নড়াইল সংবাদদাতা:
নড়াইলের লোহাগড়া বাজার সংলগ্ন ব্যাক্তি মালিকানাধীন একটি পুকুর স্থানীয় প্রশাসন কর্তৃক ইজারা দেয়া নিয়ে নানা জটিলতা সৃষ্টির পর অবশেষে বৃহস্পতিবার(৮ জুন) ওই পুকুরে ১৪৪ ধারা জারি করেছে আদালত। জয়পুর গ্রামের বাসিন্দা মোঃ মননু মোল্যার আবেদনের প্রেক্ষিতে নড়াইল বিজ্ঞ অতিরিক্ত ম্যাজিস্ট্রেট আদালত ১৪৪ ধারা জারি করেন। মামলা নং- এমপি-১৬৬/১৭। স্বারক নং-২৬৫ তাং ০৮/৬/১৭।
আদালত লোহাগড়া থানার ওসিকে পুকুরের ব্যাপারে আইন শৃংখলা বজায় রাখা ও জয়পুর ইউনিয়ন ভ’মি কর্মকর্তাকে দখল সংক্রান্ত প্রতিবেদন সরেজমিন তদন্তপূর্বক পেশ করতে নির্দেশ দিয়েছেন। মৃত ইসমাইল মোল্যার ছেলে মোঃ শরিফুল আলম, জয়পুর গ্রামের মৃত রউফ সরদারের ছেলে খোকন সরদার, মৃত নগেন বিশ্বাসের ছেলে সুবল বিশ্বাস ও কুন্দসী গ্রামের মৃত ফকির আলী বিশ্বাসের ছেলে তাপস বিশ্বাস কে মামলায় বিবাদি/আসামী করা হয়েছে।
অভিযোগে জানা গেছে, জয়পুর গ্রামের আঃ আজিজ মোল্যার ছেলে মোঃ মননু মোল্যা ৭/৮ বছর যাবৎ ৬৭ নং জংপুর মৌজার, এসএ ৮০৮, ডিপি খতিয়ান-৭৭, সেঃ মেঃ দাগ নং ৩৪৪৪ হাল দাগ ৩৯১৩ জমি ২২ শতক, ৩৪৪৪ হাল দাগ ৩৯২৫ জমি ৫২ শতক, ৩৫৩৭ হাল দাগ ৩৯০৪ জমি ৭০ শতক, এবং ৩৪৪৭ /৩৫৩৭ হাল দাগ ৩৯২৬ জমি ১৫ শতকসহ ক্রয়সূত্রে ও মৌখিক চুক্তিতে লিজ নেয়া মোট ১৬৯ শতক জমির ওপর থাকা পুকুর ভোগদখলসহ মৎস্য চাষ করে আসছেন। কিন্তু গত ৬ জুন শরিফুল আলম ও তার সহযোগিরা ওই পুকুরে জোর করে প্রবেশ করে মাছ ধরা শুরু করলে অভিযোগকারি মননু মোল্যাসহ তার পক্ষীয়রা বাধা প্রদান করলে শরিফুল আলম ও তার সহযোগিরা চলে যায় এবং হুমকি দেয় যে,পরবর্তীতে তারা বেশি লোকজন জড়ো করে আবারো মাছ ধরবে এবং পুকুরের চারিপাশে বাশের বেড়া দিয়ে পুকুরপাড় ড্রেসিং করবে। তাদের কাজে বাধা দিলে মারপিটসহ মননু মোল্যা ও তার সহযোগিদের মিথ্যা মামলা দিয়ে হয়রানি করবে।
খোঁজখবর নিয়ে জানা গেছে, লোহাগড়া বাজার ও জয়পুর মাদ্রাসা সংলগ্ন প্রায় ৬ একরের পুকুরটি উপজেলা প্রশাসন (বাংলা ১৪২৪ সাল থেকে ১৪২৬ সাল পর্যন্ত) তিন বছরের জন্য মরিচপাশা মধুমতি যুব উন্নয়ন মৎস্য খামার সমবায় সমিতি লিঃ এর নামে ইজারা দেয়। ইজারা দেবার পর সম্প্রতি উপজেলা প্রশাসন পুকুরে লাল নিশান টানানোর মধ্যদিয়ে ইজারাপ্রাপ্তদের ওই পুকুরের দখল বুঝিয়ে