২৪শে নভেম্বর, ২০২৪ ইং | ৯ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ | রাত ৯:১৭

রোহিঙ্গাদের জন্য ভুয়া কাগজপত্র: জড়িত ডিএনসিসি কর্মকর্তারাও

রোহিঙ্গাদের জন্য নাগরিক পরিচয়পত্র ও জন্ম নিবন্ধন সনদ তৈরি চক্রের সঙ্গে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের নিবন্ধন বিভাগের (ডিএনসিসি) কয়েকজন কর্মকর্তা জড়িত রয়েছে বলে তথ্য পেয়েছে র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‌্যাব)। গত বুধবার (১১ সেপ্টেম্বর) নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জ থেকে এই চক্রের ছয় সদস্যকে আটকের পর তারা র‌্যাবকে এ তথ্য দিয়েছে।
র‌্যাব জানায়, বুধবার সিদ্ধিরগঞ্জের পাসপোর্ট অফিসের সমানের একটি কম্পিউটার দোকান থেকে চক্রের ছয় সদস্যকে আটক করা হয়। চক্রটি সৌদি আরবে প্রবেশ করা কয়েকজন রোহিঙ্গার ভুয়া জন্ম নিবন্ধন ও পরিচয়পত্র পাঠিয়েছে। তাদের সঙ্গে আরও অনেকে জড়িত রয়েছে বলে তারা জানিয়েছে। পুরো চক্রটিকে আইনের আওতায় নিয়ে আসার জন্য র‌্যাব-২ কাজ করছে।
এদিকে, পুলিশ জানিয়েছে বুধবার আটক ওই ছয় জনকে আসামি করে শুক্রবার (১৩ সেপ্টেম্বর) দুপুরে সিদ্ধিরগঞ্জ থানায় একটি মামলা দায়ের করা হয়েছে।
র‌্যাব-২ এর কোম্পানি কমান্ডার মহিউদ্দিন ফারুক জানান, দীর্ঘদিন ধরে এই চক্র ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের নিবন্ধন বিভাগের কয়েকজন অসাধু কর্মকর্তার মাধ্যমে দেশের বিভিন্ন জায়গায় এবং কম্পিউটারের দোকানে ভুয়া জন্ম নিবন্ধন সনদ ও নাগরিক পরিচয়পত্র তৈরি করে আসছে। তারা রোহিঙ্গাদের পাসপোর্ট তৈরি করারও চেষ্টা করছে। সিটি করপোরেশনের অসাধু চক্রটিকে চিহ্নিত করে আইনের আওতায় আনা হবে।অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা আব্দুল হাই বলেন, ‘এই অভিযোগটি আমি প্রথম শুনলাম। যদি এরকম কোনও কিছু হয়ে থাকে, যারা এর সঙ্গে জড়িত তাদের বিরুদ্ধে শুধু প্রশাসনিক ব্যবস্থা নয়; বরং ফৌজদারি আইনে মামলার পাশাপাশি বরখাস্ত করা হবে। যেহেতু জন্ম সনদ আমাদের আঞ্চলিক অফিসগুলো থেকে হয়ে থাকে, তাই আমি সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের এখনই নির্দেশ দেবো, তারা যেন এ বিষয়ে সতর্ক থাকেন।’
র‌্যাব জানায়, কক্সবাজারের টেকনাফ ও উখিয়াসহ আশপাশের এলাকায় বসবাসরত রোহিঙ্গাদের অনেকেই অবৈধভাবে বিদেশে যাওয়া শুরু করেছে। দেশের কিছু দালালের সহযোগিতায় তারা বাংলাদেশি পাসপোর্ট তৈরি করে নিচ্ছে। তবে পাসপোর্ট তৈরির জন্য জন্ম নিবন্ধন সনদ ও নাগরিক পরিচয়পত্র তৈরির কাজগুলো করতে একটি আইটি অভিজ্ঞ চক্র তাদের সহযোগিতা করছে। এই চক্রটি সফটওয়্যারের মাধ্যমে নাম-পরিচয় ও ঠিকানা ঠিক রেখে এ কাজ করছে।
জানা যায়, গত বুধবার বিকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত র‌্যাব সিদ্ধিরগঞ্জের চারটি কম্পিউটারের দোকানে অভিযান চালিয়ে এই জালিয়াতির প্রমাণ পায়। বিভিন্ন বয়সের রোহিঙ্গাদের ছবি সম্বলিত পঁচিশ হাজারেরও বেশি অবৈধ নাগরিক পরিচয়পত্র ও জন্ম নিবন্ধন সনদের ফরম পাওয়া যায় সেখানে। এই সনদ ব্যবহার করে দালাল চক্রের মাধ্যমে খুব সহজেই রোহিঙ্গারা পাসপোর্ট পেয়ে যাচ্ছে।
র‌্যাব-২ এর কোম্পানি কমান্ডার মো. মহিউদ্দিন ফারুক বলেন, ‘এখন পর্যন্ত সিদ্ধিরগঞ্জের জালকুড়ি আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিসের কোনও কর্মকর্তার জড়িতের প্রমাণ পাওয়া যায়নি। তবে বিষয়টি আমাদের নজরদারিতে রয়েছে। অবৈধভাবে তৈরি করা নাগরিক পরিচয়পত্রগুলোতে সিটি করপোরেশনের স্থানীয় ওয়ার্ড কাউন্সিলর ও ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান এবং ওয়ার্ড মেম্বারদের সিল স্বাক্ষরও ব্যবহার করা হয়েছে। এসব জনপ্রতিনিধি এই জালিয়াতির কাজে জড়িত আছেন কিনা, সে বিষয়টিও খতিয়ে দেখা হচ্ছে।’এ ব্যাপারে নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জের জালকুড়ি আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিসের সহকারী পরিচালক মাকসুদুর রহমান বলেন, ‘পাসপোর্ট দেওয়ার আগে আমরা অনেক যাচাই বাছাই করি। বাংলাদেশে প্রবেশ করা রোহিঙ্গাদের একটি ডেটাবেজ করে তাদের ফিঙ্গার প্রিন্ট নিয়ে তা একটি সার্ভারে সংরক্ষণ করা হয়েছে। ওই সার্ভার আমাদের সার্ভারের সঙ্গে সংযুক্ত করা হয়েছে। যেকোনও পাসপোর্ট করার সময় তার ফিঙ্গার প্রিন্ট নিয়ে ওই রোহিঙ্গাদের সার্ভারে চেক করি। তারপর পুলিশ ভেরিফিকেশন করে একজন নাগরিককে পাসপোর্ট দিই। জন্           ম নিবন্ধন সদন ও পরিচয়পত্র তৈরির কোনও কাজ পাসপোর্ট অফিসে নেই। কোনও নাগরিক পাসপোর্ট করার জন্য আবেদন করলে তার সঙ্গে পরিচয়পত্র ও জন্ম নিবন্ধন সনদ প্রদান করে। ওই জন্ম নিবন্ধনের যে সিরিয়াল নম্বর আছে তা সার্ভারে দেখে পাসপোর্ট অফিস নিশ্চিত হয়—সে যে জন্ম নিবন্ধন কাগজ জমা দিয়েছে তা সার্ভারেরটার সঙ্গে মিল আছে কিনা।’

প্রকাশ :সেপ্টেম্বর ১৪, ২০১৯ ৬:১১ অপরাহ্ণ