২৪শে নভেম্বর, ২০২৪ ইং | ৯ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ | সকাল ৮:১৩

ডেঙ্গু রোগীর মৃত্যুর খবর দিচ্ছে ঢামেক পুলিশ ফাঁড়ি, হাসপাতাল নিশ্চুপ

দেশজনতা অনলাইন : ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে গত শুক্রবার (৩০ আগস্ট) সকালে ডেঙ্গু আক্রান্ত মুন্নী বেগম (৫২) মারা যান। তার মৃত্যুর খবর নিশ্চিত করেন হাসপাতালের ক্যাম্প পুলিশ ইনচার্জ মো. বাচ্চু মিয়া। মুন্নী বেগমের ছেলে মো. ইমরান হোসেন জানান, বেশ কিছুদিন ধরে ডেঙ্গু জ্বরে ভুগছিলেন তার মা।
এর আগে গত ২৬ আগস্ট ডেঙ্গু আক্রান্ত হেনা বেগমের (৪৫) মৃত্যু হয় এই হাসপাতালে। এক্ষেত্রেও ঢামেক হাসপাতালের পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ এর সত্যতা নিশ্চিত করেন। পাশাপাশি হেনার ভাই সুমন জানান, পরীক্ষায় তার বোনের ডেঙ্গু ধরা পড়েছিল।
এসব মৃত্যুর খবর ঢামেক হাসপাতাল কর্তৃপক্ষেরই নিশ্চিত করার কথা। অথচ গণমাধ্যমকর্মীদের জানতে হচ্ছে তা মর্গের অফিস থেকে অথবা পুলিশ ফাঁড়ি কিংবা আত্মীয়স্বজনের সঙ্গে কথা বলে।
ঢামেক হাসপাতালের একাধিক কর্মকর্তা  বলেন, গত ৭ আগস্ট ডেঙ্গুতে মৃত্যুর বিষয়ে একটি ‘ডেথ রিভিউ কমিটি’ করা হয়। এরপর থেকে হাসপাতালে ডেঙ্গু আক্রান্ত মৃত্যুর ঘটনা বলা হচ্ছে না। এর আগে এ ধরনের মৃত্যুর বিষয়টি দায়িত্বরত চিকিৎসকই ‘ডিক্লেয়ার’ করতেন।
ডেথ রিভিউ কমিটি গঠনের দিন হাসপাতাল পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এ কে এম নাসির উদ্দিন বলেছিলেন, ‘রোগী জ্বরে আক্রান্ত হলেই বলা হচ্ছে ডেঙ্গু। আমরা দেখছি, জ্বরে আক্রান্ত হয়ে ভর্তি হওয়ার পর কোনও কোনও রোগী মারা যাচ্ছেন। আসলে তারা ডেঙ্গুতেই মারা গেছেন তা নিশ্চিত হওয়া যায় না। এ জন্য পরীক্ষা-নিরীক্ষা প্রয়োজন।’
তিনি বলেন, “একজন বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত ছিলেন, পরে তার জ্বরও হয়। সেক্ষেত্রে রোগী মারা গেলে রোগীর স্বজনরা বলছেন, ডেঙ্গু জ্বরে মারা গেছেন। আসলে এ ধরনের রোগীর ক্ষেত্রে দেখা যায়, ওই রোগী আগে থেকে খারাপ অবস্থায় ছিলেন।’ তাই হাসপাতালের পক্ষ থেকে এ ধরনের রোগীদের মৃত্যুর প্রকৃত কারণ নির্ণয়ে ‘ডেথ রিভিউ কমিটি’ করা হয়েছে বলে জানান তিনি। এছাড়া কী কী কারণে রোগীর মৃত্যু হয়েছে তা নির্ণয় করবে রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউট (আইইডিসিআর)।
সেদিন পর্যন্ত ডেঙ্গুতে মৃত্যুর সংখ্যা ১৮ বলে জানিয়েছেন হাসপাতালের সহকারী পরিচালক (প্রশাসন) ডা. নাছির উদ্দীন। তবে তিনি বলেছিলেন, সবাই যে ডেঙ্গুতে মারা গেছেন এটা আরও নিশ্চিত হতে হবে।
এদিকে, আইইডিসিআর শনিবার (৩১ আগস্ট) জানায়, ঢামেক হাসপাতালে এ পর্যন্ত ৩ জনের মৃত্যু হয়েছে। হাসপাতালের ২৩টি মৃত্যুর ঘটনা পর্যালোচনার জন্য পাঠানো হয় তাদের কাছে। এর মধ্যে ৮টি পর্যালোচনা করে ৩টির মৃত্যু ডেঙ্গুতে বলে নিশ্চিত হওয়া গেছে।
গত ২৫ আগস্ট ঢামেক হাসপাতালে অনুষ্ঠিত ‘ডেঙ্গু চেঞ্জিং ট্রেন্ডস অ্যান্ড ম্যানেজমেন্ট আপডেট’ শীর্ষক এক বৈজ্ঞানিক সেমিনারে হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল নাসির উদ্দিন বলেন, তার হাসপাতালে সেদিন পর্যন্ত ডেঙ্গুতে মারা গেছেন ৪ জন।
জানতে চাইলে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের মেডিসিন বিভাগের নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক চিকিৎসক বলেন, তার ওয়ার্ডেই মারা গেছেন ৪ জন। মৃত্যুর পুরো হিসাব বলতে মেডিসিন বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ডা. মুজিবুর রহমান বলতে পারবেন বলে জানান তিনি।
ডা. মুজিবুরের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, মৃত্যুর সঠিক হিসাব তার কাছে নেই। মোট হিসাব পাওয়া যাবে হাসপাতালের পরিচালকের কাছে।
হাসপাতালের সহকারী পরিচালক নাছির উদ্দিনও বলেন, ‘হিসাব পরিচালকের কাছে। আগে আসতো আমার কাছে। এখন আর ওই ফাইল উনি এদিকে দিচ্ছেন না। কারণ এগুলো এখন একমুখে বলা প্রয়োজন।’
এ বিষয়ে জানাতে হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল নাসির উদ্দিনকে একাধিকবার ফোন দেওয়া হলেও তিনি তা রিসিভ করেননি।
ঢামেক হাসপাতালে দায়িত্ব পালনকারী একাধিক গণমাধ্যমকর্মী  বলেন, ঈদের আগ পর্যন্ত ডেঙ্গু রোগীর মৃত্যুর বিষয়টি হাপসাতাল থেকে নিশ্চিত করা হতো। কিন্তু ডেথ রিভিউ কমিটি গঠন হওয়ার পর থেকে মৃতের সংখ্যা জানাচ্ছে না কর্তৃপক্ষ। যদিও প্রায় প্রতিদিনই কোনও না কোনও ডেঙ্গু রোগীর মৃত্যু হচ্ছে।
তারা জানান, সর্বশেষ তারা পুলিশ ফাঁড়ি ও মর্গ অফিস থেকে এ হাসপাতালে ডেঙ্গু আক্রান্ত ৩৩ জনের মৃত্যু কথা জানতে পেরেছেন।
প্রকাশ :আগস্ট ৩১, ২০১৯ ৬:২৭ অপরাহ্ণ