দেয়। দখল বুঝে নেবার পর থেকে কয়েক দফায় মরিচপাশা মধুমতি যুব উন্নয়ন মৎস্য খামার সমবায় সমিতি লিঃ এর পরিচালকরা ওই পুকুর থেকে মাছ ধরে বিক্রি করছে। অভিযোগ রয়েছে, সদ্য ইজারা প্রাপ্তদের পূর্বের ইজারাদারের প্রায় ৭ লাখ টাকার মাছ পুকুরে থাকা অবস্থায় প্রশাসন পূর্বের ইজারাদারদের না জানিয়ে নতুন লোকদের পুকুর ইজারা দিয়েছে। ফলে ক্ষতিগ্রস্থ হয়ে পড়েছেন জয়পুর গ্রামের মৎস্য চাষী মননু মোল্যা এবং স্থানীয় আকরাম হোসেন ভুইয়া। লোহাগড়া পোদ্দারপাড়া গ্রামের মৃত আজিজার রহমান ভুইয়ার ছেলে আকরাম হোসেন ভুইয়া জানান, বাজার ও মাদ্রাসা সংলগ্ন ৫একর ৮ শতক জমিতে পুকুর অবস্থিত। পুকুরপাড় সংলগ্ন উপরের অংশে সরকারি খাস জমি থাকলেও সরকার বেআইনীভাবে সম্পূর্ণ পুকুরটি খাস দাবি করে ইজারা দিয়েছে। পুকুরটি ইজারা দেবার সাথে সাথেই বর্তমান ইজারাদার ওই পুকুর থেকে পূর্ববর্তী ইজারাদারের চাষ করা মাছ ধরছে এবং বিক্রি করেছে। এমনকি বর্তমান ইজারাদার পুকুরপাড়ে অবৈধভাবে বাঁধ/বেড়া নির্মাণ করে দোকানঘর উঠানোর চেষ্টা চালাচ্ছে বলেও অভিযোগ রয়েছে।
পুকুরটির ইজারা প্রদান কার্যক্রম স্থগিত রাখতে জমির অপর মালিক আকরাম হোসেনের আবেদনের প্রেক্ষিতে রেভিনিউ ডেপুটি কালেক্টর অফিস থেকে গত ১৩ এপ্রিল ৩৭৬ নং স্মারকের নির্দেশনা মোতাবেক লোহাগড়া উপজেলা নির্বাহী অফিসারের কার্যালয় থেকে ১৪ মে ৩৬৩ নং স্মারকে রেভিনিউ ডেপুটি কালেক্টর অফিসে প্রতিবেদন প্রেরণ করা হয়। প্রতিবেদনে সংশ্লিষ্ট খাস পুকুরের ইজারা কার্যক্রম সম্পর্কে বলা হয়েছে। কিন্তু বিষয়টি নিস্পত্তি করতে সংশ্লিষ্ট খাস পুকুরটির পূর্ববর্তী মালিকানা ও দেওয়ানি মামলা সংক্রান্ত তথ্যাদি প্রয়োজন। জমির মালিকানা, হস্তান্তরের তথ্যাদি,দেওয়ানি মামলা সংক্রান্ত পূর্ণাঙ্গ তথ্যাদিনহ পুনরায় প্রতিবেদন প্রেরণের জন্য গত ৩১ মে নড়াইলের রেভিনিউ ডেপুটি কালেক্টর এ,এফ,এম, আবু সুফিয়ান লোহাগড়া উপজেলা নির্বাহী অফিসার কে ৬৩৫ সং স্বারকে পত্র দেন। লোহাগড়া উপজেলা নির্বাহী অফিসারের অফিস সহকারি মোঃ শরীফুল ইসলাম পত্র প্রাপ্তির কথা স্বীকার করেছেন। অভিযুক্ত শরিফুল আলম এর সাথে যোগাযোগের চেষ্টা করে পাওয়া যায়নি। লোহাগড়া থানা পুলিশ ওই পুকুরে ১৪৪ ধারা জারী সংক্রান্ত আদালতের চিঠি হাতে পেয়েছে বলে জানায়।
দৈনিক দেশজনতা /এমএম