২২শে নভেম্বর, ২০২৪ ইং | ৭ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ | সকাল ৮:০৬

ছাত্রলীগে তবু ‘বহাল তবিয়তে’ বিতর্কিতরা

ছাত্রলীগ নিয়ে ক্ষুব্ধ খোদ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এর মধ্যেও নতুন করে বিতর্কে জড়াচ্ছে ক্ষমতাসীন দলের অনুসারী ছাত্র সংগঠনের কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব। নানা অভিযোগে সংগঠন থেকে বাদ দেওয়ার ঘোষণা দেওয়া ১৯ জনকে বাদ দেওয়া হচ্ছে না সংগঠন থেকে।

ছাত্রলীগের পূর্ণাঙ্গ কমিটি ঘোষণার পর দলের একাংশ কমিটিতে বিতর্কিতদের পদ দেওয়া হয়েছে অভিযোগ করে আন্দোলনে নামে। এর পরিপ্রেক্ষিতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিতর্কিতদের বিরুদ্ধে তদন্ত করে ব্যবস্থা নিতে ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি রেজওয়ানুল হক চৌধুরী শোভন ও সাধারণ সম্পাদক গোলাম রাব্বানীকে নির্দেশ দেন।

এর কয়েক দিন পর ছাত্রলীগের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে মাদকাসক্ত, বিবাহিত, মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বিরোধীসহ বিভিন্ন অভিযোগে ১৯ জনকে অব্যাহতি দিয়ে তাদের পদ শূন্য করার ঘোষণা দেওয়া হয়। যাচাই বাছাই করে পদগুলো পূরণ করার কথাও জানানো হয়। কিন্তু প্রায় চার মাস পেরিয়ে গেলেও এখনও জানাই যায়নি সেই ১৯ জনের নাম। ফলে আদৌ কেউ বাদ গেছে কি না, এই বিষয়টি নিশ্চিত করে বলাই যাচ্ছে না।

ছাত্রলীগের একাধিক নেতা বলছেন, প্রধানমন্ত্রী ক্ষুব্ধ হওয়ার পর থেকে ছাত্রলীগ সভাপতি সাধারণ সম্পাদক একটু চাপে। ক্ষুব্ধ হওয়ার অন্যতম কারণও বিতর্কিতদের নামপ্রকাশ না করা এবং তাদের বাদ না দেওয়া।

গত ১৩ মে ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় পূর্ণাঙ্গ কমিটি ঘোষণা করা হয়। এরপর কমিটিতে পদ না পাওয়া কিছু নেতাকর্মী অভিযোগ তুলেন যে, কমিটিতে পদপ্রাপ্ত অনেকেই মাদকাসক্ত, বিবাহিত ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বিরোধী সংগঠনের রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত।

কেন্দ্রীয় শীর্ষ নেতৃত্ব প্রথমে এসব অভিযোগ আমলে না নিলেও পরবর্তীতে পদবঞ্চিতদের ‘কমিটি পুনর্গঠন’ আন্দোলন জোরদার হয়। এরপর ১৫ মে বিতর্কিতদের বিরুদ্ধে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেয়ার নির্দেশ দেন শেখ হাসিনা। আর ওই রাতেই সংবাদ সম্মেলন করে বিতর্কিত হিসেবে ১৭ জনের নাম প্রকাশ করে আন্দোলনকারীরা।

পরে ২৯ মে ১৯টি পদ শূন্য করার বিজ্ঞপ্তি আসে। তবে কারো নাম প্রকাশ করা হয়নি সেখানে। আর চলতি মাসের মধ্যে এদের নাম প্রকাশের সময় বেঁধে দিয়েছেন কমিটির বিরুদ্ধে অবস্থান নেয়া নেতাকর্মীরা।

এর মধ্যে ছাত্রলীগের শীর্ষ দুই নেতার ওপর প্রধানমন্ত্রীর অসন্তোষের খবর আসার পর সংগঠনের ‘বিদ্রোহী’ নেতাকর্মীরা বেশ চাঙ্গা হয়েছেন।

