্মানীর অসামাঞ্জস্যতা মেনে নিতে না পেরে প্লেব্যাক করেননি তিন বছর। গানের শিল্প যখন লেবেল কোম্পানি কেন্দ্রিক নতুন ফ্ল্যাটফর্ম পেয়ে আবারও সোজা হয়ে দাঁড়াবার পায়তারা করছে তখনও আসিফ আকবর সেরাদের কাতারে।
এখনকার ইউটিউব কেন্দ্রিক গানে সবচেয়ে বেশি ব্যস্ত আসিফই-এটা তার শত্রুরাও মানছেন। সবচেয়ে বেশি আলোচনা, সমালোচনাও তাকে নিয়ে! সিনিয়র শিল্পী হিসেবে যখন তার সমসাময়িকরা অনেকটাই বিশ্রামে সময় পার করছেন, তখন আসিফ সময়ের দাবি মেনে, উইগ পরে, কড়া রোদে নিজের গানের উপস্থাপনায় নিজেই নায়কের ভূমিকায়। ‘কাজের লোকদেরই শত্রু বেশি থাকে’-মণিষীদের এ কথা মেনে বলতেই হয় – শো মাস্ট গো অন আসিফ আকবর।