বরগুনা প্রতিনিধি : আয়েশা সিদ্দিকা মিন্নির জামিন বৃহস্পতিবার হলেও তিনি মঙ্গলবার নাগাদ কারাগার থেকে মুক্ত হতে পারবেন। বলেছেন মিন্নির পক্ষের আইনজীবী।
হাইকোর্ট শর্ত সাপেক্ষে বৃহস্পতিবার মিন্নির জামিন আবেদন মঞ্জুর করে মহামান্য হাইকোর্ট। এই খবরে আনন্দ জোয়ারে ভাসে মিন্নির স্বজনরা, স্বস্তির নিঃশ্বাসও ফেলে তারা। অন্যদিকে এ নিয়ে জনমনেও মিশ্র প্রতিক্রিয়া বিরাজ করছে।
নিহত রিফাত শরীফের পরিবার হতাশা ব্যক্ত করেছেন। রিফাতের মা ডেইজী বেগম কান্নাজড়িত কন্ঠে বলেন, ‘আদালতের উপরে আমাদের তো কোনো হাত নেই, তবে আমাদের আস্থা আছে, আমরা ন্যয় বিচার পাবো। বিচারের আমার ছেলেকে যারা হত্যা করেছে তাদের উপযুক্ত শাস্তি দাবি করছি।’
রিফাতের বোন ইসরাত জাহান মৌ বলেন. ‘মিন্নির কারণেই আমার ভাইকে হারাতে হয়েছে, সেই মিন্নিকেই জামিন দিয়েছেন আদালত, ব্যক্তিগতভাবে আমি খুবই হতাশ, তবে মহামান্য আদালতের উপর পূর্ণ আস্থা আছে, জামিন মানেই তো সে নির্দোষ নয়, আমি আমরা ন্যায় বিচার কামনা করি। আমার ভাইকে হত্যায় জড়িতদের কেউ যেন ছাড়া না পায়, আমার শুধু এতটুকুই দাবি।’
মিন্নির জামিনে মা জিনাত জাহান মিলি আদালতের প্রতি সন্তোষ প্রকাশ করে বলেন, ‘আমার মেয়ে রিফাত হত্যা মামলার একমাত্র প্রত্যক্ষদর্শী স্বাক্ষী। তাকে ষড়যন্ত্র করে মামলায় ফাঁসানো হয়েছে। তারপর যা ঘটেছে সবাই জানেন। স্বামীকে বাঁচাতে নিজের জীবন বিপন্ন করে আজ মামলার আসামি। যাই হোক, মহামান্য আদালতের প্রতি আমাদের আস্থা আছে, আমরা ন্যায় বিচার পাবো।’
মিন্নির চাচা আবু সালেহ বলেন, ‘আমরা কখনো হতাশ হইনি, কারণ আমাদের আইনের প্রতি শ্রদ্ধা রয়েছে।’
মিন্নিকে নিয়ে পুলিশের ভূমিকায় তিনি হতাশা ব্যক্ত করে বলেন, ‘পুলিশের কারণেই এখন মামলাটি ভিন্নখাতে প্রবাহিত। এখনো ন্যায় বিচার আছে, ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। মহামান্য হাইকোর্টের রায়ে আমরা আশা রাখি আমরা ন্যায় বিচার পাবো।’
এদিকে মিন্নির জামিনের খবরে সন্তোষ প্রকাশ করে বক্তব্য দিয়েছেন বরগুনার সচেতন মহল। সচেতন নাগরিকগণ মনে করছেন, এ রায় নারী বিদ্বেষী মনোভাবাপন্ন সমাজের জন্য একটি দৃষ্টান্ত।
বরগুনা জেলা সচেতন নাগরিক কমিটি সনাকের সহ-সভাপতি মনির হোসেন কামাল বলেন, ‘মিন্নি রাষ্ট্রের কাছে যে আইনগত সুবিধার দাবিদার, এটা তারই প্রতিফলন। আদালত আইন মোতাবেক মিন্নিকে জামিন দিয়েছে, যাতে ন্যায় বিচার বিঘ্নিত না হয় সে ব্যাপারেও সুষ্পষ্ট নির্দেশনাও দিয়েছেন।
বরগুনা জেলা পলিসি ফোরামের সভাপতি হাসানুর রহমান বলেন, ‘মিন্নিকে নিয়ে পুলিশ অতি উৎসাহী ছিল, ব্যক্তিগতভাবে তাকে আক্রমন করে একটা উদ্দেশ্য বাস্তবায়নের প্রক্রিয়া চলছিল। মহামান্য আদালত মিন্নিকে তার প্রাপ্য ন্যায় বিচার নিশ্চিত করেছেন। পুরুষ শাসিত সমাজে একজন নারীর বেলায় মিন্নির জামিনের রায় আইনের শাসন প্রতিষ্ঠার একটি উদাহরণ।’
মিন্নি কারাগারমুক্ত হতে যাচ্ছেন কবে নাগাদ জানতে চাইলে মিন্নির পক্ষের আইনজীবী মাহবুবুল বারি আসলাম বলেন, ‘দু’দিন সরকারি ছুটির পর রোববার উচ্চ আদালত থেকে জামিন মঞ্জুর সংক্রান্ত বিচারপতি মহোদয় স্বাক্ষরিত আদেশ বরগুনা আদালতে পাঠানো হবে। উচ্চ আদালত যে আদালতে বেলবন্ড দাখিল করতে বলবে ওই আদালতে মিন্নির পক্ষে ‘বিবিধ মামলা’ (মিসকেস) করতে হবে। মামলার পর কোর্ট মিন্নির জামানতনামা দাখিলের আদেশ দেয়ার পর জামানতনামা দাখিল করে মিন্নি কারাগার থেকে মুক্ত হবেন। এসব প্রক্রিয়া সম্পন্ন হতে মঙ্গলবার নাগাদ সময় লেগে যেতে পারে বলে জানান তিনি।