তুরস্কভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আনাদোলু এজেন্সি জানিয়েছে, সুইজারল্যান্ডের জেনেভায় জাতিসংঘের মানবাধিকার কাউন্সিলে পাকিস্তানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী শাহ মেহমুদ কোরেশি অভিযোগ করার পর এই বিবৃতি দেয় দেশগুলো।
টুইটে পাকিস্তানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, কাশ্মির ইস্যুতে জাতিসংঘের মানবাধিকার কাউন্সিলে পাকিস্তান আজ ৫০টিরও বেশি দেশের পক্ষে ঐতিহাসিক যৌথ বিবৃতি দিয়েছে।
এ ঘটনাকে জাতিসংঘ মানবাধিকার কাউন্সিলে পাকিস্তানের সবচেয়ে বড় সাফল্য হিসেবে আখ্যায়িত করেন শাহ মেহমুদ কুরেশি। তিনি বলেন, যৌথ বিবৃতিতে ভারত নিয়ন্ত্রিত জম্মু-কাশ্মিরে মানবাধিকার লঙ্ঘন বন্ধে ভারতে প্রতি আহ্বান জানিয়েছে জাতিসংঘ এবং ওআইসি-র অর্ধশতাধিক রাষ্ট্র।
২০১৯ সালের ৫ আগস্ট ভারতীয় সংবিধানের ৩৭০ অনুচ্ছেদ বাতিলের মধ্য দিয়ে কাশ্মিরের স্বায়ত্তশাসনের অধিকার ও বিশেষ মর্যাদা কেড়ে নেয় বিজেপি নেতৃত্বাধীন দেশটির কেন্দ্রীয় সরকার। লাদাখ ও কাশ্মিরকে দুটি পৃথক কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলে পরিণত করতে পার্লামেন্টে বিল পাস হয়। এই পদক্ষেপকে কেন্দ্র করে কাশ্মিরজুড়ে মোতায়েন করা হয়েছে বিপুলসংখ্যক অতিরিক্ত সেনা। জারি করা হয়েছিল বিধিনিষেধ। গ্রেফতার করা হয়েছে সেখানকার শত শত নেতাকর্মীকে। সেখানে উন্নয়নের জন্য এ পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে এবং এটা দেশটির ‘সম্পূর্ণ অভ্যন্তরীণ বিষয়’ ভারতের পক্ষ থেকে এমন দাবি করা হলেও পাকিস্তান বলছে, সেখানে কাশ্মিরিদের মানবাধিকার লঙ্ঘিত হচ্ছে। দিল্লির ওই পদক্ষেপের পর এর প্রতিবাদে জাতিসংঘে বৈঠকের আবেদন করেছিল পাকিস্তান। কিন্তু এতে কাজ না হওয়ায় দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী শাহ মেহমুদ কোরেশি চিঠি দেন নিরাপত্তা পরিষদে। পরে চীন নিরাপত্তা পরিষদের বৈঠকের জন্য আহ্বান জানালে তা অনুষ্ঠিত হয়। তবে সেখানে আনুষ্ঠানিক বিবৃতি অস্বীকৃতি জানায় পরিষদের সদস্য রাষ্ট্রগুলো। পরে তারা জাতিসংঘের মানবাধিকার কাউন্সিলে মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ জানায়।
জাতিসংঘের ওই দেশগুলো যৌথ বিবৃতিতে জানিয়েছে, ‘ভারত শাসিত কাশ্মিরে মানবাধিকার ও মানবিক পরিস্থিতির অবনতি হচ্ছে, বিশেষত ২০১৯ সালের ৫ আগস্টে পদক্ষেপগুলো নেওয়ার পর থেকে। এখন সেখানে মানবাধিকার কাউন্সিল ও অন্যান্য মানবাধিকার সংস্থার জরুরি মনোযোগ দেওয়া প্রয়োজন।’
বিবৃতিতে আরও বলা হয়, ‘জাতিসংঘ সনদ, নিরাপত্তা কাউন্সিলের রেজুলেশন, মানবাধিকারের মান এবং আন্তর্জাতিক আইনের সঙ্গে একমত হয়ে ভারত শাসিত জম্মু-কাশ্মিরের মানুষের মৌলিক মানবাধিকার ও তাদের সম্মান রক্ষায় আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের আহ্বান থাকা উচিত। বিশেষত তাদের জীবন, স্বাধীনতা ও নিরাপত্তা অধিকারের বিষয়ে।’
বিবৃতি দেওয়া দেশগুলো কাশ্মিরে যোগাযোগের ওপর বিধিনিষেধ ও কারফিউ তাৎক্ষণিকভাবে প্রত্যাহার এবং রাজনৈতিক নেতাদের মুক্তির দাবি জানিয়েছে। পাশাপাশি সেখানে অতিরিক্ত বলপ্রয়োগ ও বন্দুকের ব্যবহার বন্ধ এবং আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যম ও মানবাধিকার সংস্থাগুলোর বাধাহীন প্রবেশাধিকারের দাবি জানানো হয়েছে।
বিবৃতিতে বলা হয়, ‘আমরা জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের প্রস্তাবানা বাস্তবায়নের মাধ্যমে জম্মু-কাশ্মির সংকটের শান্তিপূর্ণ সমাধানের প্রতি সমর্থন ব্যক্ত করছি।’ সূত্র: আনাদোলু এজেন্সি, দ্য নিউজ।