কারাবন্দিদের বিস্তারিত তথ্য নিয়ে তৈরি হচ্ছে ‘কারাবন্দি ডাটাবেজ’। এই ডাটাবেজে থাকবে তাদের মামলার তথ্য। পাশাপাশি তারা কত দিন ও কতবার জেল খেটেছেন—সেই তথ্যসহ কারাবন্দিদের স্থায়ী-অস্থায়ী ঠিকানাও থাকবে। এই ডাটাবেজকে পর্যায়ক্রমে জাতীয় পরিচয়পত্রের সার্ভার, বিমানবন্দর ইমিগ্রেশন ও পাসপোর্ট অধিদফতরের সঙ্গেও যুক্ত করা হবে। এতে অপরাধীদের যেমন শনাক্ত করা সহজ হবে, তেমনি জামিনে বেরিয়ে পালিয়ে যাওয়ার পথও বন্ধ হবে। আগামী সপ্তাহে এই ডাটাবেজের উদ্বোধন করবেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল। কারা অধিদফতর সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।
সূত্র জানায়, দেশে বর্তমানে ১৩টি কেন্দ্রীয় কারাগার ও ৫৫টি জেলা কারাগার রয়েছে। কারা সদর দফতর, সাতটি বিভাগীয় কারা দফতর ৬৮টি কারাগার নিয়ে দেশের কারা বিভাগ গঠিত। নিয়মিত বন্দির সংখ্যা এখন ৮০ হাজার ছাড়িয়েছে।
এই ডাটাবেজটি পুরোপুরি বাস্তবায়ন করা গেলে কোন বন্দি কোন কারাগারে আছে, তার অপরাধের ধরন, মামলার সংখ্যা, স্থায়ী ও বর্তমান ঠিকানা, আদালতে হাজিরার তারিখসহ সব কিছুই এক ক্লিকে পাওয়া যাবে। প্রতিদিনই এই ডাটাবেজ আপডেট করা হবে। ডাটাবেজে বন্দির ছবি, আঙুলের বায়োমেট্রিক ছাপ, চোখের মনির স্ক্যান ও আগের অপরাধের রেকর্ডসহ সব ধরনের তথ্য-উপাত্ত থাকবে এই ডাটাবেজে। এর মাধ্যমে বন্দিদের নিরাপদ আটকের বিষয়েও আরও স্বচ্ছতা আসবে। জঙ্গিবাদে জড়িয়ে যারা কারাগারে গেছে, তাদের নজরদারিতে রাখা সহজ হবে। আরও সুন্দর ও সঠিকভাবে তাদের অবস্থান, খাদ্য, চিকিৎসা, আত্মীয়-স্বজন, বন্ধু-বান্ধব ও আইনজীবীদের সঙ্গে সাক্ষাৎ নিশ্চিত করা সম্ভব হবে। দেশের যেকোনও কারা অধিদফতর থেকেই যেকোনও বন্দির অবস্থান জানা সম্ভব হবে। এছাড়া, কোন কারাগার থেকে কতজন বন্দিকে আদালতে হাজিরা দিতে নিয়ে যাওয়া হয়েছে, আবার সঠিকভাবে তাদের কারাগারে ফেরত নিয়ে আসা সম্ভব হয়েছে কিনা, তাও জানা যাবে এই ডাটাবেজ থেকে। এতে প্রত্যেক কারাবন্দির আলাদা প্রোফাইল তৈরি করা হবে। এর মাধ্যমে কোন বন্দির জন্য কী ধরনের নিরাপত্তার প্রয়োজন, সেটাও সহজে জানানো যাবে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে।
জানতে চাইলে কারা অধিদফতরের অতিরিক্ত মহাপরিদর্শক কর্নেল মো. আবরার হোসেন বলেন, ‘পাইলট প্রজেক্ট হিসেবে এরইমধ্যে কাশিমপুর-২ ও গাজীপুর কারাগারে এই ডাটাবেজের কাজ শুরু হয়েছে। আগামী ১৭ সেপ্টেম্বর স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী এই ডাটাবেজ উদ্বোধন করবেন। এরপর সারাদেশে ডাটাবেজের কাজ এগিয়ে নেওয়া হবে।’ তিনি বলেন, ‘এই ডাটাবেজ থেকে আমরা অনেক কাজ করতে পারবো। কারাগারে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে বন্দির পুরনো সব তথ্য বের করা যাবে। তার মামলার অগ্রগতি কতদূর, মামলার তারিখ কবে—সব কিছুই এই ডাটাবেজে থাকবে। এখন যেমন কোনও বন্দির তথ্য খুঁজতে অনেক বেগ পেতে হয়, তখন সেই সমস্যায় আর পড়তে হবে না।’
এই ডাটাবেজ ছাড়াও র্যাবের একটি ডাটাবেজ রয়েছে। যেই ডাটাবেজে র্যাবের হাতে আটক বন্দিদের তথ্য সংগ্রহ করে থাকে। সেই ডাটাবেজের নাম দেওয়া হয়েছে ‘র্যাব-প্রিজন ইনমেট ডাটাবেজ’, যেটি ২০১৬ সালে উদ্বোধন করেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল। যদিও এই ডাটাবেজের কাজ আরও আগে থেকেই শুরু করেছিল র্যাব।