বরগুনা প্রতিনিধি: দীর্ঘ দেড়মাসেরও বেশি কারাভোগের পর মঙ্গলবার বিকেলে কারামুক্ত হয়ে বাড়ি ফেরেন আয়েশা সিদ্দিকা মিন্নি। বাবার জিম্মায় তাকে বাড়িতে নিয়ে যাওয়া হয়।
আদালত চত্বর থেকে শুরু করে মিন্নির বাড়িতে ছিল স্বজন প্রতিবেশীসহ উৎসুক সাধারণ মানুষ ভিড়।
২৯ আগস্ট জামিন মঞ্জুর করে হাইকোর্ট। এর ৫দিন পর কারাগার থেকে মুক্ত হন মিন্নি। বিকেল সাড়ে চারটায় মিন্নিকে কারাগার থেকে মুক্তি দেয়া হয়। এসময় বাবা মোজাম্মেল হোসেন কিশোরসহ স্বজনরা ও মিন্নির আইনজীবী উপস্থিত ছিলেন।
মঙ্গলবার দুপুরে মিন্নির জামিন মঞ্জুরের আদেশ বরগুনা জ্যেষ্ঠ বিচারিক আদালতে পৌঁছায়। এরপর মিন্নির পক্ষে মিসকেস দাখিল করেন আইনজীবী মাহবুবুল বারি আসলাম। পরে বিকেল সাড়ে তিনটায় আদালতের বিচারক মোহাম্মদ সিরাজুল ইসলাম গাজী মিন্নির বাবার জিম্মায় মিন্নির বেলবন্ড আদেশ দেন। চারটা নাগাদ রিলিজ অর্ডার কারা কর্তৃপক্ষের কাছে পৌঁছায় । কারাগারের প্রক্রিয়া শেষে বিকেল সাড়ে চারটায় মিন্নি কারাগাার থেকে বের হন। জেলগেটে থাকা একটি অ্যাম্বুলেন্সে মিন্নিকে বাড়িতে নিয়ে আসা হয়।
বিকেল পাঁচটার দিকে মিন্নিকে বহনকারী গাড়ি বাড়ির দরজায় পৌঁছুলে রাস্তার দু’পাশে ছিল স্বজন ও প্রতিবেশীদের উপচে পড়া ভিড়। বাড়িতে প্রবেশ করে মিন্নি প্রথমে মায়ের সাথে দেখা করেন। মা-মেয়ে পরস্পরকে জড়িয়ে ধরে আবেগাপ্লুত হয়ে পড়েন কিছুক্ষণ। পরে স্বজনদের সাথে কুশল বিনিময় করেন।
জামিনের শর্তে গণমাধ্যমের সাথে কথা বলতে নিষেধ থাকায় তিনি গণমাধ্যমের সাথে কোনো কথা বলেননি। একমাত্র মা ছাড়া আর কারো সাথেই কোনো কথা বলেননি।
মিন্নির আগমন উপলক্ষে বাড়িতে ছিল সাজ সাজ রব। মিন্নির বাড়িতে ছিল প্রতিবেশী ও স্বজনদের ভিড়। উৎসুক সাধারণ মানুষদেরও দলে দলে মিন্নিদের বাড়িতে প্রবেশ করতে দেখা যায়। মিন্নির কারামুক্তি উপলক্ষে আগন্তুকদের মিষ্টি বিতরণ করা হয়।
এই বাড়িটি গত দেড়মাস ধরে সুনসান নিরব ছিল। মিন্নি গ্রেপ্তারের পর শুধু মাঝে মাঝে মা-বাবার আহাজারি ছাড়া আর কোনো কোলাহল ছিলনা।
মিন্নির কারামুক্তিকে যারপরনাই খুশী মা-বাবা, আত্মীয় স্বজনসহ প্রতিবেশীরা। তাদের দাবি অন্যায়ভাবে মিন্নিকে রিফাত শরীফ হত্যা মামলায় ফাঁসানো হয়েছে। জামিনে সন্তোষ প্রকাশ করে স্বজনদের অনেকে বলেন, মিন্নিকে অন্যায়ভাবে স্বাক্ষী থেকে আসামি করা হয়েছে। জামিনে মুক্ত হওয়ার মধ্য দিয়ে আমরা ন্যায় বিচার পেয়েছি।
মেয়েকে কারামুক্ত হওয়ায় আবেগাপ্লুত হয়ে পড়েন মিন্নির বাবা মোজাম্মেল হোসেন কিশোর। তিনি বলেন, ‘আমরা প্রাথমিকভাবে ন্যায়বিচার পেয়েছি। আমার বাড়িটা অন্ধকারাচ্ছন্ন ছিল এতদিন। আজ মনে হয় আমার বাড়ি আবার আলোকিত হয়েছে। আমার মেয়েকে অন্যায়ভাবে অভিযোগপত্রে আসামি করা হয়েছে। মিন্নি যাতে মামলা থেকে অব্যহতি পায় সে জন্য আমি ন্যায়বিচার প্রার্থণা করছি। আমার মেয়ের প্রতি যে অন্যায় অবিচার করা হয়েছে এতদিন, আবারো মামলায় আসামি করার মধ্য দিয়ে সে প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। আইনি লড়াইয়ের মধ্য দিয়ে মিন্নি আজ কারাগার থেকে মুক্তি পেয়েছে।’
সন্তোষ প্রকাশ করেন মিন্নির পক্ষের আইনজীবীও। মিন্নির পক্ষের আইনজীবী মাহবুবুল বারি আসলাম বলেন, ‘দীর্ঘ আইনি লড়াইয়ের মধ্য দিয়ে আজ মিন্নি কারামুক্ত হয়েছে। আমরা আশা করি পরবর্তি বিচারেও ন্যায়বিচার পাবো।’
গত ২৬ জুন রিফাত শরীফ হত্যাকান্ডের পর নাটকীয়ভাবে মামলার প্রধান সাক্ষী আয়েশা সিদ্দিকা মিন্নিকে ১৬ জুলাই আসামি সনাক্তের নামে বরগুনার নয়কাটা মাইঠা এলাকা থেকে পুলিশ লাইন্সে ডেকে রাতে তাকে গ্রেপ্তার দেখায় পুলিশ। রিফাত শরীফ হত্যা মামলার চার্জশিটে মিন্নিকে ৭ নং আসামি করা হয়েছে। এতে মিন্নির বিরুদ্ধে রিফাত শরীফ হত্যায় ষড়যন্ত্রের অভিযোগ আনা হয়েছে।