এর মধ্যেও গত মঙ্গলবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মধুর ক্যান্টিনে ছাত্রলীগের দুইজন সহ সভাপতির মধ্যে মারামারি হয়। তারা দুজন হলেন, শাহরিয়ার কবির বিদ্যুৎ এবং তৌহিদুল ইসলাম চৌধুরী জহির। বিদ্যুৎ ১৭ জন ‘বিতর্কিত’দের একজন।

পদগুলো কখন পূরণ করা হবে জানতে চাইলে ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক গোলাম রাব্বানী ঢাকা টাইমসকে বলেন, ‘সবকিছু রেডি আছে। আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে বাদ দেওয়া ১৯ জনের নাম প্রকাশ এবং উক্ত পদে নতুন কাউকে অন্তর্ভুক্ত করা হবে।’

সংগঠনের সহ সভাপতি আল নাহিয়ান খান জয়  বলেন, ‘গত মাসের আগস্টেই পদগুলো পূরণ করার কথা ছিল। তবে এখন একটু সময় খারাপ যাচ্ছে। এই সমস্যা ঠিক হয়ে গেলে এক সপ্তাহের মধ্যেই নাম প্রকাশ করা হবে।’

‘বিতর্কিতদের নাম প্রকাশ করা হবে কি না বলতে পারি না। তবে শূন্য পদগুলো পূরণ করে পদপ্রাপ্তদের নাম প্রকাশ করা হবে ।’

গত কমিটির সমাজসেবা সম্পাদক রানা হামিদ  বলেন, ‘বিতর্কিতদের নিয়ে ছাত্রলীগ সভাপতি সাধারণ সম্পাদক আমাদের সঙ্গে এমনকি আপার (শেখ হাসিনা) সঙ্গেও প্রহসন করেছে। আপা বারবার বলার পরেও তারা নাম প্রকাশ করেনি।’

‘ছাত্রলীগ সভাপতি, সাধারণ সম্পাদক দুই কূলই রক্ষা করেছে। আমরা নাম প্রকাশ করলাম না, আবার ১৯ জনকে বহিষ্কারও করলাম, বিতর্কিতদেরও আমাদের দলে রাখলাম। আর যারা বিতর্কমুক্ত ছাত্রলীগ চাইছে তাদেরকেও শান্ত করলাম।’

বিতর্কিতদের বাদ না দেওয়া পর্যন্ত ‘লড়াই’ চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণার কথা তুলে ধরে রানা হামিদ বলেন, ‘বিতর্কিত এবং তাদের কর্মকাণ্ডের ব্যাপারে আপা ক্ষুব্ধ। সুতরাং এটা প্রমাণ করে, আমরা ভুল পথে ছিলাম না। সভাপতি, সাধারণ সম্পাদকই ভুল পথে।’

সাবেক উপদপ্তর সম্পাদক নকিবুল ইসলাম সুমন বলেন, ‘সেপ্টেম্বরের মধ্যে পদ পূরণ করা না হলে আমরা আন্দোলনে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছিলাম। তবে এখন আমরা পর্যবেক্ষণ করছি। এখন আপা (শেখ হাসিনা) বিভিন্ন মাধ্যমে সবকিছু জানতে পেরেছেন। এতদিন তার সামনে ব্যারিয়ার (বাধা) দিয়ে রাখা হয়েছিল। আর এটা করেছেন আওয়ামী লীগেরই কয়েকজন নেতা। আপা যেহেতু সবকিছু জানতে পারছেন, এখন আমরা আপার সিদ্ধান্তের ওপর নির্ভর করছি। আশা করি, অতি দ্রুতই এটি পূরণ করা হবে।’

প্রকাশ :সেপ্টেম্বর ১২, ২০১৯ ১:২২ অপরাহ্ণ